নাজমুন নাহার মুনা

  ১৭ মে, ২০২২

তারুণ্যের বৈশাখ উদ্‌যাপন

এসো হে বৈশাখ, এসো এসো। কবিগুরুর এই শুভ প্রত্যয় ঘিরেই বাঙালি জাতি ঘরে ঘরে নববর্ষ বরণ করে নিতে উন্মুখ। ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’ চিরায়ত বাঙালির জীবনে নতুন সম্ভাবনা বয়ে আনবে নতুন বছর- এমনটিই প্রত্যাশা করে সবাই। করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ দুই বছর পর বাঙালি জাতি পূর্ণোদ্যমে বৈশাখ উদযাপন করেছে। পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতে পেরে তরুণ প্রজন্মসহ সবাই খুবই আনন্দিত। এটি বাঙালির সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের অংশ।

নববর্ষ আমাদের জীবনে আসে নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনা নিয়ে। পুরোনো বছরের সব ব্যর্থতা, নৈরাশ্য ও জরাজীর্ণতা ভুলে নতুন বছরকে স্বাগত জানাই। মূলত পহেলা বৈশাখ, এই শব্দ দুটো শুনলেই আবেগাপ্লুত হয়ে যাই আমরা। বর্তমান সময়ে তরুণ প্রজন্মের কাছে বৈশাখ মানে শুধু বিশেষ একটি দিন। নববর্ষ হলো বাঙালির সহস্র বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য, রীতিনীতি, প্রথা, আচার-অনুষ্ঠান ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। তবে আমরা জানি, প্রতি বছর জাঁকজমকভাবে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা হলেও এবার তার ব্যতিক্রম দেখা যাবে। কারণ রমজান মাস চলছে। বিদায়ি বছরের দুঃখণ্ডবেদনা, নৈরাশ্য, স্বজনহারা আর্তনাদ, স্থবিরতার, হতাশা ও বঞ্চনা পেছনে ফেলে ভালো কিছু প্রাপ্তির স্বপ্ন নিয়ে মানুষ বরণ করে নেবে নতুন বছরকে। আমাদের সমাজে নববর্ষকে কেন্দ্র করে অশালীন ও আপত্তিকর কিছু চিত্র সামনে আসে; যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ থেকে বিরত থাকতে হবে সমাজকে।

করোনা মহামারির আগের মতোই নববর্ষের আনন্দ উদযাপন করেছেন সর্বস্তরের মানুষ, যার অগ্র ভাগই তরুণ। পুরুষরা পাজামা-পাঞ্জাবি, নারীরা শাড়ি আর উজ্জ্বল পোশাকে, শিশুরা আবারও রমনা বটমূলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। ছায়ানটের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বহু পুরোনো চেনা গান ‘এসো হে বৈশাখ’ গেয়ে বাঙালি বরণ করে নেয় বাংলা নতুন বছর। ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলায় দীর্ঘদিন পর মানুষ ভিড় জমায়, কিনেন ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প, খেলনাসহ নানা জিনিসপত্র। ঢাকাসহ পুরো দেশে বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপনের এ এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। দীর্ঘ সময় পর তরুণরা বাংলা নববর্ষ উদুযাপন করতে আনন্দে আবেগাপ্লুত।

বাংলা নববর্ষে অতীতের কথা ভুলে গিয়ে তরুণরাই নতুনের আহ্বানে সঞ্জীবিত হয়ে উঠে। কিছু অসত্য, অসুন্দর, অশুভ আর অমঙ্গলজনক সেসবকে ঝেড়ে ফেলে সত্য, সুন্দর, ভালো আর মঙ্গলের জন্য অপেক্ষমাণ সবাই। দেশের মোট জনসংখ্যার বিরাট একটি অংশ তরুণ। তারুণাই একটি দেশের এগিয়ে যাওয়ার বিশাল শক্তি। নববর্ষকে কেন্দ্র করে তরুণ প্রজন্মের মনে থাকে নানা প্রত্যাশা, নানা চিন্তাভাবনা।

তরুণ সমাজের নববর্ষের শুরু হয় উদ্ভাবনীমূলক কর্মপরিকল্পনা নিয়ে। প্রত্যেকের ভালো পরিকল্পনাগুলো সম্পন্ন করার প্রত্যয় নিয়ে নতুন বছর শুরু হয়। দেশের সামগ্রিক উন্নতিতেই তরুণদের এই শক্তিই মূল চালিকাশক্তি। বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্যকে আগামীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজে তরুণদেরই এগিয়ে আসতে হবে। অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, স্বৈরাচারিতা, অন্যায় ও অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে উঠতে হবে তরুণ প্রজন্মকে। নতুন বছরের প্রতিটি দিন, প্রতিটি ক্ষণ সব ধরনের অশুভ শক্তিকে বিনাশ করে সবার জন্য মঙ্গলবার্তা বয়ে আনুক। প্রত্যাশা নতুন বছর সবার জন্য সুখ ও সৌভাগ্য বহন করে আনবে।

পহেলা বৈশাখ উদযাপন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিদ্দিক ফারুক বলেন, ঋতু পরিক্রমায় পুরোনো বছর শেষ হয়ে যায়। সেই সঙ্গে শেষ হয় বিগত দিনের জীর্ণতা ও ক্লান্তি। চৈত্রের শেষে আসে পহেলা বৈশাখ। আসে নববর্ষের শুভ লক্ষণ আমাদের জাতীয় জীবনে আসে উৎসবের আমেজ। এ উৎসবের মর্মবাণী হলো নতুন বছরে আমার আনন্দটুকু হোক সবার আনন্দ।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিথিলা দেবনাথ ঝিলিক নববর্ষের অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, প্রায় দুই বছর পর ক্যাম্পাসে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করেছি। অনেক ভালো লেগেছে। আশা করছি আগামী দিনগুলোতেও এ উদযাপন অব্যাহত থাকবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমন ইসলাম বলেন, নতুন বছরে দেশের প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে সুখণ্ডসমৃদ্বিতে ভরে উঠুক, দেশ ও জাতির সুনাম আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে আরো সুনাম লাভ করুক- প্রত্যাশা আমাদের। নিজের সংস্কৃতিকে উপলব্ধি করা এবং চর্চা করা যেকোনো জাতির জন্যই গৌরবের। এ জাতি তার দেশকে ভালোবাসে, ভালোবাসে তার সংস্কৃতিকে, অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ নববর্ষ বরণ বাঙালি জাতিসত্তাকে উজ্জ্বল করে। সবকিছুর বিনিময়ে হলেও এ জাতি তার স্বাধীনতা রক্ষা করবে, রক্ষা করবে প্রাণের চেয়েও প্রিয় এ ভাষা, হাজার বছরের সংস্কৃতি, বাঙালি জাতি গানে-কবিতায়, নানা লোকাচারে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অতীত থেকেই বয়ে চলেছে নববর্ষের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব। আমরা উৎসবের দিন বছরের সাধারণ দিনগুলোর চেয়ে একটু অসাধারণ করে তুলি। উৎসব এভাবেই মানবজীবনে বেঁচে থাকার সত্যকে অর্থবহ করে তোলে। আমাদের বাংলা নববর্ষ ঠিক যেন জাতি গোষ্ঠির শেকড় সন্ধানী এক অনুপ্রেরণা। বাঙালির পথচলায় নববর্ষ বাতিঘর। বিভ্রান্তির জাঁতাকলে পিষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই বাঙালির। অমোঘ শক্তির দীপ্তি তার মাথার ওপর ছায়া হয়ে আছে। বাংলা নববর্ষের উৎসব আছে বলেই বাঙালির পরাজয় নেই।

ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোছা. জান্নাতী বেগম বলেন, বাংলা নববর্ষ বাঙালির জীবনে আসে নানা অনুষ্ঠানের মালা সাজিয়ে। পহেলা বৈশাখ শুভ দিনটিতে বাঙালির ঘরে ঘরে আসে নতুন আনন্দ, নতুন উদ্দীপনায়। ঘরদোর সাজানো হয় নতুন করে। উপহার পাওয়া নতুন পোশাকে সাজে অনেকেই। পারস্পরিক শুভকামনা

বিনিময় হয় আলিঙ্গনে। নববর্ষের আনন্দ ছড়িয়ে যাক সবার মাঝে এটাই প্রত্যাশা।

নববর্ষে আমাদের জীবন কল্যাণের প্রাচুর্যে ভরে উঠুক। শান্তিময় হয়ে উঠুক দেশ ও জাতি। সর্বোপরি অন্যায়, অবিচার, সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত একটা সমৃদ্ধশালী উন্নয়নশীল সমাজ ও জাতি চাই। পহেলা বৈশাখ সবার জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি বয়ে আনবে- এমনটাই প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close