মিঠু মোকাররম

  ০৭ আগস্ট, ২০২২

বিসিএস লিখিত পরীক্ষার কিছু টিপস

বিসিএস ক্যাডার হওয়ার পেছনে লিখিত পরীক্ষার মার্ক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ৯০০ মার্কের লিখিত পরীক্ষা, আবার যারা বোথ ক্যাডারে পরীক্ষায় অংশ নিবে তাদের ১১০০ মার্কের পরীক্ষা।

এখানে টানা এক সপ্তাহ পরীক্ষা হয়, বিকালে বাসায় ফিরে একটু রেস্ট না নিতেই আবার পরের দিনের জন্য বই রিভিশন দিতে হবে, ঘুমের সময় কম পাবেন, শরীরের উপর দিয়ে একটা ধকল যাবে। এমনকি অনেকের ওজন ২-৪ কেজি কমে যাবে। তাই নিজেকে ফিট রাখার চেষ্টা করতে হবে, এনার্জেটিক খাবার খাতে হবে এবং কমপক্ষে ৬ ঘণ্টা ঘুম দিবেন। আর এই ভেবে মেন্টালি রিল্যাক্স থাকবেন যে, ‘আপনার রিজিকের মালিক আল্লাহ, আপনার প্রাপ্য কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। আর বিসিএস মানেই লাইফ না, লাইফ অনেক কিছুর সমষ্টি।’ সকালে উঠেই আগে গোসল দিবেন, যাতে পরীক্ষার হলে যাওয়ার আগে চুল শুকায় এবং শুকনো অবস্থায় যেন একবার চিরুনি করতে পারেন। তা না হলে অনেকের মাথা ভারি হয়ে থাকার প্রব্লেম হতে পারে। তারপর ভারি কিছু খাবেন, কারণ যেগুলো ৪ ঘণ্টার পরীক্ষা সেগুলোতে দুপুর ২টা পর্যন্ত পরীক্ষার হলে থাকতে হবে। যে কলমে আপনি অভ্যস্ত এবং যেগুলো বেশি কালি ছাড়ে এমন কলম ব্যবহার করবেন। নিচে সংক্ষেপে বিষয় ভিত্তিক কিছু সাজেশন তুলে ধরলাম-

ইংরেজি:

ইংরেজি প্রথম পত্রে একটা প্যাসেজ থেকেই সব প্রশ্ন থাকে, অর্থাৎ প্যাসেজ থেকেই ১০০ মার্ক। কিছু গ্র্যামেটিক্যাল পার্ট থাকে আর কিছু ভোকাবুলারি রিলেটেড পার্ট, সেগুলো নিজের নলেজের উপর এবং প্যাসেজ পড়ে বোঝার উপর নির্ভর করবে। তবে এখানে প্যাসেজের উপর ৩০ মার্কের ১০টা প্রশ্ন থাকে, এটা গুরুত্বপূর্ণ। এখানে একটা কথা বলে রাখি, প্যাসেজের কোনো সেনটেন্স হুবহু কপি করবেন না, হুবহু কপি করলেই মার্ক কমে যাবে বা শূন্য দিয়ে দিবে। একই জিনিস আপনাকে একটু নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে পরিবর্তন করে লিখতে হবে। তাহলে ভালো মার্ক উঠবে এখানে। আর প্যাসেজ সারমর্মে নিজের মতো করে ৪-৫টা সেনটেন্সে লিখবেন। পত্রিকায় প্রকাশের জন্য যে আবেদন পত্র থাকে সেটার ফরম্যাট ঠিক রেখে যা পারেন নিজে বানিয়ে লিখবেন। আর এই সব উত্তর করার জন্য আপনাকে প্যাসেজটা ২-৩ বার ভালোভাবে পড়ে বুঝতে হবে এবং যে যে ওয়ার্ডগুলো গুরুত্বপূর্ণ মনে হবে সেগুলোর নিচে দাগ দিবেন প্রথমেই।

এবার দ্বিতীয় পত্রে আসি, এখানে বাংলা-ইংরেজি এবং ইংরেজি-বাংলা ২টা অনুবাদ ২৫+২৫=৫০ মার্ক। আর একটা ঊংংধু/প্রবন্ধ/রচনা থাকে যেটা ৫০ মার্ক। অনুবাদের ক্ষেত্রে ভাবানুবাদ করবেন, আর অবশ্যই প্রথম ও শেষ বাক্যটা ঠিকভাবে লেখার চেষ্টা করবেন। প্রবন্ধের ক্ষেত্রে হেডিং বেশি দেওয়ার চেষ্টা করবেন এবং একটু ফাঁক ফাঁক করে লেখে পেজের সংখ্যা বাড়াবেন। তবে মনে রাখবেন অবশ্যই Conclusion /উপসংহার টানতে হবে। সময় না পেলে ভেতরের লেখা বাদ দিয়ে উপসংহারে যান।

বাংলা:

প্রথম পত্রে ব্যাকরণ থেকে ৫টা প্রশ্ন থাকে ৩০ মার্কের যেটা নিজের জানার উপর নির্ভর করবে। ভাব সম্প্রসারণ ও সারমর্ম ২০+২০=৪০ মার্ক, এখানে লেখা স্পষ্ট ও সুন্দর করার চেষ্টা করবেন। এবং কিছুটা কাব্যিক ভাষার প্রয়োগ করতে পারলে ভালো। তারপর ১০টি সাহিত্য বিষয়ক প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে যার মার্ক ৩০, এখানে পয়েন্ট টু পয়েন্ট উত্তর করলে ফুল মার্ক পেতে পারেন।

দ্বিতীয় পত্রে ইংরেজি-বাংলা অনুবাদ, কাল্পনিক সংলাপ, সংবাদপত্রে প্রকাশের একটা নিবন্ধ, একটা গ্রন্থ সমালোচনা, এবং একটা প্রবন্ধ/রচনা থাকে। এখানে কাল্পনিক সংলাপে মার্জিত ও বিনয়ী ভাষা ব্যাবহার করবেন, এবং সবসময় পজিটিভ ভাবে যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করবেন। সংবাদপত্রে নিবন্ধ প্রকাশের আবেদন ফরম্যাট ঠিক রাখবেন। আর গ্রন্থ সমালোচনাতে আপনি লেখার মাঝের দিকে গ্রন্থের নেতিবাচক বা ইতিবাচক দিক যেটাই তুলে ধরেন শেষে কিন্তু গ্রন্থটির প্রশংসা করে ছেড়ে দিবেন। এবার প্রবন্ধ/রচনা লেখবেন যেটা আপনার অনুকূলে, পারলে চার্ট বা কোনো চিত্র দিয়ে লেখবেন তাতে মার্ক ভালো আসবে এবং পেজের সংখ্যা বাড়বে। অবশ্যই উপসংহার টেনে শেষ করবেন।

বাংলাদেশ-বিষয়াবলি:

এখানে মোট ১০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে, যার প্রতিটা প্রশ্নের মার্ক ২০ করে। প্রতিটা প্রশ্নে আবার ২-৩ বা ৪টা করে প্রশ্ন থাকে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সময় মেইনটেইন করা এবং শেষ পর্যন্ত গিয়ে ভালোভাবে শেষ করা। এই পরীক্ষায় অনেক লিখতে হয়, প্রথম থেকেই দ্রুত ও স্পষ্ট লিখতে হবে, না হলে পরে সময় পাবেন না। কোন প্রশ্নে কত মার্ক সেটা খেয়াল রেখে কতটুকু উত্তর লিখতে হবে সেটা আপনাকেই বুঝে নিতে হবে। চার্ট, গ্রাফ বা ম্যাপ দেওয়ার চেষ্টা করবেন।

আন্তর্জাতিক-বিষয়াবলি:

আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে কনসেপচুয়াল, টীকা, বা সংজ্ঞা টাইপ ১০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে যেখানে ৪*১০=৪০ মার্ক। এখানে পয়েন্ট টু পয়েন্ট উত্তর করলে ভালো মার্ক আসবে, ১০টা প্রশ্ন আপনার হয়তো কমন পড়বে না তবে আইডিয়া করে হলেও ১০টাই উত্তর করে আসবেন। এরপর ৩টা বড় প্রশ্ন আসবে যেখানে ৩*১৫=৪৫ মার্ক, এখানে বিস্তারিত লিখতে হবে এবং গ্রাফ/ম্যাপ দেওয়ার চেষ্টা করবেন। লাস্টে একটা প্রব্লেম সলভিং থাকবে ১৫ মার্ক যেটা আপনার পড়াশুনা ও বুদ্ধি দিয়ে লিখতে হবে, এখানে সাধারণত সাম্প্রতিক কোনো আন্তর্জাতিক বিষয় থাকে। তাই নিয়মিত পত্রিকা পড়লে এটার উত্তর করা সহজ হয়।

গণিত:

গণিতে সাধারণত ১২টা প্রশ্ন থাকে, যার মধ্যে ১০টার উত্তর করতে হবে, যার মার্ক ১০*৫=৫০। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হলো ১২টার মধ্যে ১০টা প্রশ্ন সিলেক্ট করা, কারণ কিছু কিছু প্রশ্নের মধ্যে আবার ২টা করে ম্যাথ থাকে। সেখানে দেখা যাচ্ছে আপনি একটা পারেন আর একটা পারেন না। তাই প্রথমেই সব ভালোভাবে দেখে ১০টা প্রশ্ন সিলেক্ট করে নিতে হবে। যেগুলো ম্যাথ আপনার কাছে সহজ সেগুলো আগে করবেন।

মানসিক-দক্ষতা:

লিখিত পরীক্ষার মধ্যে একমাত্র নৈর্ব্যক্তিক টাইপ প্রশ্ন হলো মানসিক দক্ষতায়। এখানে ৫০টা প্রশ্ন ৫০ মার্ক, সময় এক ঘণ্টা। সুতরাং মোটামুটি ভাবার সময় পাওয়া যায় এখানে, তাই খুব তাড়াহুড়ো না করে একটু ভেবে ভেবে উওর করবেন। আবার এখানে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার মতো একটা ভুল গেলে ০.৫ মার্ক কাটা হয়।

দৈনন্দিন-বিজ্ঞান, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি:

এখানে ৩টা পার্ট থাকে,

প্রথম পার্টে সাধারণ বিজ্ঞান ৬০ মার্ক। যেখানে ৯টা প্রশ্নের মধ্যে ৮টার উত্তর করতে হবে। এখানে পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান সবকিছুই থাকবে। অনেক ছোট ছোট প্রশ্ন, ১-২ বা ৩ মার্কের। তাই পয়েন্ট টু পয়েন্ট উত্তর করতে হবে।

দ্বিতীয় পার্টে কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি, এখানে সাধারণত ১২টা প্রশ্নের মধ্যে ১০টার উত্তর করতে হবে। ছোট ছোট প্রশ্ন, সাধারণত ২.৫ মার্ক করে। সুতরাং এটাও পয়েন্ট টু পয়েন্ট উত্তর।

তৃতীয় পার্টে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি, এখানে সাধারণত ৮টি প্রশ্নের মধ্যে ৬টি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে, মোট ১৫ মার্ক। এখানেও প্রতিটি প্রশ্নের মার্ক ২.৫ করে। তাই এখানেও শুধু যা চেয়েছে তাই উত্তর করতে হবে। বেশি লেখার সময় নেই, বা লিখলেও বেশি মার্ক পাবেন না।

সর্বোপরি মনে রাখবেন আপনাকে সব উত্তর করে আসতে হবে। কমন না পড়লেও নিজের বুদ্ধি দিয়ে কিছু লিখে আসেন। মার্ক ছেড়ে আসলেন মানে আপনি পিছিয়ে গেলেন। আর আপনি যেমন পরিশ্রম করেছেন আপনি তেমনই ফল পাবেন এটা আশা রাখেন। সবার জন্য শুভ কামনা রইলো।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close