reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১২ মে, ২০২২

পড়াশোনার পাশাপাশি আয়

তারা পড়াশোনা করে। পাশাপাশি শৌখিন কাজ করে। এই কাজের মাধ্যমে হাত খরচের টাকা আয় করে। এতে পড়াশোনার কোনো বিঘ্ন ঘটে না। উপরন্তু শৌখিন কাজে দক্ষতা অর্জন করতে পারে। এ রকম সফল দুই সৃজনশীল তরুণীর কথা জানাচ্ছেন মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

ইতি আক্তার মানছুরা

তখন করোনাকাল। মানুষজন প্রায় ঘর বন্দি। তার কলেজও বন্ধ। তিনি রং তুলি নিয়ে বসলেন। একের পর এক ছবি আঁকলেন। ফেসবুকে সে ছবি পোস্ট দিলেন। ওমনি অনেক মানুষ ছবিগুলো পছন্দ করে। কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করে। তিনিও না করেননি। এখন ছবি আঁকা থেকে তার মাসিক আয় আট থেকে দশ হাজার টাকা। সফল এই শিল্পীর নাম ইতি আক্তার মানছুরা। রাজাবাড়ি, শ্রীপুর, গাজিপুরে থাকেন।

অনার্স প্রথম বষে পড়েন তিনি। পাশাপাশি আর্ট, ডিজাইন তৈরি, হ্যান্ড প্রিন্ট নিয়ে তার কাজ। ২০২১ সালের ১২ জানুয়ারি তার ডিজাইন বিক্রি হয়। তখন তিনি তিনশ টাকা পেয়েছিলেন। আঁকাআকির প্র্রতি তার ঝোক ছোটবেলা থেকেই। ্ইতি বলেন, স্কুলে আমি আর্ট করার জন্য ফেমাস ছিলাম। আর্টে প্র্রথম পুরষ্কারটি আমিই পেতাম।

প্রত্যন্ত গ্রামে ইতি থাকেন। সেখানে জলরং পাওয়া যায় না। অনলাইনে রং সহ অনান্য সরঞ্জাম কিনতে হয় তাকে। ছবি একে বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট দেন। সেখান থেকে একজন তাঁর ছবি পছন্দ করে। ইতি বলেন, প্রায় এক বছর ধরে আমি তার ডিজাইন তৈরি করার কাজ করছি। ফেসবুকে ইতির পেইজ EM_Artist। তিনি জানান মাসিক আয় আট থেকে দশ হাজার টাকা। নারী উদ্যোক্তাদের সমস্য সর্ম্পকে ইতি বলেন, বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন সময় বাহিরে যেতে হয়। এ সময় পরিবারের সার্পোট পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। মানুষ বলতো, এত বাহিরে যেতে হবে কেন! এইসব কাজ করতে হবে কেন। অনেক সময় বাবা রাগও করতো আমার ওপর। তবে মা আমাকে অনেক টা সাপোর্ট করে।

ইতি মনে করেন, নিজের প্রতি অটুট বিশ্বাস ও আস্থা থাকতে হবে। তাহলে অন্য নারীরা এ ধরনের কাজ করে হাত খরচের টাকা সংগ্রহ করতে পারে। সমস্যা থাকবে তার সমাধান নিজেকেই খুঁজে নিতে হবে। ইতির জনপ্রিয় দুটি ছবির একটি হলো দ্যা ডোম অব দ্যা রক। অন্যটি চাঁদের আলো।

ইহুদিরা যখন মসজিদুল আল-আকসা আক্রমন করে। তখন ইতির খুব মন খারাপ হয়। তখন ব্যতিক্রমী কিছু একটা করার কথা ভাবেন। মাটি দিয়ে ‘দ্য ডোম অব দ্যা রক’ তৈরি করেন। ‘দ্য ডোম অব দ্যা রক’ এর জন্য তিনি একটি প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান পেয়েছেন।

ময়ূরের পালক দিয়ে কলম, ওয়ালমেট, হাতে বানানো ডায়েরি, মান্ডালা, পাথর আর্ট, মাটি দিয়ে সাকুলেন্টে বাড়ি তৈরি করেন তিনি। এগুলোর চাহিদা আছে বলে তিনি জানান। পাশপাশি হ্যান্ড প্রিন্ট শাড়ি, পাঞ্জাবি, টি-শার্টে আর্ট করেন। কয়েকটা ওয়াল পেইন্টিংও করেছেন। তার আরবি ক্যালিগ্রাফির জনপ্রিয়তা বেশ ভালোই। যারা গাজীপুরের মধ্যে থাকেন। তারা বাসায় এসে ছবি নিয়ে যান। অন্যদের কুরিয়ারে পাঠান বলে ইতি জানান। ভবিষ্যতে তিনি একজন ডিজাইনার হতে চান।

সুমাইয়া ইসলাম ইভা

অনলাইন থেকে একটা স্ক্রাপবুক ক্রয় করেন। মানুষ স্ক্রাপবুক বা এলবাম বানিয়ে নেয় স্মৃতিগুলোকে স্থায়ী করার জন্য। অথচ স্ক্রাপবুক ধরতেই কাগজ খুলে যাচ্ছিলো। তিনি ভাবলেন কাগজ দিয়েই তো বানানো। দেখি না চেষ্টা করে। বড় আপুর মাধ্যমে ক্রাফটিং এর জিনিস আনালেন। নিজেই তৈরি করলেন স্ক্রাপবুক। মানুষজন তা খুব পছন্দও করলো। শখের কাজে এই সফলতার গল্প যার তার নাম সুমাইয়া ইসলাম ইভা? মাদ্রাসা লাইনে দাখিল পাশ করেছেন ২০২১ সালে। এখন কলেজে পড়েন। তবে কাগজ দিয়ে তার কাজের শুরু ২০২১ সালে। ফেসবুকে তার পেইজের নাম Unique Gift Corner। এখানে গেলে তার কাজ দেখা যায়। অর্ডারও করা যায়। স্ক্রাপবুক, কার্ড, ঈদ কার্ড, এনিভার্সেরি কার্ড, ওয়েডিং কার্ড, এনভেলোপ, বক্স ইত্যাদি তিনি তৈরি করেছেন। শখের কাজে হাত খরচের টাকা তার আয় হয়।

কাজ সর্ম্পকে ইভা বলেন, আমার কাজে মা, বড় আপু সাহায্য করেন। আমার পুরোনো কিছু ক্লায়েন্ট আছে যারা সব সময় আমার থেকেই নেয়। তারা আমার অনুপ্রেরণা। তারা আমার কাজ এ ভরসা রাখে। আমার কাজ তাদের পছন্দ। ২০১৯ সালে থেকে পেইটিং এর কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি তার করা ক্যালিগ্রাফিও প্রচুর জনপ্রিয়। বিক্রিও ভালো।

পড়াশোনা এবং শখের কাজ। দুটো এক সাথে করতে সমস্যা হয় না? এমন প্রশ্নে ইভা বলেন, পড়াশোনার ফাঁকে অবসরে শখের কাজ করি। তবে শখের কাজের চাহিদা যদি অনেক হয়। তখন এটাকে পেশা হিসাবে নেওয়ার কথা ভাববো।

কাজের ব্যাপারে ইভা খুব আন্তরিক। এমনও হয়েছে। প্রথমবার করার পর কাজ পছন্দ হয়নি। তখন তিনি সেটা আবার নতুন করে করেছেন। ক্যালিগ্রাফি নিয়ে তার কাজ করার ইচ্ছা আছে। এ জন্য ক্যালিগ্রাফির কিংবদন্তি মাহবুব মুর্শিদের প্রশিক্ষণ নিতে চান বলে জানান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close