আনিকা তাহসিন নায়েলা

  ২০ জুন, ২০২২

‘আব্বুর কাছে আমিই সেরা’

বাবা, আব্বু, আব্বা। যেই নামেই তাকে ডাকি না কেন, সে আমার ছেলে। একটা বয়সের পর তো বাবা-মায়েরা আমাদের কাছে আমাদের সন্তান হয়ে যায়। বয়স বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নিজের প্রতি অযত্নবান হয়ে ওঠা থেকে শুরু করে নিয়ম করে ওষুধ খেতে ভুলে যাওয়া সব যেন নিত্যদিনের ঘটনা। আমার জীবনে আমার আব্বু কি সেটা হয়তো কোনো দিন বলে বোঝানো যাবে না। আব্বু নামক মানুষটাকে নিজের চোখের সামনে আমাদের জন্য অনেক কষ্ট আর পরিশ্রম করতে দেখেছি।

আমার জীবনে এমন কিছু নেই, যেটা আমি আব্বুর কাছে চেয়ে পাইনি। পছন্দের খাতা, জামা থেকে শুরু করে মনের মতো একজন মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে উপহার দেওয়া, কখনোই আমাকে নিরাশ করেননি আমার আব্বু। কারণ আব্বু থেকে ভালো করে আর আমাকে কেইবা বুঝবে। আব্বুর ভালোবাসা আর বিশ্বাস আমার চলার পাথেয়। আমি জীবনে যেমনই হই না কেন, আমার আব্বুর কাছে আমিই সেরা। সবসময়ই আমার পছন্দ আর মতামতই তার কাছে বেশি প্রাধান্য পায়।

আমার ছোট ভাইয়ের সঙ্গে আমার বয়সের পার্থক্য খুব কম হওয়ায়, সেই ছোটবেলা থেকেই সে বেশির ভাগ সময়টা থাকত মায়ের কাছে আর আমি আব্বুর কাছে। আমার স্কুলে যাওয়া শুরু হয় আব্বুর সাইকেলের সামনে বসে। এরপর ছোট ভাইকে জায়গা দিতে সাইকেলের পেছনের সিটে হলেও আব্বুর সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া, হাত ধরে রাস্তা পার করানো, পরম যত্ন আর ভালোবাসায় আব্বু করেছেন সবই। জীবনের সবচেয়ে বড় নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিয়ে আব্বু যখন আমাকে মেডিকেলে পড়াতে অটল, তখনো বুঝিনি জীবনের কত সুন্দর মুহূর্ত হাতছানি দিয়ে ডাকছে আমাকে। তোমাকে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই আব্বু।

আমার জীবনের প্রায় সবকিছুই বাবাময়। তাই বাবার সঙ্গে স্মৃতি বলে শেষ করা যাবে না। প্রতিদিন যে মানুষটার সঙ্গে নতুন নতুন স্মৃতি হচ্ছে, তাকে নিয়ে লিখাও দুষ্কর। খুব মনে পড়ে ক্লাস থ্রিতে আমি একটা পরীক্ষায় দ্বিতীয় হয়েছিলাম, আব্বু যে কি খুশি হয়েছিলেন তার সে হাসিমুখ আজও আমার চোখে ভাসে। ক্লাস ফাইভের বৃত্তি পরীক্ষা, যতটা না আমার পরীক্ষা, তার চেয়ে বেশি যেন আব্বুর। সারা দিন অফিস করে এসে আমাকে পড়াতে বসাতেন। গণিতের নোটখাতা বানানোর কথা বলতে বলতে আব্বু যখন ক্লান্ত, একসময় নিজেই বসে পড়তেন খাতা বানাতে আর আমার আলসেমির পেনাল্টি দিতে। বৃত্তি পরীক্ষার আগের রাতে তীব্র মাইগ্রেনের ব্যথা নিয়ে আমি যখন অস্থির, আব্বু আম্মু সারা রাত আমার পাশে বসে থেকেছেন। কেউ দুচোখের পাতা এক করতে পারেননি।

দেখতে দেখতে তার ছোট্ট মা আজ অনেক বড় হয়ে গেছে। সে এখন নিজের দায়িত্ব নিজে নিতে পারে। ‘আমার মা সব পারে’- আমাকে নিয়ে বাবার এই গর্ব আমার কাছে পৃথিবীর সেরা অনুপ্রেরণা। আজকে এই লেখায় একটা কথা বলতে চাই, আব্বু তোমাকে কখনো বলা হয়নি কতটা ভালোবাসি। হয়তো তোমাকে অনেক সময় কষ্ট দিয়ে ফেলেছি না বুঝেই। কখনো হয়তো তোমাকে ভুল বুঝেছি, কিন্তু জীবনের এ পর্যায়ে এসে বুঝতে পারছি তুমি কতটা সঠিক ছিলে। সবসময় তোমার কথা মনে পড়ে। তোমার হাতের রান্না করা মাংস খুব মিস করি এখন। তুমি বাসায় ফিরে ‘নায়েলা মণি’ বলে ডাকতে, প্রতি মুহূর্তে এই ডাকের শূন্যতা অনুভব করি। আমিবিহীন ফাঁকা ঘরটায় গিয়ে যে আমাকে তুমি খুঁজো, তা আমি বুঝতে পারি বাবা। চিন্তা করো না, তোমার মেয়েটা অনেক অনেক ভালো আছে।

জেনে না জেনে দেওয়া কষ্টগুলোর জন্য দুঃখিত আব্বু। আমার জীবনের সুপারহিরো তুমি। আমার জন্য দোয়া করো, তোমার দেখানো পথেই যেন আমি হাঁটতে পারি। তোমার সব স্বপ্ন যেন পূরণ করতে পারি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close