মো. আশরাফুল ইসলাম

  ০৪ আগস্ট, ২০২২

প্রাণহীনার প্রাণসঞ্চারে অদম্যের ছুটে চলা!

বন্ধু যখন জীবনযুদ্ধে লড়ছে তখনই তাকে হারতে না দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে এসেছেন তার সহপাঠীরা। মানবতা কিংবা মানবিকতা বিকাশের প্রথম ধাপ হলো বন্ধুত্ব। বন্ধুত্বই শেখায় একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে ভরসা দেওয়ার মূলমন্ত্রটা। মানুষ পরিবারের বাইরে এসে নানা ধরনের পরিবেশ থেকে ভালো বন্ধুদের মাধ্যমেই এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা পায়।

ঠিক এমনই এক বন্ধু বা সহপাঠীর চিকিৎসার জন্য টাকা তুলতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। ৩২০ একর একটা ভালোবাসা একটা বন্ধন। এখান থেকে কেউ শূন্য হাতে ফিরে যায় না। নানা সময় বিভিন্ন সামাজিক, ব্যক্তিগত সমস্যা ও সংকট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভূমিকা অপরিসীম। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মননশীলতা, মানসিকতা, মানবিকতাই তো একটি উন্নত জাতি গড়ে উঠার প্রথম ধাপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এমন কার্যক্রম দেখে আমার মনে পড়ে গেল কবি কুসুম কুমারী দাশের সেই কবিতা ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?’ এসব মানবতা এবং বন্ধুত্বের আহ্বানে এগিয়ে আসা মানুষদের দেখেই মনে হয় এই তো সেই ছেলেরা, এই তো আমার সোনার বাংলাদেশ। এখানেই তো প্রাণের সৃষ্টি হয়, জগত সজীব হয়। ২০২২ সালের মে মাসে খুসঢ়য হড়ফব পধহপবৎ রোগে আক্রান্ত হন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তাহসিন তাবাসসুম ইফতি। ১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এই মেধাবী শিক্ষার্থীর রোগটি ধীরে ধীরে ছড়িয়ে ফুসফুসে গিয়ে আক্রমণ করে। ডাক্তাররা এই রোগের নামকরণ করেছেন ‘হজকিন্স ক্যান্সার’ হিসেবে। ইতোমধ্যেই ডাক্তারদের পরামর্শে কেমোথেরাপি দেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। উনার চিকিৎসার জন্য যা প্রয়োজন তা পরিবারের সাধ্যের বাইরে বললেই চলে। তাই প্রিয় মানুষকে বুকে আগলে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন তার পিতাণ্ডমাতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুবান্ধব, সিনিয়র-জুনিয়র সবাই মিলে। বিভিন্নভাবে তারা টাকা সংগ্রহ করেছেন, এখনো করার চেষ্টা করছেন। সবাই যথা সাধ্য চেষ্টা করেছেন সাহায্য করতে। তারই ধারাবাহিকতায় তারা পরিকল্পনা করলেন একটি বইয়ের স্টল দেওয়া হবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। এরপরই উপরে তীরপাল টাঙিয়ে ডেস্ক-চেয়ার নিয়ে বসেন ক্যাম্পাসে। বইয়ের স্টলের নাম দেওয়া হয় ‘অদম্য’। এই স্টলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকবৃন্দ বই ডোনেট করেছেন বিক্রি করার জন্য এবং অনেকেই সেই বই নির্ধারিত মূল্য দিয়ে কিনে নিচ্ছেন যা ইফতির চিকিৎসায় ব্যয় হবে। সবসময় এই স্টলটি মুখরিত থাকে পাঠকদের আনাগোনায়। এই বইমেলাটি কেবল যে একটা বইয়ের স্টল তা নয়, বরং একটি জীবন বাঁচানোর প্রতিক। একটি ভালোবাসার স্বাক্ষর। বন্ধুত্বের আহ্বানে এগিয়ে আসার দৃষ্টান্ত। এমন দৃষ্টান্ত বিরল হলেও আমরা চাই প্রতিটি সমাজ, প্রতিটি শ্রেণিতে এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন হোক। তবেই এই দেশ হয়ে উঠবে মৈত্রী ও সম্প্রীতির। এই সমাজ হবে সুস্থ ও কলহমুক্ত প্রেমের ধারক। আপনারাও এগিয়ে আসুন ইফতি আপু আবার ফিরে আসুক ৩২০ একরে। পরিবারের মধ্যমণি হয়ে থাকুক। আমাদের হৃদয়ের প্রার্থনায় থাকুক ইফতি আপুর রোগমুক্তি কামনা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close