মো. ওসমান গনি, ইবি

  ২১ নভেম্বর, ২০২২

স্মরণীয় এক ম্যাচে দিগন্তের দুই টিম

মাহমুদ ভাইয়ের আহ্বানে সকালের চা পান করতে যাওয়া কাটাইখানা মোরে। চা আড্ডায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মজা হচ্ছিল। এরই মধ্যে আলামিন ভাই বলে উঠল আমাদের ফ্ল্যাট বনাম তাদের ফ্ল্যাট ক্রিকেট ম্যাচ হবে। আমিও সায় দিয়ে বললাম ‘ওকে আমরা খেলব’। যেই বলা সেই কাজ। মেসের সবার আলোচনার পর একমত হলো। অতঃপর প্রস্তুতি নিতে থাকলাম ট্রফি কিনলাম ও খেলার জন্য যাবতীয় সব কাজ সম্পাদন করলাম। এই খেলা নিয়ে বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিল উভয় দলের খেলোয়াড়রা। একদল আরেক দলের সঙ্গে বারবার লিপ্ত হচ্ছিল বাকযুদ্ধে। দুটি দলের নামকরণ করা হয় প্রেসিডেন্ট করিডোর ও সেক্রেটারি করিডোর। মূলত বাংলাদেশ জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়া, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখার সভাপতি মাহমুদুল্লাহ ভাই ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম ভাইয়ের বসবাস এই দুই ফ্ল্যাটে হওয়ায় এই নাম রাখা হয়েছিল।

খেলাকে কেন্দ্র করে উভয় দলের অভ্যন্তরে আলোচনার পর আলোচনা হচ্ছিল। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট করিডোরের খেলোয়াড়রা অনুশীলনেও নেমে গিয়েছিল। বেশ ভালো অনুশীলনে লেগে থাকে তারা। এছাড়াও সাজ্জাদ আবার কথায় খুব চালু। খেলা নিয়ে বারবার বাকযুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছিল আরিফ, মাহাদি ভাই ও সাব্বিরসহ প্রেসিডেন্ট করিডোরের বিভিন্ন খেলোয়াড়ের সঙ্গে। সর্বশেষ উভয় দলের খেলোয়াড় সিলেক্ট করা হলো। প্রেসিডেন্ট করিডোরের খেলোয়াড়রা হলো নাসিরুল ইসলাম আপেল (অধিনায়ক), আল আমিন হাওলাদার (সহ-অধিনায়ক), শাহপরান, মাহাদি গোপালী, সাব্বির, শিহাব, আরিফ, মাহাদী, মাহমুদুল এবং সেক্রেটারি করিডোরের খেলোয়াড়রা হলো আবদুল কাইয়ুম (অধিনায়ক), এস এম ওসমান গনি (সহ-অধিনায়ক), সাইদুল ইসলাম, ইমরুল কায়েস, সাজ্জাতুল্লাহ শেখ, আসাদুল্লাহ আল গালিব, আবদুল মালেক, আহসান হাবীব, এস এম শামীম।

৩ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) সকাল ৯টায় কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে খেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় ও ভেন্যু নির্ধারণ করা হয়। ২ নভেম্বর রাতে উভয় দলের অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়কসহ বিভিন্ন খেলোয়াড় নিয়ে প্রেস কনফারেন্স করা হয়। সাংবাদিক হিসেবে উপস্থিত থাকে আসাদুল্লাহ আল গালিব ও শামীম। প্রথমেই ট্রফি উন্মোচন করে উভয় দলের অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ক। এরপর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে খেলাবিষয়ক বিভিন্ন পরিকল্পনা, লক্ষ্য, মূল্যায়ন ইত্যাদি তুলে ধরেন তারা। প্রেস কনফারেন্স শেষে উভয় দল তাদের নিজ ফ্ল্যাটে চলে যায়। চলতে থাকে শেষ প্রস্তুতি ও ম্যাচ পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে গোপন মিটিং।

অতঃপর চলে আসল প্রতিক্ষিত সময়। সবাই সময়মতো চলে গেলাম মাঠে। অধিনায়ক নাসিরুল ইসলাম আপেল ভাই ও আবদুল কাইয়ুম ভাইয়ের মধ্যে টস অনুষ্ঠিত হয়। টসে জিতে আবদুল কাইয়ুম ভাই বোলিং নেন। কিছুক্ষণ ফটোশুটের পর সেক্রেটারি করিডোরের খেলোয়াড়রা অর্থাৎ আমরা নেমে গেলাম ফিল্ডিংয়ে। বিপক্ষ দল থেকে ওপেনিংয়ে আসে আরিফ ও নাসিরুল ইসলাম আপেল ভাই। আম্পায়ার হিসেবে রাখা হয় নিরপেক্ষ যোবায়ের ভাইকে। স্কোর কাটার জন্য রাখা হয় রোমান আলিকে। প্রথম ওভারে বোলিংয়ে আসে সাজ্জাত। বেশ ভালোই ভেলিভারি দিচ্ছিল সে। তবে আরিফ অভিজ্ঞ ব্যাটার হওয়ায় ভালোভাবেই খেলে যাচ্ছিল। প্রথমেই আপেল ভাই আহসান হাবীবের হাতে ক্যাচ উঠিয়ে দিয়ে ধরাশায়ী হয়ে ফিরে যান প্যাভিলিয়নে। বেশ সুন্দর একটি ক্যাচ ধরতে পেরেছিল আহসান। এর কিছুক্ষণ পরেই তৃতীয় ওভারে সাজ্জাতের বলে আ. মালেকের হাতে ক্যাচ উঠিয়ে দিয়ে ধরাশায়ী হয়ে আরিফ ফিরে যায় প্যাভিলিয়নে। ক্যাচ ধরার পর আ. মালেকের উল্লাসটা ছিল অন্য রকম। আমাদের টিমের সব প্লেয়ার ব্যতিক্রম এক এক্সপ্রেশন দেখায়। বিপক্ষ দলের সবচেয়ে বিজ্ঞ প্লেয়ার আরিফ হওয়ায় সবার পরিকল্পনা ছিল কীভাবে ওকে থামানো যায়। অতঃপর পর্যায়ক্রমে আলামিন ভাই ও মাহাদি ভাইও ধরাশায়ী হন। এরপরেই আসে সাব্বির ও শাহ পরান ভাই। বেশ বড় একটা পার্টনারশিপ গড়ে তুলেন এই দুজন। ১০ ওভারে টার্গেট দেয় ১২৫ রানের। শাহ পরান ভাই করেন ৪১ রান। আমাদের টিম থেকে ওপেনারে নামে সাইদুল ভাই ও গালিব। প্রথমেই আল আমিন ভাইয়ের বলে ধরাশায়ী হয়ে ফিরে আসে আল হাদিস বিভাগের মি. ডিপেন্ডেবলখ্যাত গালিব। এরপর যথাক্রমে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে আ. কাইয়ুম ভাই ও আ. মালেক। একা ম্যাচের হাল ধরে রেখেছিলেন সাইদুল ভাই। ৩২ রান করেন তিনি। আরিফের বলে তিনিও আউট হয়ে যান। এরপর ব্যাটে এসে ভরসার প্রতীক সাজ্জাতও ব্যর্থ হয়। আহসান একা ভালোই খেলে যাচ্ছিল। ২টি ছক্কা ও ২টি ফোর মেরে তুলে নেয় ২২ রান। এরপর আমিও ব্যর্থ হয়ে যাই। ৬০ বলে ১২৫ রানের টার্গেটে প্রথম দিকে ভালো খেললেও শেষ দিকে উইকেট হারিয়ে রানের গতি হারিয়ে ফেলি। অবশেষে অলআউট হয়ে পরাজয় বরণ করতে হয়। ৩৯ রানে জয়লাভ করে প্রেসিডেন্ট করিডোর। যোবায়ের ভাই ট্রফি তুলে দেন বিজয়ী দলের হাতে। ট্রফি নিয়ে বেশ উল্লাসে মেতে ওঠেন তারা। অতঃপর মাঠে ফটোশেসন সেরে সবাই ফিরে আসেন মেসে। আমাদের নিয়ে ট্রলে মেতে ওঠে বিজয়ী টিম। বিশেষ করে সাজ্জাতকে নিয়ে। কেননা খেলার আগে বেশ কথা বলেছিল সে। আপেল ভাই ট্রফি নিয়ে প্রত্যেকটা রুমে ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছিল। খেলাকে উপলক্ষ করে রাতে মুড়ি পার্টি হয়। বিজয়ী টিমের অর্থায়নে দেওয়া উচিত হলেও সাহসের অভাবে সক্ষম হয়নি। সবাই সম্মিলিতভাবে আয়োজন করে। বেশ তর্কযজ্ঞ চলে পার্টিতে। সর্বোপরি দিগন্ত মেসের অভ্যন্তরীণ এই ম্যাচটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে আমরণ। কারো জয় কারো পরাজয় হলেও বেশ উপভোগ ও উল্লাস করেছিল সবাই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close