সানজিদা জান্নাত পিংকি

  ২৪ মে, ২০২২

উলুফুলের শুভ্রতায় গবি ক্যাম্পাস

গ্রীষ্মের প্রচন্ড খরতাপে প্রকৃতি যখন পুড়ছে তখন সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয় (গবি) সেজেছে উলুফুলের শুভ্রতায়। চৈত্রের কাঠফাটা রোদ হার মেনেছে সাদার ক্যানভাসে। তীব্র রোদ্রের আলো নয়, চোখধাঁধাচ্ছে উলুফুল। গ্রামণ্ডশহরের মিশ্র পরিবেশে তৈরি সবুজে ঘেরা ৩২ একরের ক্যাম্পাস কাঁপছে শুভ্র উজ্জ্বলতায়। ক্যাম্পাসের সাদায় মায়ায় প্রকৃতি যেন নেমেছে শুদ্ধতার অভিযানে। তাইতো, ক্যাম্পাসের প্রতিটি প্রাণে লাগে পবিত্রতার ছোঁয়া। বাতাসে যখন উলুফুলগুলো দুলে তখন মনে হয় হাসছে ক্যাম্পাস, প্রকৃতি আর হৃদয়ের গহীন কোণ। শুভ্র সেই হাসিতে যেন মুক্তা ছড়াচ্ছে আকাশ, বাতাস, প্রাণের ক্যাম্পাস।

বছরের ছয়টি ঋতুতেই ফুলে ফুলে সুশোভিত থাকে নিম্ন মধ্যবিত্তের এ বিদ্যাপীঠ। প্রকৃতির পালাবদলে রং-বেরঙের এসব ফুল দ্যুতি ছড়ায় প্রতিটি দিনই। হৃদয়কাড়া এ সৌন্দর্যের মুগ্ধতায় আর স্নিগ্ধতায় ভরে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রবেশদ্বার, অ্যাকাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, খেলার মাঠ, বিভিন্ন চত্বর। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেট পেরোতেই রক্তিম অভ্যর্থনা জানাবে আগুনঝরানো কৃষ্ণচূড়া। নিচে পড়ে থাকা ফুলের পাঁপড়িগুলো যেন সৃষ্টি করে লাল গালিচা। শুরুতেই গ্রীষ্মের তাপ হার মানে উষ্ণ অভ্যর্থনায়। তারপর প্রশাসনিক ভবন থেকে অ্যাকাডেমিক ভবন পর্যন্ত দুই ধারে লাগানো গাঁদা, ডালিয়া, কসমস, চামেলি, কামিনী, নয়ন তারা, বেলি, বকুল, মোরগজুটি, পাতাবাহার ইত্যাদি সবাইকে নিয়ে যাবে কোনো এক ফুলের রাজ্যে। বিভিন্ন চত্বর ও গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোগুলোর আশপাশে লাগানো হরেক রকমের ফুল মন মাতিয়ে রাখে প্রতিটি প্রাণকেই। তবে শুভ্রতায় শোভিত করে ওই উলুফুলই। কেননা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল বড় দুটি খেলার মাঠের পুরোটা জায়গা সাদায় মাতিয়ে রেখেছে উলুফুল। অযত্নে থাকা ফুলগুলো যেন আপন মনে গড়ে নিয়েছে নিজের সাম্রাজ্য। বেলা-অবেলায় মৃদু কিংবা ঝড়ো হাওয়ায় সেই ফুল যখন দোল খায়। সামনে থেকে দেখতে মনে হয় এক সাদা সমুদ্রের ঢেউ বয়ে চলেছে। প্রায় শত শতাংশের মাঠটি হয়ে উঠেছে আরেক দর্শনীয় স্থান। ফুল নিয়ে খুনসুটিতে মেতে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। কেউ কেউ পাশে বসে আড্ডাও দেন। তবে ফুল মাড়ান না কেউই। বিজ্ঞান বলছে, উলুঘাস থেকে উলুফুলের জন্ম। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন ‘ইমপেরেটা সিলিন্ড্রিকা’। দেখতে কাশফুলের মতো হলেও আকারে মাটি ছুঁইছুঁই। সর্বোচ্চ উচ্চতা ২ ফুট। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শ্রাবনী আজাদ কনা বলেন, রোদ পড়লে এখানে এসে বসি। সাদা ফুলে যেন চোখ জুড়িয়ে যায়। হুহু করে যখন বাতাস ছোটে তখন ফুল দেখতে অসাধারণ লাগে। অথচ এই ফুল কিন্তু আপনা-আপনিই হয়। ক্ষণিকের অতিথির মতো। বৃষ্টি হলেই মরে যাবে। আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, এই ফুলকে ঠিক ফুল বলা যায় কি না। তবে আমাদের মাঠজুড়ে এখন এই ফুলেরই রাজত্ব। বাতাসে যখন ফুলগুলো দোলতে থাকে তখন মনে হয় সমুদ্রের ঢেউ। যা একটি অন্যরকম পরিবেশ তৈরি করে। অনাদরে আপনা-আপনি গজিয়ে ওঠা এই ফুলের কদর রয়েছে পাহাড়ি অঞ্চলে। এই ফুল থেকে ঝাড়ু বানিয়ে আর্থিক অনটন দূর করেন অনেকেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে উলুফুলের কদর তেমন নেই বললেই চলে। ফলে প্রতি বছরের এক থেকে দেড় মাস রাজত্ব গড়তে পারলেও এর বিদায় ঘটে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাঁচির আঘাতে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে কেটে ফেলা হবে সব উলুফুল। এরপর আরেক গ্রীষ্মের অপেক্ষা। শুভ্র উলুফুলে পরিশুদ্ধ মন গড়তে পরের বছর আবার আগমন ঘটবে! তত দিন না হয় বিশ্ববিদ্যালয় মাতবে কৃষ্ণচূড়া, পলাশ, বকুল, গাঁদা, কদম, কাঁশফুল কিংবা গোলাপে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close