শিলমুন নাহার মুন

  ০৩ আগস্ট, ২০২২

স্বপ্ন যখন বাস্তব

‘প্রথমে নিজের কানকে বিশ্বাস হয়নি। আনন্দে আত্মহারা হয়ে কখন যে হঠাৎ চোখে পানি চলে এসেছিল বুঝতে পারিনি। অনেক কষ্ট করেছি এটার জন্য, মনে হচ্ছে এমন কিছু বাদ রাখি নাই যেটা করিনি। স্বপ্ন দেখেছিলাম, আর সেই স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিতে পেরেছি। তাই মহান আল্লাহর কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই’- এভাবেই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্টস রোভার স্কাউট (পিআরএস) অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী আনোয়ারুজ্জামান মুরাদ।

রোভার স্কাউট একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্পিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ করে থাকে। কঠোর পরিশ্রম ও বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করে ৪ বছর পর সুযোগ রয়েছে রাষ্ট্রপতির হাত থেকে প্রেসিডেন্টস রোভার স্কাউট অ্যাওয়ার্ড নেওয়ার। এই অ্যাওয়ার্ড অর্জন করা প্রতিটি রোভারের কাছে সোনার হরিণ পাওয়ার মতো। আর সেই সোনার হরিণকে জয় করতে পেরে আবেগে আপ্লুত হয়ে কথাগুলো বলছিলেন আনোয়ারুজ্জামান মুরাদ।

গত ২৭ জুন বাংলাদেশ স্কাউটসের জাতীয় কাউন্সিলের ৫০ তম (সুবর্ণ জয়ন্তী) বার্ষিক সাধারণ সভা এবং প্রেসিডেন্টস স্কাউট অ্যাওয়ার্ড ও প্রেসিডেন্টস রোভার স্কাউট অ্যাওয়ার্ড বিতরণ অনুষ্ঠানে পুরস্কারটি পান তিনি।

আনোয়ারুজ্জামান মুরাদ ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার গোগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মো. মাকসুদুর রহমান পেশায় একজন শিক্ষক এবং মা মোছা. নারগিস আক্তার একজন গৃহিণী। তিন ভাই বোনের মধ্যে তিনি বড়। গোগর আব্দুল জব্বার উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও পীরগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষে তিনি ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম বর্ষের শেষ দিকে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রোভার স্কাউট গ্রুপে যোগ দেন। তারপর থেকেই নিজের বুদ্ধিমত্তা আর কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে একজন আদর্শ রোভার হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম অলি খাঁ মসজিদ থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১৫০ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে সফলভাবে ভ্রমণ সম্পন্ন করেন। এছাড়াও প্রেসিডেন্ট’স রোভার স্কাউট অ্যাওয়ার্ড অর্জনের মানদন্ড হিসেবে ৬টি ব্যাজ (রোভার কুশলী ব্যাজ, শিক্ষকতা ব্যাজ, স্কাউট ইন্সট্রাক্টর ব্যাজ, পরিভ্রমণকারী ব্যাজ, স্বনির্ভর ব্যাজ, স্কাউট কর্মী ব্যাজ) অর্জন করেন। এরপর ২০১৯ সালের জুন মাসে লগবুক (রিপোর্ট) জমা দেন। লগবুক যাচাই-বাছাই হওয়ার পর পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করেন। এরপর ২০২০ সালের জুন মাসে জেলা পর্যায় এবং অক্টোবর ও সেপ্টেম্বর মাসে আঞ্চলিক পর্যায়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। সবশেষে একই সালের নভেম্বর মাসে জাতীয় পর্যায়ের পরীক্ষায় (মূল পরীক্ষা) অংশগ্রহণ করেন। ২০২১ সালের ১১ জানুয়ারি তিনি মূল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং প্রেসিডেন্টস রোভার স্কাউট অ্যাওয়ার্ডের জন্য নির্বাচিত হন।

পিআরএস অ্যাওয়ার্ড অর্জনের জন্য প্রস্তুতি কিভাবে নিয়েছিলেন প্রশ্নের উত্তরে মুরাদ বলেন, প্রথমে প্রোগ্রাম (সিলেবাস) অনুযায়ী প্রতিটি স্তরের বইসমূহ ভালোভাবে আত্মস্থ করেছি। এরপর যথাযথভাবে প্রতিটি বিষয় নোট করে পড়েছি। এক্ষেত্রে চাকরির প্রস্তুতিটা খুবই কাজে লেগেছে। কারণ লিখিত পরীক্ষায় ৬০% স্কাউটিং। মোটকথা পিআরএস হতে গেলে সার্বিক বিষয়ে জ্ঞান লাগবে।

প্রেসিডেন্ট’স রোভার স্কাউট অ্যাওয়ার্ড অর্জনে অনুপ্রেরণার উৎস জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার এই সাফল্যের পিছনে যারা আমাকে সবসময় অনুপ্রেরণা দিয়েছেন তারা হলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য ও চবি রোভার স্কাউট গ্রুপের সভাপতি প্রফেসর ড. শিরীন আক্তার ম্যাম, সম্পাদক প্রফেসর ড. হেলাল উদ্দিন স্যার, মো. মোয়াজ্জেম হোসেন ও রুহুল আমিন খান স্যার এবং শ্রদ্ধেয় বড় ভাই মো. ফারুক আজম।

পিআরএস অর্জনে পরিবারের ভূমিকা সম্পর্কে মুরাদ বলেন, আমার জীবনের যে কোনো অর্জনে বাবা-মায়ের অনুপ্রেরণা আমাকে সাহস জুগিয়েছে। তাদের দোয়ায় আল্লাহ আমাকে সফলতার পথ দেখিয়েছেন।

আনোয়ারুজ্জামান মুরাদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগ থেকে ¯œাতক ও ¯œাতকোত্তর শেষ করে বর্তমানে আইএফআইসি ব্যাংক পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও শাখার অফিসার ইনচার্জ পদে কর্মরত আছেন। কর্মক্ষেত্রেও তিনি সুনাম অর্জন করেছেন। ভবিষ্যতে তিনি নিজেকে একজন সৎ ও দক্ষ এবং সুনাগরিক হিসেবে

গড়ে তুলতে এবং দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসে এমন কাজ করতে চান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close