হুসাইন আহমদ

  ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

জমিদারবাড়িতে এক দিন

বাংলাদেশ ইতিহাস-ঐতিহ্য সমৃদ্ধ একটি দেশ। নানা কারণেই এ দেশের সংস্কৃতির পর্যাপ্ত বিস্তার ঘটেছে। বিশেষ করে, আগেকার জমিদার ও নবাবদের তৈরি নানা স্থাপত্য তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যা ইতিহাসে নতুন প্রজন্মের কাছে এ দেশের সোনালি অতীত হিসেবে তুলে ধরা হয়। আর তা শুধু আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে নয় বরং বাইরের দেশ থেকে আসা বহু পর্যটকের কাছেই এই স্থাপত্যের কারণে আমার সোনার দেশটি সুনাম কুড়িয়েছে। কারণ, প্রতিটি ঐতিহাসিক স্থাপনাই ওই যুগের মানুষের জীবনযাত্রা, চালচলন ও সংস্কৃতির ধারক-বাহক। যা তাদের সবকিছু আমাদের সামনে তুলে ধরে। আর এসব স্থাপনাগুলো যেহেতু একসময়ে নির্মিত নয়। তাই প্রতিটি স্থাপনার ভিন্ন ভিন্ন ইতিহাস-ঐতিহ্য ও পরিচয় পাওয়া যায়। যেমন, টাঙ্গাইল জেলার কয়েকটি স্থাপনা। মহেরা জমিদারবাড়ি, নাগরপুর জমিদারবাড়ি, ধনবাড়ি জমিদারবাড়ি, আতিয়া মসজিদ ইত্যাদি।

আজ আমি নাগরপুর জমিদারবাড়ির (চৌধুরীবাড়ি) কথা তুলে ধরছি। কারণ, নাগরপুর জমিদারবাড়িতে এইতো সেদিন ঘুরতে গিয়েছিলাম। ঘুরতে গিয়েছিলাম শুধু বিনোদনের জন্য নয়, বরং আমাদের দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির কিছু স্মৃতিচারণের জন্য। কারণ এই স্থাপনাগুলোই অতীতের কথা বলে, যা অতীত সংস্কৃতির প্রত্যক্ষ সাক্ষী।

নাগরপুর জমিদারবাড়ি : উনবিংশ শতাব্দীতে যদুনাথ চৌধুরী। প্রায় ৫৪ একর জমির ওপর জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন। তাদের বংশক্রমে দেখা যায় এমন- তার তিন ছেলে উপেন্দ্র মোহন চৌধুরী, জগদীন্দ্র মোহন চৌধুরী, শশাঙ্ক মোহন চৌধুরী। ব্রিটিশ সরকার উপেন্দ্র মোহন চৌধুরীর বড় ছেলে সতীশ চন্দ্র রায় চৌধুরীকে সাধারণ জনগোষ্ঠীর জন্যে বিভিন্ন মুখী সেবামূলক কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ রায় বাহাদুর খেতাবে ভূষিত করে। ছোট ছেলে সুরেশ চন্দ্র রায় চৌধুরী অপেক্ষাকৃত পাশ্চাত্য সংস্কৃতিঘেষা। তিনি ছিলেন অনেকের চেয়ে সৌখিন প্রকৃতির মানুষ। তিনি ছিলেন খুব ক্রীড়ামোদী। উপমহাদেশের বিখ্যাত ফুটবল দল ইষ্ট বেঙ্গল ক্লাবের তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি। পাশ্চাত্য এবং মুঘল সংস্কৃতির মিশ্রণে এক অপূর্ব নান্দনিক সৌন্দর্যে নির্মিত এই বৈঠকখানা বিল্ডিংয়ের ওপরে ছিল নহবতখানা। সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রতিদিন ভোরে সানাইয়ের ভৈরবী রাগিনীতে চৌধুরী বংশের তথা স্থানীয় প্রজাদের ঘুম ভাঙত।

শোনা যায়, রায় বাহাদুরের ছোট ভাই সুরেশ চৌধুরীকে নাগরপুরে রেখে সম্পূর্ণ রাজধানী কলকাতার আদলে নাগরপুরকে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। চৌধুরী বাড়ির রঙ্গমহলের পাশে এক সুদৃশ্য চিড়িয়াখানা ছিল। সেখানে শোভা পেত-ময়ূর, কাকাতোয়া, হরিণ, ময়না আর শেষ দিকে শৌখিন সুরেশ চৌধুরীর ইচ্ছায় চিড়িয়াখানায় স্থান করে নেয় বাঘ (কেতকী) এবং সিংহ (দ্যুতি)। ১৯৪৭ এর দেশ বিভক্তির পর একসময় তদানিন্তন সরকার চৌধুরী বাড়ির সব সম্পদ অধিগ্রহণ করে। অট্টালিকাটির অভ্যন্তরের পুরো কাজটি সুদৃশ্য শ্বেত পাথরে গড়া। আর হ্যাঁ, বর্তমানে চৌধুরী বাড়ির এই মুল ভবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘নাগরপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ’। ফলে জমিদার বাড়িটি একেবারে অযত্নে নেই।

যাতায়াত : টাঙ্গাইল শহর হতে সিএনজি অটোরিকশা যোগে নাগরপুর জমিদারবাড়ি (চৌধুরী বাড়ি) সব সময় যাওয়া যায়।

অতএব, এই স্থাপনাগুলো একটি জাতির ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক মূল্যকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে। সমাজ ও জাতির অগ্রগতির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। চেতনাবোধ জাগ্রত করে মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। এগুলো আমাদের গর্বিত করে তুলতে পারে অতীত ঐতিহ্যের প্রতি। এগুলো অতীতের কথা বলে, অতীত সংস্কৃতির কথা বলে আমাদেরকে উদ্দীপিত করে। আর তাই ইতিহাস-ঐতিহ্য ধরে রাখা সবার জাতীয় দায়িত্ব। তবে এই দায়িত্ব পালন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরো সচেতন হতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close