সানজিদা জান্নাত পিংকি

  ১৪ আগস্ট, ২০২২

১০ টাকার পথ

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বাইশমাইলের ঢাকাগামী লেনের পাশেই গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) ফটক। সেখানে নেমে প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কপথ। যেতে হয় রিকশায়। গবির এই পথটুকুর ভাড়া ১০ টাকা। অনেকেই পথটিকে বলেন ১০ টাকার সড়ক! তবে এই ভাড়া নিয়ে আপত্তি আছে শিক্ষার্থীদের।

সুনশান সড়কটি ব্যস্ত হয়ে ওঠে সকাল থেকেই। ভারি যানের চলাচলও খুব কম। মহাসড়ক থেকে কিছুটা এগিয়ে গেলেই সামনে দেখা মিলে গ্রামের মেঠোপথের মতন দুপাশে সারি সারি তালগাছ, পতিত জমি কিংবা ময়লার স্তূপ।

এই ১০ টাকার পথটুকুর শেষ গন্তব্য হাজারো শিক্ষার্থীর দ্বিতীয় বাড়ির। অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার একমাত্র সড়ক এটি।

সময়ের ব্যবধানে এই রাস্তার হালচাল বদলালেও গন্তব্য সেই একটি জায়গাতেই। হয়তোবা অনেক স্মৃতিও বহন করছে এই পথটি। রোদ, বৃষ্টি, ঝড় উপেক্ষা করে হাজার হাজার শিক্ষার্থী এই পথেই বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছে, শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়েছে। এই রাস্তাটুকু গবি শিক্ষার্থীদের জন্য ভিন্ন এক আবেগ বহন করে।

বিবিএ বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম শহিদ বলেন, ‘২০১৪ সালে আমরা বাইশমাইল স্ট্যান্ড থেকে ভার্সিটির গেইট পর্যন্ত বটবটি/টমটমিতে যাতায়াত করতাম। ভাড়া ছিল ৫ টাকা। বটবটিতে চলাচলের যেমন সুবিধা ছিল তেমনি অসুবিধাও হতো। কমপক্ষে ১৫/২০ জন যাত্রী লাগতো, সেহেতু প্রায় আধঘণ্টা স্ট্যান্ডে অপেক্ষা করতে হতো। এজন্য অনেক সময় ক্লাসে দেরি হতো। এখন তো আর অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয় না। তবে সব বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে যেতে পারতাম, মজাটা ভিন্ন রকমের ছিল। পরবর্তীতে ২০১৬ এর দিকে এই রাস্তায় রিকশা চলাচল শুরু হয়। তবে রাস্তার অবস্থা ছিল নাজেহাল। যাওয়া আর আসার সময় হাড় মাংস এক হয়ে যাওয়ার দশা হতো! আর বৃষ্টি হলেই হাঁটুপানি জমতো। মাঝে মাঝে তো রিকশা উল্টে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতো। সে তুলনায় রাস্তাটা এখন অনেকটা ভালো। প্রায় সময়ই বন্ধুরা মিলে হেঁটে যাতায়াত করতাম, প্রচুর হৈ-হুল্লোড় হতো। ক্যাম্পাসের ভেতরে যেমন অনেক স্মৃতি রয়েছে, ঠিক তেমনি এই রাস্তাটুকু জুড়েও অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে।’

জ্ঞানের প্রবেশদ্বারের একমাত্র সড়ক হলেও এর ভোগান্তিরও শেষ নেই। কিছু কিছু জায়গায় এই রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ যার ফলে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অনেকে আবার বলে থাকেন রিকশায় উঠে রোলার কস্টারের অনুভূতি পাওয়া যায়। বৃষ্টির দিনে এই ভাঙা জায়গাগুলোর অবস্থা আরো বেশি করুণ হয়ে যায়। কাদা ও পানি জমার ফলে অনেক শিক্ষার্থী চাইলেও পায়ে হেঁটে চলাচল করতে পারে না।

আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তানজিলা রহমান বলেন, বন্ধুরা মিলে হেঁটে যাওয়া আসা করলে তো এই পথ নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। পথিমধ্যে রয়েছে ঘোড়াপীর মাজার, সেখানে দাদুর দোকান প্রায় সবারই পছন্দের জায়গা। চা খেতে খেতে আড্ডা দিলে সারাদিনের ক্লান্তি যেন ফুরিয়ে যায়। বাইশমাইল স্ট্যান্ড থেকে ক্যাম্পাস অব্দি পথটুকু কখনো রিকশায়, কখনো পায়ে হেঁটেই চলে যাই। যদিও রিকশায়ই বেশি যাওয়া হয়। তবে ভাড়া নিয়ে এত তর্ক বিতর্কের পরও এখনো অনেক সময় রিকশাচালকেরা বেশি ভাড়া দাবি করেন। আবার অনেক সময় একা থাকলে রিকশায় অপরিচিত লোক উঠিয়ে নেন। এটা মেয়েদের জন্য বিব্রতকর বিষয়। এর স্থায়ী একটা সমাধান প্রয়োজন। রাস্তাটুকুর মেরামতও খুব দরকার।

বাইশমাইল বাসস্ট্যান্ড থেকে এই পথে কিছুটা এগিয়েই বাম দিকে গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালস। ডানে বাইশমাইল আবাসন প্রকল্প। ফার্মাসিউটিক্যালস পার হয়েই বেশ খানিকটা রাস্তার দুধারে ফাঁকা পতিত জমি ছাড়া তেমন কিছুই চোখে পড়ে না। এর মাঝেই রয়েছে সারি সারি তালগাছ। এরপর বাজার এবং ঘোড়াপীর মাজার, তারপরই হাতের ডানে গবির ফটক।

গবির মূল ফটকে মোজাইক করে বসানো আছে ১১ জন মহীয়সী নারীর ছবি। যারা বাঙালি নারী জাগরণে ভূমিকা রেখেছেন। ক্যাম্পাসে ঢুকতেই ছবিগুলোতে যে কারো চোখে আটকাবে।

উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালের ১৪ জুলাই গ্রাম শহরের মিশেল পরিবেশ নিয়ে যাত্রা শুরু করে সাভারের এই বিদ্যাপীঠ। দুই যুগ ধরে স্বদর্পে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে গণ বিশ্ববিদ্যালয়। বংশী নদীর কোলঘেষা ৩২ একরের এই ক্যাম্পাসের নান্দনিক পরিবেশ যে কাউকে মুগ্ধ করবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close