সানজিদা জান্নাত পিংকি

  ০৩ অক্টোবর, ২০২২

‘নিরক্ষরতা দেশে বিষফোঁড়ার মতো’

শিক্ষা মানুষের অন্তর্নিহিত একটি গুণ। একটি জাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে শিক্ষার বিকল্প কিছু নেই। দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত শিক্ষা অর্জন অথবা শিক্ষা অর্জনের জন্য সুদূর বিলেতে যাওয়ার উপমা দিয়ে বারবার শিক্ষাকে উৎসাহিত করেছে প্রতিটি দেশ ও জাতি। এটা কোনো প্রতিষ্ঠান, আকার এবং দাঁড়িপাল্লায় মাপা যায় না। তবে আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় শিক্ষাকে কিছু স্তর এবং রূপায়ণে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করার প্রচেষ্টা তো থাকেই। বর্তমানে অন্তত অক্ষরজ্ঞান থাকাকে সাক্ষরতা এবং না থাকাকে নিরক্ষরতা হিসেবে গণ্য করা হয়।

একটা দেশের সার্বিক উন্নয়ন, সেখানকার মানুষের শিক্ষা ও সাক্ষরতার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে। যেন সমান্তরাল পথেই চলে দুটি বিষয়। উন্নয়নের কাতারে সম্মুখ সারির দেশগুলো নিজেদের সক্রিয় অবস্থানের মধ্য দিয়েই জানান দেয় তারা সাক্ষরতার দিক দিয়ে অগ্রসর। সাক্ষরতাই একটি জাতির উন্নয়নের চাবিকাঠি।

বাংলাদেশ স্বাধীনতা হওয়ার পর থেকেই দেশকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ সংবিধানের ১৭ নম্বর ধারায় অবৈতনিক বাধ্যতামূলক শিক্ষাকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। এরপর ১৯৭৪ সালে কুদরত-এ-খুদা প্রণীত ‘বাংলাদেশ শিক্ষা কমিশন, ১৯৮৩ সালের মধ্যে ১ম থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত বাধ্যতামূলক শিক্ষার ওপর নজর আরোপ করে। পরে ৯০ দশকে সরকার খাদ্যের বিনিময়ে শিক্ষার উদ্যোগ নেয়। তবে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ এখনো নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পায়নি। দেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ এখনো নিরক্ষর। বাংলাদেশ বর্তমানে উঠতি অর্থনীতির দেশ আর বাংলাদেশের প্রধান হাতিয়ার হলো মানবসম্পদ।

সাক্ষরতাকে নিজ অধিকার হিসেবে আখ্যায়িত করে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সাজ্জাদুল ইসলাম শিপন বলেন, ‘মানুষের পাঁচটি মৌল-মানবিক অধিকারের মধ্যে শিক্ষা অন্যতম, যা মানুষকে সত্যিকার মানুষরূপে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। শিক্ষাহীন জীবন নির্বোধ-অচৈতন্য প্রাণীর সঙ্গে তুলনা করা যায়। কোনো ব্যক্তি কোনো কিছু পড়ে সেটা লেখার সক্ষমতাই হলো তার সাক্ষরতা। যে দেশের সাক্ষরতার হার যত বেশি, সে দেশ তত উন্নত। লিখতে ও পড়তে পারা ব্যক্তিই একমাত্র জানতে পারবেন বিশ্বের কোথায় কী ঘটছে। বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে নিরক্ষরতা এখানে বিষফোঁড়ার মতো। নিরক্ষর ব্যক্তি সমাজে বোঝা হিসেবে বিবেচিত হন। সাক্ষরতা আমাদের অধিকার এবং তা অর্জন করা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে ইংরেজি ভাষার দক্ষতার ওপর আলাদা জোর দিতে হবে। শিকড় শক্ত করতে প্রাথমিক শিক্ষায় দক্ষ শিক্ষকদের ভূমিকা রাখা আবশ্যক।

দেশের জনসংখ্যার বড় একটি সংখ্যাকে দারিদ্র্যসীমার নিচে ও নিরক্ষর রেখে দেশ কখনো আগাতে পারবে না বরং সবাইকে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। সুতরাং শিক্ষাকে সর্বজনীন করার বিকল্প নেই।

আরেক শিক্ষার্থী ইখতিয়ার হোসেন সজল বলেন, ‘নাগরিককে সম্পদে রূপান্তর করার জন্য শিক্ষিত করে গড়ে তোলা অপরিসীম। সাক্ষর জ্ঞানের জোরে আমরা ব্যক্তি হিসেবে এবং দেশের নাগরিক হিসেবে নিজ দায়িত্ব পালন এবং অধিকার ভোগে সচেতন হতে পারি। নিরক্ষর মানুষ সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সব দিকে অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। সাক্ষরজ্ঞান মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করে। নিরক্ষর মানুষ দেশের জন্য বোঝাস্বরূপ। দারিদ্র্যবিমোচন, জনসংহতি, ধর্মনিরপেক্ষতা, স্বাস্থ্যচেতনা, জনসংখ্যা সচেতনতা, লিঙ্গসমতা, গণতন্ত্রের মতো অবিচ্ছেদ্য বিষয়গুলো বুঝতে এবং ধারণ করতে শিক্ষিত চেতনাসম্পন্ন মানুষের ভূমিকা অপরিহার্য।’

সংবিধানে রাষ্ট্রে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া উল্লেখ করা হয়েছে দক্ষ ও মানসম্মত শিক্ষক সংখ্যা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের কথাও।

ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে সরকারের পাশাপাশি, শিক্ষিত নাগরিকদেরও এগিয়ে আসতে হবে। কুসংস্কার দূর করে নারী শিক্ষাও সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সাক্ষরতার মশাল জ্বালিয়ে প্রজ্বালিত করতে হবে সমাজ, মোচন করতে হবে নিরক্ষরতার অন্ধকার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close