reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৩ অক্টোবর, ২০২২

শারদীয় উৎসব হোক সম্প্রীতির সেতুবন্ধ

বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হলেও এ দেশে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের বসবাস। অসাম্প্রদায়িক দেশটিতে তবু চোখে পড়ে ভিন্নধর্মীদের প্রতি নানা নির্যাতনের ঘটনা। এবারের শারদীয় উৎসবে সম্প্রীতির সেতুবন্ধ নিয়ে শিক্ষার্থীরা কী ভাবছেন তা তুলে ধরছি আমি পলাশ চন্দ্র রায়

ধর্ম যার যার, উৎসব সবার

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। এদেশে জাতি-ধর্মণ্ডবর্ণ-নির্বিশেষে সব মানুষের আবাসভূমি। ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ এই নীতিতে বিশ্বাসী বাঙালিরা আজও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ। দুর্গাপূজা হলো সার্বজনীন পূজা। পূজার ধর্মীয় অংশটুকু হয় হিন্দুদের, কিন্তু উৎসবে আনন্দ উপভোগ করে সবাই। এই সময় গোটা বাংলাদেশ আনন্দে মেতে উঠে। সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হয় পূজা মণ্ডপে, সেখানে আনন্দ ভাগাভাগি করা হয়। শারদীয় দুর্গাপূজা সমাজকে সব ধরনের হিংসা, বিদ্বেষ, অসহিষ্ণুতা ও অশুভ শক্তির প্রভাব থেকে মুক্ত রাখে উদ্বুদ্ধ করে ভ্রাতৃত্ব বোধ ও সম্প্রীতি চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হতে। সবার উপস্থিতিতে শারদীয় দুর্গাপূজা পরিণত হয় সর্বজনীন উৎসবে, পরিণত হয় সর্বস্তরের মানুষের মিলন-মেলায়।

সুস্মিতা সরকার বৃষ্টি

পশুপালন অনুষদ

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণেই উৎসব পূর্ণতা পায়

শরতে নদীর ধারে কাশবন, পথে ঝরে পরা শুভ্র শিউলি যেন বার বার মনে করিয়ে দেয় মা আসছে; আর ক’টা দিন। বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় শারদীয় দুর্গোৎসব যেন জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বাড়িয়ে দেয়। বাঙালি উৎসব প্রিয়, বাঙালি নিজেদের খুশি একে অপরের সাথে ভাগ করে নিতে জানে। উৎসব তখনই পূর্ণতা পায় যখন সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়। এই ঐক্য ও আনন্দের মেলা বাড়িয়ে দেয় ভ্রাতৃত্ববোধ, সম্প্রীতি ও মানবতা। বাঙালির প্রতিটি ধর্মীয় উৎসব যেন একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়িয়ে দেয়। সেই সাথে দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর ঐক্যের বন্ধন তৈরি করে সেই কামনা করি। এই বন্ধনই রুখে দিবে ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতা। বাড়িয়ে দেয় সাহস একে অন্যের পাশে দাঁড়াবার। যখন সমাজ জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্য গড়ে তোলে তখন কোনো অপশক্তি ও ভ্রান্ত ধারণা টিকে থাকতে পারে না। বাঙালি বাঙালিকে আগলে রাখুক; হিংসা-দ্বেষ জল হয়ে যাক। সব ধর্মের লোক মিলেমিশে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলুন।

ঋতুপর্ণা রায়

মার্কেটিং বিভাগ

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

এক প্লেটে সম্প্রীতির চার চামচ

একটা সময় ছিল যে সময়টায় মাথায় কোনো ভাবনা ছিল না, ছিল শুধু স্বাধীনতা আর উপভোগ করার শক্তি। ছিল না কোনো ধর্ম বা গোত্রের ভেদাভেদ। পুজোয় পাওয়া ১০ টাকা দিয়ে একপ্লেট চটপটি খাওয়া ছেলেটার সাথে যেখানে আর ৪টি চামুচ অনায়াসে অংশ নিত। সেখানে ধর্মের জাত পাতে জায়গা নেয়নি। পুজোয় মূর্তি দেখতে বের হওয়া থেকে বিসর্জন, বিজয়া দশমির প্রণাম সব কিছুতেই একটা প্রাণ ছিল, যেখানে জাতপাত ছিল না। একপাশে মন্দিরে শঙ্খ ধ্বনি আর ঢাকের আওয়াজ চলছে অন্যপাশে মসজিদে আজানের শব্দ। সে সময় ঢাকের শব্দটা কমিয়ে, আজনকেই শুনতে দেওয়া হয়। পূজোর নাচে ১০ জন বন্ধুর ৬ জনই অন্যধর্মের হয়ে থাকে এটাই আমাদের সংস্কৃতি আর এটাই দৃষ্টান্ত। অন্য সংস্কৃতির ভিড়ে হারাতে শুরু করছে বাংলার এই চর্চা। আমি আবারও সেই সময়টাই যেতে চাই। ফিরতে চাই সেখানে, যেখানে ১০ টাকায় ধর্মের কট্টরতা থেকে বেরিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির কন্ঠে বলতে পারব আমরা বন্ধু, আমরা মানুষ, আমরা এ মাটির সন্তান।

নিহার সরকার অংকুর

ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

দুর্গাপূজা সব বাঙালির আনন্দ আয়োজন

শরৎ এলেই যেন বাংলার আকাশে-বাতাসে উৎসবের রং লাগে। এ উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। দুর্গাপূজাকে ঘিরে যে উৎসব তা শুধু হিন্দু না সব বাঙালির। ছোটবেলায় দেখেছি আমাদের মুসলমান প্রতিবেশী, এলাকাবাসী ও বন্ধুরা একসঙ্গে কিভাবে আনন্দ ভাগাভাগি করতো। পূজার সময় মুসলমান বন্ধুদের যেমন পাশে পেয়েছি, ঈদেও আমরা তাদের সঙ্গে থেকেছি। নামাজ শেষে কোলাকুলি করতাম। মুসলিম বন্ধুদের সঙ্গে তাদের বাসায় গিয়ে সেমাই-পোলাও খেতাম। মুসলিম বন্ধুরাও মন্দিরে গিয়ে পূজা-প্রার্থনায় অংশ না নিয়েও উপস্থিত থেকে আমাদের উৎসাহিত করত, প্রসাদ গ্রহণে দ্বিধা করত না। উৎসবগুলো মূলত ধর্মীয় হলেও তাতে সম্প্রীতির খুব ঘাটতি ছিল না। উৎসব সবসময় একটা মিলনের জায়গা তৈরি করে। একা একা উৎসব করা যায় না। উৎসব করতে হলে একত্রিত হতে হয়, মিলিত হতে হয়। যেকোনো উৎসব আয়োজনই মানুষে মধ্যে শুভবোধের উন্মেষ হয়, মুক্তচিন্তার প্রসার ঘটে। উৎসবের মূল কথা হলো- সংকীর্ণতা পরিহার করতে হবে, উদারতা দেখাতে হবে। উৎসবই প্রকৃতপক্ষে সম্প্রীতির পথ রচনা করে। অনেক জায়গায় পাশাপাশি মসজিদ আর মন্দির আছে। আজান এবং নামাজের সময় মন্দিরে পূজা বন্ধ থাকে। আবার মুসলমান যুবকরাই অনেক জায়গায় মণ্ডপ পাহারা দেয়। এভাবেই মিলেমিশে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

শাওন সরকার জয়

ফিজিওথেরাপি

গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক ফিজিওথেরাপি কলেজ

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close