মোর্শেদ মামুন, ইবি

  ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২

তপ্ত দুপুরে দুদণ্ড শান্তির ছায়া

ক্লাস পরীক্ষা শেষে ধরাপৃষ্ঠের উত্তপ্ত আলিঙ্গনে শিক্ষার্থীরা যখন ক্লান্ত-শ্রান্ত, প্রকৃতির প্রচণ্ড উত্তাপে যখন প্রত্যেকেই গলদঘর্ম, যেদিকেই চোখ যায় গনগনে সূর্যের বিভীষিকাময় রুদ্রমূর্তি। এমন অবস্থায় সবাই যেন একটুখানি ছায়াময় শীতল স্থানের সন্ধানে ব্যাপৃত।

সবারই কর্মক্লান্ত কায়ায় সজীবতার তীব্র অভাব সুস্পষ্ট। সবারই হৃদয় একটুখানি শীতল পরশের প্রত্যাশায় ব্যাকুল। নির্জীব নিষ্প্রাণ হয়ে যাওয়া বপুতে প্রাণসংযোগের তীব্র আকুলতায় তাদের নিরন্তর ছোটাছুটি। পুরো পৃথিবী যখন অপ্রসন্ন, তখন তাদের চোখেমুখে দেখা যায় নিরাশার চোরাবালি। প্রকৃতির এমন নিষ্ঠুর বৈরিতার মাঝে ঠিক অদূরেই হঠাৎ-ই যেন চোখে পড়ে কারো হাতছানি। চকিতেই সেদিকে দৃষ্টিপাত করে তারা। চোখেমুখে খেলে যায় খুশির ঝিলিক। দ্রুতপদসঞ্চারে সেদিকে গমন করতেই কারো শীতল পরশে জুড়িয়ে আসে তাদের চোখ। কারো কোমল ছোঁয়ায় প্রাণহীন হতে থাকা শরীরে ধীরে ধীরে ঘটতে থাকে প্রাণের সঞ্চার। কারো দুটি হাতের এমন শীতল, কোমল ও সজীব স্পর্শে তারা যেন ফিরে প্রায় নবপ্রাণ। যুদ্ধফেরত আহত সৈনিক যেমন প্রিয়াসান্নিধ্যে ভুলে যায় যুদ্ধের বিভীষিকাময় ভয়াল রূপ, ঠিক তেমনিভাবে জীবনযুদ্ধে ক্লান্ত হয়ে আসা শিক্ষার্থীরা ওই দুটি কোমল হাতের শীতল ছোঁয়ায় যেন ভুলে যায় একটু আগের সব বিদগ্ধ যন্ত্রণা।

প্রিয়জনের কোমল করস্পর্শের মতোই তপ্ত দুপুরে দুদণ্ড শান্তির ছায়া হিসেবে অবিরত শিক্ষার্থীদের ক্লান্তি দূর করে যাচ্ছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবন সংলগ্ন দুটি বটগাছ। সবার কাছে যা পরিচিত বটতলা নামে। প্রচণ্ড গরমে রৌদ্রের উত্তাপ থেকে বাঁচতে শিক্ষার্থীদের পছন্দের আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে বটতলা। বন্ধু-বান্ধবীদের সরস আড্ডা, নিঃসঙ্গ ভাবগম্ভীর কোনো যুবকের উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা, ক্লাস-পরীক্ষার চাপে জর্জরিত ভেঙে পড়া শরীর বয়ে আনার সময় একটুখানি জিরিয়ে নেওয়া, কখনোবা এক কোনায় ঘনিষ্ঠ হয়ে বসা যুগলের খুনসুটিতে মেতে থাকা, এরকম দৃশ্য প্রতিনিয়তই চোখে পড়ে ওই দুটি বটচ্ছায়াতলে। তপ্ত দুপুরে যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণবিন্দুতে পরিণত হয়ে ওঠে বটতলা। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী রিয়া বসাক বলেন, তপ্ত দুপুরে কাঠফাঁটা রোদে যখন প্রাণ যাওয়ার উপক্রম, তখন শীতলতার পরশ লাভের আশায় সবার আগে আমার মনে পড়ে বটতলার কথা। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের জাঁকজমকপূর্ণ জায়গাগুলোর মধ্যে বটতলা অন্যতম, যেখানে গান আড্ডায় মুখরিত থাকে ক্যাম্পাস। বটবৃক্ষ দুটি না থাকলে এই তপ্ত দুপুরে সম্ভব হতো না খানিকক্ষণ বসে থাকা। ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের জুনাইদ নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ভরদুপুরে প্রচণ্ড রৌদ্রে যখন শরীর পুড়ে যায় তখনই বটতলার কথা মনে করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি। শত ক্লান্তি, অবসাদ আর বিষণœতা দূরীকরণের সাক্ষী হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে বটগাছ দুটি। ল্যাব, ক্লাস আর ব্যস্ততা শেষে বন্ধুদের আড্ডায় গাছ দুটি যেন বন্ধুর মতোই সঙ্গ দিচ্ছে আমাদের।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close