ইসরাত জাহান

  ২৩ মে, ২০২২

লাল আভায় মেতেছে বাকৃবি

বাংলার প্রকৃতি এখন আগুনঝরা। সময়টাই কাঠফাটা রোদ্দুর আর উষ্ণতাপের। কিন্তু এই তীব্র তাপ, রোদ্দুর, ঘামের কড়া গন্ধ নিমিষেই ছোট্ট একটি স্বপ্নের দেশে চলে যায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষ্ণচূড়া রাস্তায় পা বাড়ালে। আবছা স্বপ্নে যেমন দেখা যায় পাপড়ির ভারে চাপা পড়ে গেছে ব্যস্ত সব পথ। হালকা হাওয়ার দুলে যাওয়া পাপড়ি তার রঙে রাঙিয়ে দিয়েছে পুরো পথটাকে। ঠিক তেমনি এক স্বপ্নের রাজ্যই যেন রূপকথা থেকে ওঠে এসেছে বাকৃবিতে। জায়গা করে নিয়েছে বাকৃবির কৃষ্ণচূড়া রোডে।

করোনা মহামারির পরের এই সময়কালের পুরোটা পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন বাকৃবি শিক্ষার্থীরা। এখন পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীদের একটুখানি স্নিগ্ধ অবসর দিতেই যেন আবির্ভাব হয়েছে এই লাল আভা। গ্রীষ্মের তীব্র রোদে যেখানে প্রায় সব ফুল মৃত্যুপথে সেখানে কিছুটা পরিকল্পনা করেই হয়তো কৃষ্ণচূড়া এই সময়কে বেছে নিয়েছে বাকৃবিতে নিজের আবির্ভাব ঘটানোর। এই অকৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা না করে সত্যিই থাকতে পারবে না কেউ। ঈদের ছুটি শেষে প্রিয় ক্যাম্পাসে ফিরতেই যেন সাদরে অভ্যর্থনা পেয়ে গেল প্রত্যেকে। কী চমৎকার রূপ মাধুর্যে সেজে উঠেছে আমাদের দৈনিক চলার পথটি! দূর-দূরান্তের যানবাহন পার করে আসার ধকল এক নিমিষেই কাটিয়ে দেয় এই রাস্তাটি।

রাস্তার পাশ ধরে সারি সারি দাঁড়িয়ে কৃষ্ণচূড়ার গাছগুলো যেন বাকৃবির সাজানো এক প্রবেশদ্বার নির্মাণ করেছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় আগুন জ্বলছে গ্রীষ্মের দাবদহে। শাখায় শাখায় অগ্নি ফুলকি দুলছে হাওয়ার তালে। এই বুঝি ছুটে এসে পুড়িয়ে ছাড়খাড় করে দিয়ে যাবে সবকিছু। কিন্তু কাছে গেলে তার ভাবমূর্তি একেবারেই উল্টোটি। তার শীতল ছায়া আরো বেশি কোমল হয়ে যায় খালি পায়ে যখন পাপড়ির ছোঁয়া লাগে। গ্রীষ্মের এক একটি উষ্ণ হাওয়ার দল আসে আর ঝরিয়ে দিয়ে যায় এক একটি পাপড়ি। চিরল সবুজ পাতার শাখা থেকে মাটিতে এসে পৌঁছাতে কী জানি কত কী ভেবে নেয় সে। আপন মনে লাল আলোর চমক দিয়ে সে তার বাসস্থান করে নেয় মাটিতেই। আর এই অপরূপ দৃশ্যের দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে পুরো বাকৃবি। থমকে যায় চার পাপড়ির গতিতে।

লাল রঙের এই উজ্জ্বল আলোর ছটা নিয়ে বাকৃবি শিক্ষার্থী অভিমত কিছুটা এমন- লাল রং হলো ভালোবাসার রং। কৃষ্ণচূড়ার এই লাল রং আমাকে মুগ্ধ করেছে আরো বেশি। বিকালে যখনই হাঁটতে বের হই মন চায় শুধু হাঁটতেই থাকি এই রাস্তা ধরে। সারা দিনের ক্লান্তি দূর হয় এখানে এসেই। প্রকৃতি সারা বছর চিরল পাতার সঙ্গে যদি ফুলগুলোও রেখে দিত তাহলে সব মানসিক শান্তির উৎস হয়তো এখানেই থাকত।

কৃষ্ণচূড়া ফুটছে, ঝরছে আর তার ভার জমাচ্ছে পথে। ফুরানোর নয় তার এই সৌন্দর্য। নতুন করে সবাইকে প্রিয় ক্যাম্পাসের প্রেমে জড়িয়ে নিচ্ছে এই রক্তিম আভা। এ যেন বাকৃবির বুকে অগ্নিপুষ্পকর্ণ। মঞ্জুরিতে মঞ্জুরিতে মেখে রেখেছে ভালোবাসায় আহ্বান, রেখেছে মুগ্ধতার আহ্বান। তাইতো এই লাল চত্বরে বারবার ফিরে আসছে সবার মুগ্ধপ্রাণ। সৌন্দর্য কাতর দৃষ্টির তৃষ্ণা মিটছে না কিছুতেই। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার কবিতায় বলেছেন- ‘কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরী কর্নে-আমি ভূবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বণে’। তার এমন পঙ্ক্তি দিয়েই বোঝা যায় কতটা সৌন্দর্য কৃষ্ণচূড়া প্রকৃতিকে দান করেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close