সাকিবা আক্তার লাবণ্য

  ২৬ মে, ২০২২

বাকৃবিতে মায়ার চাদরে জড়ানো কৃষ্ণচূড়া

অশোক, পলাশ আর শিমুলের বসন্ত শেষ। গ্রীষ্মের সাজে সেজেছে প্রকৃতি, ফুটেছে রক্তিম কৃষ্ণচূড়া। ‘কৃষ্ণচূড়া রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে/ আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে’- কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই মনোমুগ্ধকর গানে আমরা উপলব্ধি করি কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য। বৈশাখ পেরিয়ে জ্যৈষ্ঠের আকাশে গনগনে সূর্য। কাঠফাটা রোদ্দুরে তপ্ত বাতাস। প্রকৃতি পুড়ছে প্রখর রৌদ্রে। তখনই সবুজ পাতার ডালের ফাঁকে আগুন রাঙা রং জানান দেয় কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্যের বার্তা। গ্রীষ্মের রৌদ্রে পুড়ে যাওয়া নিষ্প্রাণ প্রকৃতিকে রাঙাতে কৃষ্ণচূড়া নিজেকে মেলে ধরেছে আপন মহিমায়। যেন বৈশাখের সবটুকু উত্তাপ গায়ে মেখে কৃষ্ণচূড়ার পসরা সাজিয়েছে প্রকৃতিকে।

গ্রীষ্ম মানেই বাংলা সাজে ভিন্ন সজ্জায়। গ্রীষ্ম মানেই কৃষ্ণচূড়ার রঙে মাতোয়ারা হওয়ার সময়।

লাল টুকটুক কৃষ্ণচূড়ার নয়নাভিরাম সাজে সেজেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। এ যেন কৃষ্ণচূড়ার ক্যাম্পাস। গ্রীষ্মের খরতাপে বাকৃবির মনমাতানো রঙিন এ সৌন্দর্য সবার মনে রক্তিম স্রোত জাগায়। দেখলে মনে হবে লাল রঙের মেলা বসেছে বাকৃবিতে। বিভিন্ন ভবনের সামনে, কেয়ার মার্কেটের সামনে, আবদুল জব্বারের মোড়সহ নানা জায়গায় দেখা দেয় সারি সারি কৃষ্ণচূড়ার গাছ। দেখে মনে হয়, নীল আকাশের বুকে লাল রঙের মূর্ছনা। দূর থেকে দেখলে মনে হয় গাছগুলোতে আগুন লেগেছে। মৃদু বাতাসে কৃষ্ণচূড়ার ডালগুলো যখন দোল খায়, তখন সেই দোল আগুনের স্ফুলিঙ্গের ন্যায় হৃদয়েও দোলা দেয়। কৃষ্ণচূড়ার ঝরে পড়া পাপড়িতে রাস্তার দুই ধারে রক্তলাল পুষ্পশয্যা সৃষ্টি হয়। মনে হয় প্রকৃতি লাল রঙা আল্পনা এঁকেছে পথে। সেই আল্পনা দেখে শিক্ষার্থীদের পথচলা কিছুটা হলেও শ্লথ হয়ে যায়। অথবা শান্তির পরশ বুলিয়ে নিয়ে থমকে দাঁড়ায় গাছের নিচে।

জানা যায়, বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত কৃষ্ণচূড়া আমাদের দেশীয় ফুল নয়। এর আদিবাস পূর্ব আফ্রিকার মাদাগাস্কার। কৃষ্ণচূড়ার বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনি রেজিয়া। এটি ফ্যাবেসি পরিবারের অন্তর্গত একটি বৃক্ষ। কৃষ্ণচূড়ার পাপড়িগুলো প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মতো লম্বা হতে পারে। এটি জটিল পত্র বিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০টি উপপত্র বিশিষ্ট। এটি কোথাও কোথাও গুলমোহর নামেও পরিচিত। আমাদের দেশে লাল ফুল সচারাচর দেখা গেলেও হলুদ রঙের ফুল গুটিকয়েক দেখা যায় আর সাদা কৃষ্ণচূড়ার দেখা নেই বললেই চলে। বাংলাদেশে এই ফুল এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত ফুটলেও অন্যান্য দেশে বিভিন্ন সময়ে ফুটে থাকে।

কৃষ্ণচূড়ার রাঙানো এই দৃশ্য আকৃষ্ট করে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক শিক্ষার্থী সবাইকে। শিক্ষার্থীরা তাদের ক্লাসের পর ক্লান্তির রেশ কাটানোর জন্য ও আড্ডা স্থান হিসেবে বেছে নেয় লাল কৃষ্ণচূড়ার ছায়াচ্ছন্ন তলকে। দর্শানার্থীরা ছুটে আসে বাকৃবির নয়নাভিরাম সৌন্দর্যকে দেখতে। এ ছাড়াও বাকৃবিতে ভ্রমণপিপাসুদেরও থাকে উপচে পড়া ভিড়।

কালের পালাক্রমে কৃষ্ণচূড়া ফুটে আবার প্রকৃতির নিয়মে চলে যায়, কিন্তু বাকৃবিকে আপন মায়ার চাদরে মুড়িয়ে তার নান্দনিক সৌন্দর্য দিয়ে সাজিয়ে তোলে অপরূপ সাজে। যেই সাজ হার মানায় অন্যান্য যেকোনো সৌন্দর্যকে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close