মোহাম্মদ অংকন

  ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

ছাত্রদের জন্য কাজ করছেন অন্তর হাজং

অন্তর হাজং একজন উদ্যেমী তরুণ। পাঁচণ্ডছয় বছর ধরে বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছেন। সেবামূলক কাজের ধারাবাহিকতায় গড়ে তুলেছেন ‘বাংলাদেশ হাজং ছাত্র সংগঠন’। যেটির যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ব্যক্তি উদ্যোগের পাশাপাশি সংগঠনের সহযোগিতায় নানা সেবামূলক কাজ করে পরিচিত এখন অন্তর হাজং। তিনি নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার খুজিগড়া গ্রামের পিতা রুহিন্দ্র হাজং ও মাতা বালা হাজং-এর সন্তান। ২৭ বছর বয়সের এই তরুণ বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজে এমবিএ করছেন। পাশাপাশি ‘সারা সংস্থা’নামক একটি এনজিওতে কমিউনিটি ফ্যাসিলেটিটর হিসেবে কাজ করে প্রতি মাসের আয়ের টাকা জমিয়ে মানুষের কল্যাণে খরচ করে আসছেন।

‘হাজং ছাত্র সংগঠন’র ব্যানারে অন্তর হাজং ও তার দল কী জাতীয় কাজ করছেন, জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘মূলধারার জনগোষ্ঠির জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার খাত থাকলেও আদিবাসী হওয়ায় আমরা বিভিন্ন কিছু থেকে বঞ্চিত। তাই হাজং শিক্ষার্থীরা যাতে পড়াশোনায় পিছিয়ে না পড়ে, সেই উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখে সংগঠনটি গড়ে তুলি ২০১৫ সালে। পড়াশোনা করতে শিক্ষা সহায়তা প্রদান, পিছিয়ে পড়া মানুষের সেবায় কাজ করা, আত্মহত্যা প্রবণতা রোধকরণ, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু প্রতিরোধে সচেতনকরণসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করে আসছি। চলমান করোনাভাইরাস মোকাবিলায় মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও সাবান বিতরণ এবং খাদ্য সহায়তা প্রদান করেছি। খুব সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বন্যায় খাদ্য সামগ্রী প্রদান করেছি।’

সংগঠনটি অসহায়, বিপদগ্রস্থ মানুষকে সেবার পাশাপাশি সচেতনায় বেশি জোর দিচ্ছে বলে জানা যায়। তারা ইতোমধ্যে শেরপুরের তিনটি উপজেলা যথা- নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী, বালিঝুরির বিভিন্ন গ্রামে সচেতনতামূলক সেমিনারের আয়োজন করেছেন। ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট, ধুবাউড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামেও একই উদ্যোগ নিতে দেখা গেছে তাদের। নেত্রকোনার দুর্গাপুর, কলমাকান্দার বিভিন্ন গ্রামে এবং সুনামগঞ্জের মধ্যনগর, তাহিরপুর, ধর্মপাশা, বিশম্ভরপুরসহ ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের শতাধিক প্রান্তিক হাওর অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া মানুষের সেবায় সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সংগঠনটি। সংগঠনসূত্রে আরো জানা যায়, তারা পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীর মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণসহ দরিদ্র এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম ফিলাপে সহায়তা প্রদান করেছে।

ভবিষ্যতে হাজং ছেলেমেয়ে যেন উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজের, জাতির এবং দেশের জন্য কাজ করতে পারে সেই প্রত্যাশা রেখে অন্তর হাজং জানান, ‘আমাদের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বলতে পারি, অসহায় ও হতদরিদ্র পরমেশ্বর হাজং, পুরাচান হাজং ও অরুণ হাজংকে থাকার ঘর করতে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। বন্যায় অনেকের নষ্ট হয়ে যাওয়া বই কিনে দেওয়া হয়েছে। এসব কাজ করতে গিয়ে আমাদের বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে আর্থিক অস্বচ্ছলতা। কোনো দাতব্য প্রতিষ্ঠান আমাদের সংগঠনের পাশে দাঁড়ালে আমাদের কার্যক্রম আরো সুদূরপ্রসারী ও গতিশীল হত।’

সম্প্রতি অন্তর হাজং-এর ছোট ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেও আর্থিক সংকটের কারণে যখন পেছন ফিরে তাকাচ্ছিল, তখনই ‘হাজং ছাত্র সংগঠন’ সহায়তার হাত বাড়ায়। এভাবেই অন্তর হাজং ও তার সংগঠন মানুষের বিভিন্ন সমস্যা, অভাব-অনটন, দুঃখণ্ডকষ্ট দূর করতে কাজ করছেন নিঃস্বার্থভাবে। অন্তর হাজং-এর সাথে হিন্দু বালা হাজং, রুপিন্দ্র হাজং, শ্রীধাম হাজংসহ বেশ কজন তরুণ স্বেচ্ছায় কাজ করছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close