গিরেন্দ্র চক্রবর্তী

  ০৭ আগস্ট, ২০২২

মিউবিছাসের পুনর্মিলনী

সৌন্দর্যের কি কোনো মাত্রা কিংবা কোনো সংজ্ঞা আছে? সঠিক উত্তর বলাটা মুশকিল বটে। সহজকথায়, সৌন্দর্য হলো অনন্য অবস্থানের এক অনিন্দ্য সুন্দর বিষয়। এ অপরূপ সৌন্দর্যের আঁধার হলো হাওরাঞ্চল। শুধু সৌন্দর্যে নয়, লাবণ্য-ঐশ্বর্যের দিক দিয়েও অনন্য। আর এই হাওরাঞ্চলের সৌন্দর্যের প্রাণকেন্দ্র বলা যায় ভাটির শার্দূল খ্যাত রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের জন্মস্থান ‘মিঠামইন’কে। মহামান্যের অবদানে মিঠামইনের নামণ্ডডাক আজ অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে।

গত ১৩ জুলাই মিঠামইন উপজেলার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক ঝাঁক মেধাবী শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় এক মহতিপূর্ণ মিলনমেলা। হ্যাঁ, বলছিলাম ‘মিঠামইন উপজেলা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ’ কর্তৃক আয়োজিত ‘ঈদ পুনর্মিলনী ও পরিচিতি সভা’ অনুষ্ঠানের কথা। এ মহতি মিলনমেলাকে নিছক অনুষ্ঠান বলে চালিয়ে দেওয়া গূঢ় অন্যায়েরই শামিল।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাষ্ট্রপতির সুযোগ্য পুত্র, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক ও বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মাহমুদা আক্তার। আরো উপস্থিত ছিলেন সার্কেল এএসপি, মিঠামইন উপজেলার ইউএনও, উপজেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, জনপ্রতিনিধি, নিজ নিজ স্থানে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীসহ উপজেলার মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানের প্রাণস্বরূপ বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া একঝাঁক মেধাবী শিক্ষার্থী।

তারুণ্যের এই মিলনমেলায় প্রাণসঞ্চারক হিসেবে উপস্থিত থেকে মহতি মিলনমেলাকে ধন্য করেছেন অনুষ্ঠানের সভাপতি, ভাটির শিক্ষার প্রাণপুরুষ, প্রিন্সিপাল খ্যাত আবদুল হক সাহেব। এ মহতি অনুষ্ঠান শুরুর প্রারম্ভেই প্রাঙ্গণে চলে আসেন ‘মিউছাস’ গঠনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব শ্রদ্ধেয় শাহজাহান স্যার। যার সঞ্চালনায় মহতি মিলনমেলায় যোগ হয়েছিল এক অনন্য মাত্রা। পবিত্র কোরআন ও গীতা পাঠের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা ঘটে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রেখেছিলেন একে একে সব মহারথি। নোবিওপ্রবির বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহিনী দাস মঞ্জুদির অনিন্দ্য সুন্দর বক্তব্যে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল পুরো অডিটোরিয়াম। গঠনমূলক বক্তব্য রেখেছিলেন ইউএনও। এরই ফাঁকে সুযোগ পেয়ে শিক্ষা নিয়ে প্রাণবন্ত বক্তব্য নিয়ে আসেন অনুষ্ঠানের সঞ্চালক শ্রদ্বেয় শাহজাহান স্যার। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, সংসদ সদস্য আঞ্চলিক ভাষায় রসিকতার আদলে শিক্ষা নিয়ে যখন আলোচনা করেন তখন আমরা যেন রাষ্ট্রপতির রসিকতার স্বাদই আস্বাদন করেছি। তিনি বলেন, ‘লেহাপড়া করতে অইবো লেহাপড়ার মতন, ভং ছং লেহাপড়া করলে অইতো না।’ শিক্ষিত বেকার সৃষ্টি না করে দক্ষ জনশক্তি গঠন করতে কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দেওয়ার কথাও উনার বক্তৃতায় ফুটে উঠেছে। সর্বশেষ, সভাপতি মেধাবী শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘মিউবিছাস’-এর ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং এ সংগঠনটি ভাটি এলাকার শিক্ষার প্রসারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পরে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কবিতা, গানে মুখরিত হয়ে যায় পুরো অডিটোরিয়াম। সময়ের পরিক্রমায়, গোধূলি লগ্ন পেরিয়ে যখন সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই তখন মাগরিবের আজানের ধ্বনিতে সমাপ্তি ঘটে অনুষ্ঠানের। দারুণ অভিজ্ঞতালব্ধ একটি সুন্দর ও প্রাণোজ্জ্বল দিনের অবসান শেষে নীড়ে ফেরা পাখির মতোই আমাদেরও শুরু হয় ঘরে ফেরার পালা। এই রকম প্রাণোচ্ছল দিন বারবার আসুক।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close