মাহমুদা টুম্পা

  ০২ অক্টোবর, ২০২২

মনজুড়ানো ভাসমান সেতু

ভ্রমণ সর্বদাই আনন্দের, আর এ আনন্দের সাথে যুক্ত হয় জ্ঞানলাভ। তাই তো জ্ঞানের পিপাসা মেটাতে ছুটে চলি পৃথিবীর এপথে ওপথে। ক্যাম্পাস বন্ধের সুবিধার্থে চলে গেলাম যশোরের পানে। আর সাথী ছিল আঁখি। আগে থেকেই প্ল্যান করে রেখেছিলাম ভাসমান সেতু দেখব। যশোরের মনিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জে অবস্থিত ‘ঝাঁপা বাওড় ভাসমান সেতু’। বৃষ্টির কারণে সেতুতে আমরা দেরিতে পৌছালাম। প্রায় ২টা বেজে গিয়েছিল। যদিও বিলম্ব তবুও উদ্দীপনার শেষ ছিল না। দুজনে টিকিট কেটে সেতুতে উঠলাম। আশ্চর্য বিষয় এই যে- সেতুটি ইট, বালু, রড, সিমেন্ট, কংক্রিটের নয়। প্রায় ৮৫০টি নীল রঙের প্লাস্টিকের ড্রাম ব্যবহার করা হয়েছে। ভাসমান ড্রামের ওপর স্টিলের সিট ফেলে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। নীল ড্রাম আর সাদা লাল রঙের সেতুটি দেখতে খুবই আকর্ষণীয়। সেজন্য বরাবরই জনস্রোতের দৃষ্টি কেড়েছে।

আমরা এক পা দুপা করে সেতুতে উঠতে লাগবে। মৃদু বাতাস বইছিল। হাঁটতে লাগলাম। মনে হচ্ছিল ড্রামগুলো নড়ছে। কিন্তু অভয়ও ছিল পড়ব না। বাতাসের বেগে বাওড়ের স্রোত কানে ভেসে গেল। সেতুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে দুইটি এলাকা দেখতে শুরু করলাম। দূর থেকে কেমন জানি অস্পষ্ট পাহাড়ের মতো হয় হয়, ছোট ছোট করে গাছের মতো দেখা যায়। আরো দেখলাম এক পাশে মাথা উঁচু করে একটা স্কুল দাঁড়িয়ে আছে, আর অন্যদিকে মন্দিরের মতো উঁচু দালান।

নদীর সাথে প্রকৃতির নিবিড় সম্পর্ক। মনোরম প্রকৃতির স্বপ্নীল লীলাভূমির দর্শন জাগ্রত হচ্ছে গাঢ় ভাবে। প্রকৃতিকে কাছ থেকে দেখে হৃদয়ে ভাবাবেগ শুরু হতে লাগলো। দর্শন শেষে আমরা কিছু ছবি তুলি, ভিডিও করি। ছোট ছোট পা ফেলে আমরা ওপারে যাই আর দেখতে পাই বাহারি রকমের পসরা সাজিয়ে রেখেছে দোকানীরা। দুজনে আগ্রহ নিয়ে দেখছি। আঁখি দেখছে তার মতো করে আর আমি খুঁজছি আমার শক্তিকে। আঁখি নিল সুন্দর একটা হাতপাখা আর আমি নিলাম বেগুনি রঙের চিরুনিবিশিষ্ট মনকাড়ানো দর্শনধারী শক্তিশালী অস্ত্র কলম। যা আমি ঘুরতে গেলেই করি। তারপরে আমরা চুঁইঝাল মিশ্রিত ফুচকা খেলাম। আবারও হাজারো বিস্ময় নিয়ে ঝাঁপা এলাকাকে দেখতে থাকি।

প্রায় ১৪০০ ফুট দৈর্ঘ্যরে ভাসমান সেতুটি তৈরি করতে সময় লেগেছে প্রায় কয়েক মাস। ব্যয় হয়েছে প্রায় ৬০ লাখ টাকা। আগে ২০ হাজার গ্রামবাসী যুগ যুগ ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মাথায় নিয়ে ঝুঁকির মধ্যে নৌকায় পারাপার হয়ে আসছিল। এই সেতু নির্মাণের ফলে এলাকাবাসীর দূর্ভোগ লাঘব হয়েছে। সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় হয়েছে।

এলাকার বাসিন্দা আসাদুজ্জামান এক সময় দেখতেন নদী থেকে বালু তোলার সময় নদীর মধ্যে ট্রলারগুলো প্লাস্টিকের ড্রামের উপর বসানো থাকতো এবং অধিক ওজন সম্পন্ন এই মেশিনগুলো অনায়াসে বালু তোলতো। সেখান থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সহযোগিতায় এই ভাসমান সেতু তৈরি করেন। তাছাড়া পাশেই আরেকটি সেতু রয়েছে। সেতুর নাম বঙ্গবন্ধু ভাসমান সেতু। সেটিও ঘুরে দেখলাম আমরা।

ঝাঁপা বাওড় ও ভাসমান সেতু বর্তমানে ১ম শ্রেণির দর্শনীয় স্থানের মধ্যে অন্যতম। এছাড়া ঝাঁপা বাওড়ে এক বিশেষ প্রকার মাছ জন্মায়, যেটা অন্য কোনো নদী, সমুদ্রে বা জলাশয়ে জন্মায় না। মাছটা দেখতে ছোট ইলিশের মতো। মাছটার নাম খয়রা। এর রঙ উজ্জল রুপালি। খেতে খুবই সু-স্বাদু। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিদিন হাজার দর্শনার্থী কৌতুহল মেটাতে এখানে আসে। বিভিন্ন ছুটিতে যেমন- ঈদ ও পূজার মতো বড় বড় অনুষ্ঠানে দুর দুরন্ত থেকে পর্যটক, স্থানীয় যারা বাইরে থাকে বাড়িতে আসে ছুটি কাটাতে তারাও নৌকা ও ট্রলারে করে ছুটে নৌভ্রমণে, বৃহত্তর বাওড়ে গোসল, সাঁতার প্রতিযোগীতায় অংশ গ্রহণ করে।

মাথার উপরে আকাশ, ঝিরিঝিরি বাতাস আর হাওড়ের ছোট ছোট ঢেউয়ে বিচিত্র শোভা ভোলার মতো নয়, স্মৃতিপটে এখনো রঙিন সেই দিনটি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close