মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ

  ২২ মে, ২০২২

ঈদ শেষে ক্যাম্পাসে...

করোনাকালীন ঈদ শেষে প্রায় দুই বছর পর মুসলমানরা ঈদ উৎসব পালন করেছে। দীর্ঘ সিয়াম সাধনার পর স্বাভাবিকভাবেই এই উৎসবে সবার আগ্রহ ছিল বেশি। আর যেহেতু ঈদুল ফিতর আমাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব, তাই এই ঈদ নিয়ে তারুণ্যের উৎসাহ-উদ্দীপনাও বেশি। যার প্রভাব পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের আনন্দেও। নানা আয়োজন, কার্যক্রম ও ঘোরাঘুরির মধ্য দিয়ে কেটেছে তারুণ্যের এবারের ঈদ। ঈদের ছুটি শেষে শিক্ষার্থীরা ফিরেছেন স্কুল-কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ে।

ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব ধরনের শিাপ্রতিষ্ঠানই ৮ মে থেকে খুলেছে। এদিন সকাল থেকেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক পাঠদান শুরু হয়েছে। পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে স্কুল-কলেজে ১৭ দিন ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৪ দিনের ছুটি ছিল। স্কুল-কলেজে গত ২১ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে ৭ মে পর্যন্ত বন্ধ ছিল শ্রেণি কার্যক্রম। অন্যদিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ছিল ১৪ দিন। এসব প্রতিষ্ঠানে ২৪ এপ্রিল থেকে ৭ মে পর্যন্ত ছিল ঈদের ছুটি। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও খুলেছে।

কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের সেশনজট নিরসনকল্পে ‘মে দিবস’, ‘শবেকদর’, ‘জুমাতুল বিদা’ এবং ঈদুল ফিতরের ছুটি বহাল রেখে ২৭ এপ্রিল থেকে ৭ মে পর্যন্ত মোট ১১ দিন গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষে ক্যাম্পাসে ফিরেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

প্রতি বছর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দু-একটি বিভাগ ছাড়া সব বিভাগ রমজানের শুরুতে বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু করোনার কারণে সৃষ্ট শিক্ষা ঘাটতি পুষিয়ে নিতে ২২ রোজা অর্থাৎ ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত ক্যাম্পাস খোলা ছিল। বিভিন্ন বিভাগে ছিল পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট ও প্রেজেন্টেশন। এবার জবিতে ঈদের ও অন্যান্য ছুটি শুরু হয় ২৫ এপ্রিল থেকে, যা শেষ হয় ৭ মে। ক্লাস শুরু হয় ৮ মে থেকে। আর তাই ঈদের আমেজ কাটতে না কাটতেই স্বজনদের ছেড়ে ক্যাম্পাসে ফিরতে শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে প্রথম দিন ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের এত আনাগোনা দেখা যায়নি। ৮ মে থেকে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হলেও ৭ মে খোলা হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ছাত্রী হল। এ দিন থেকেই ছাত্রীরা হলে প্রবেশ করা শুরু করে।

কলা অনুষদ, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগসহ অনেক বিভাগেই পরীক্ষা ছিল রমজানে। প্রায় সবগুলো বিভাগেই এখন সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা বাকি রয়েছে। এরই মধ্যে অনেক বিভাগে মিডটার্ম পরীক্ষা শেষ হলেও অনেক বিভাগের ল্যাব ও প্রেজেন্টেশন বাকি রয়েছে। বেশির ভাগ অনুষদের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা এ মাসের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হবে। সেজন্য বেশির ভাগ বিভাগ রমজানেই সেমিস্টারের ক্লাস শেষ করেছে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, ঈদের ছুটি শেষ হলেও আমেজ এখনো কাটেনি। পরিবার, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে কিছু সময় পার করতে পেরে খুশি তারা। আগে ফিরে আসায় মেসের বন্ধুদের সঙ্গেও ঈদের আনন্দটা ভাগ করতে পেরেছেন। সব মিলিয়ে ভালোই লাগছে তাদের।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ২৪ এপ্রিল থেকে ঈদুল ফিতর ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি শুরু হয়, চলে ১৪ মে পর্যন্ত। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি ও ছুটি কাটাতে ২৩ এপ্রিল থেকেই অনেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেন। তবে ঈদেও জাবিতে হল খোলা থাকে। এবারে ঈদ ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি মিলে শিক্ষার্থীরা মোট ২২ দিনের ছুটি পেয়েছে জাবি শিক্ষার্থীরা। ঈদ আনন্দ শেষে পুনরায় ক্যাম্পাসেও ফিরতে শুরু করেন তারা।

ঈদের ছুটি শেষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক হল ৮ মে সকাল ১০টায় হল খোলা হয়। এছাড়া এদিন থেকেই শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অফিশিয়াল কার্যক্রম। হল খুললেও বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে ১২ মে পর্যন্ত। ১৫ মে থেকে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়।

পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতরের দীর্ঘ ছুটি শেষে ১৬ মে থেকে শুরু হয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক কার্যক্রম। এরই মধ্যে ছুটি কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরতে শুরু করেছেন অনেক শিক্ষার্থী।

ঈদের ছুটি কাটিয়ে ক্যাম্পাসে ফেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, ঈদ পরবর্তী ক্যাম্পাস এখন অনেকটাই ফাঁকা। ধীরে ধীরে সবাই ক্যাম্পাসে আসছে। এক দিন আগেও একা ছিলাম অথচ এরই মধ্যে অনেকে চলে এসেছে। সবার সঙ্গে আবার আড্ডা দিচ্ছি, গল্প করছি।

এদিকে ঈদের ছুটি শেষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আবাসিক হলগুলো বৃহস্পতিবার খুলে দেওয়া হয়েছে। এদিন সকাল ১০টা থেকে আবাসিক হলে উঠছেন শিক্ষার্থীরা। তবে একাডেমিক ও অফিস কার্যক্রম পুরোদমে চলে ১৪ মে থেকে। এদিকে অনেকের ক্লাস-পরীক্ষা থাকায় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী এরই মধ্যে ক্যাম্পাসে ফিরতে শুরু করেছেন। তারা ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী ও দুই জেলা শহরের মেসগুলোয় অবস্থান করছিলেন। হলের সামনে শিক্ষার্থীদের ভিড়। অনেকে ব্যাগ-ব্যাগেজ নিয়ে হলের গেটে অপেক্ষা করছেন। কেউ আবার গেট দিয়ে হলে প্রবেশ করছেন।

দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) ২২ এপ্রিল থেকে ঈদের ছুটি শুরু হয়। শেষ হয় ৮ মে। তবে এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো খোলা থাকে। ছুটি চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস বন্ধ থাকে। করোনা মহামারি কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের বেশ ক্ষতি হয়েছে। তারা যেন দ্রুত সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারেন সেজন্য ছয় মাসে এক সেমিস্টারের পরিবর্তে চার মাসে এক সেমিস্টার শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সে অনুযায়ী ২১ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা চলমান ছিল। পরে ২২ এপ্রিল থেকে মে দিবস, শবে কদর, জুমাতুল বিদা ও পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৮ মে পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়।

ঈদের ছুটি শেষে খুলেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)। ৭ মে থেকে প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে ক্লাস-পরীক্ষা ১০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়। ছাত্র-ছাত্রীদের দুটি আবাসিক হল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল এবং শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল খুলে দেওয়া হয়েছে। ছাত্রদের শহীদ মুখতার এলাহী আবাসিক হলটিও খুলে দেওয়া হয়।

ঈদের ছুটি শেষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে যেন পুরোনো আমেজ ফিরে এসেছে। ক্যাম্পাসে সবাই মেতে উঠেছে গান-আড্ডায়। কেউ বা ব্যস্ত ক্লাস, পরীক্ষা কিংবা প্রেজেন্টেশন নিয়ে। তথা ঈদ শেষে শিক্ষার্থীদের পদচারণায় আবারও প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close