ইসরাত জাহান

  ০৪ অক্টোবর, ২০২২

বাকৃবির চাঁদরাতের গল্প

একফালী সরু চাঁদের আলো যখন গগনপানে উঠতে থাকে তখন যেমন ঈঁদের আমেজে মেতে ওঠে সবাই; ঠিক একইভাবে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ও (বাকৃবি) মেতে ওঠে ভর্তি পরীক্ষার ঠিক আগের রাতে। সারি সারি স্টল, লোকসমাগম, আর আলোর ছটায় জ্যোছনা জেগে ওঠে বাকৃবির আকাশে। চাঁদরাতের মতোই উৎসব আনন্দের আবেশে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে বাকৃবির সর্বস্তরের সবাই। যেন বছরের এই দিনের জন্যই অপেক্ষা থাকে সবার। নবীন কিছু সদস্যকে বাকৃবির ছায়াতলে নিয়ে আসার এ উৎসব যেন সবার দীর্ঘ অপেক্ষার অর্জিত ফল।

পরীক্ষার আগের দিন থেকেই চলতে থাকে স্টলের কাজ। পর্দা দেওয়া, বাতি লাগানো, কার্ড, ককশিটের নকশা, বেলুন, হাতে বানানো কাগজের কারুকাজ এটা-সেটা আর কত কি! আল্পনার কারুকাজে সেজে ওঠে প্রতিটি অনুষদের আঙিনা। নিপুণ হাতে সাজিয়ে তোলা হয় দৈনিক হেঁটে চলার পথগুলো। বিশেষ করে জেলা সমিতির স্টলগুলোতে পাওয়া যায় তাদের নিজ নিজ জেলার ছাপ। নিজেদের জেলার সাথে সাদৃশ্য রেখে তারা স্টলকে সাজিয়ে তোলে। কোথাও একটু দেয়ালে টুকে রাখে নিজেদের আঞ্চলিক ভাষার কয়েকটা বাক্য। সাজিয়ে রাখে তাদের নিজ এলাকার কিছু খাবার।

সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথেই নানা রঙের বাতি জ্বলে ওঠে পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে। সারি সারি স্টলের ভিড়ে ঢাকা পড়ে যায় রাতের আঁধার। জমজমাট হয়ে ওঠে বাকৃবির প্রতিটি রাস্তা, প্রতিটি করিডোর। এই আলোর মেলায় সামিল হতে ছুটে চলে আসে সবাই। মেলা বসে শাড়ি পাঞ্জাবিতে সাজগোজের। গিটারের তার বেজে ওঠে নতুন সুরে। আলো-আধারের মিশকালো রূপের এই সুর মাতিয়ে রাখে নবীন-প্রবীণ সবাই। আবছা আলোর এই সুরের হাওয়ায় যেন বাকৃবির বৃক্ষসারিও দুলতে থাকে।

বেশ একটা খুশির আমেজ থাকে সবার চোখে মুখে। এ যেন বাকৃবির সবার এক উৎসবমুখর সাক্ষাৎকার। শিক্ষকরাও বের হয়ে পড়েন স্টল পরিদর্শনে। তাদের আপ্যায়নেও রাখা হয় বিশেষ ব্যবস্থা। ছাত্র-শিক্ষকের আনন্দণ্ডসাক্ষাতের এ এক সুবর্ণ সুযোগ।

আগত নবীন পরীক্ষার্থীরা এক পলকেই মুগ্ধ হয়ে যায় ক্যাম্পাসের এ রাতের মায়ায়। এত আলো, এত খুশি তাদের কাছে যেন এই প্রথম। বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখতেই সার্বিক সহযোগিতায় তারা পাশে পায় বড় ভাই-আপুদের। তাদের সাহায্য করার জন্যই তো এত আয়োজনে এই স্টল সাজিয়ে বসে থাকা। নবীনদের বিশ্রামের জায়গা ঠিক করা থেকে শুরু করে তাদের সব সমস্যা সমাধানের জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে বাকৃবির সবাই। কোথাও যেন আতিথেয়তায় এতটুকু ফাঁক না থেকে যায় সেই চেষ্টাই থাকে সবার।

রাত বাড়তে থাকে, বাড়তে থেকে আড্ডা। সেই সাথে ক্লান্তিও বাড়তে থাকে। কিন্তু সেই ক্লান্তি এক নিমিষেই দূর হয়ে যায় নবীনদের মুখে বিশ্বাসের হাসি দেখে। তাদের দুশ্চিন্তা একটুখানি কমিয়ে দেওয়ার তাগিদে হাজারো ক্লান্তি উপেক্ষা করে বাকৃবির সব ছাত্র-ছাত্রী। উৎসব আনন্দে মেতে উঠলেও দায়িত্ব পালনে ত্রুটি নেই তাদের এতটুকুও। নিজের সহোদরের মতোই তারা আপ্যায়ন করে পরীক্ষার্থীদেরকে। দূর-দূরান্ত থেকে আগতদের দুশ্চিন্তা মুক্ত করে তবেই তাদের স্বস্তির নিঃশ্বাস।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close