এস এম রায়হানুল নবী
সিকৃবিতে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে শীত
‘শীতের হাওয়ার লাগল নাচন আমলকীর এই ডালে ডালে। পাতাগুলি শিরশিরিয়ে ঝরিয়ে দিল তালে তালে।’ হ্যাঁ, প্রকৃতিতে সত্যিই শীতের মাতম চলছে। তবে কবির কল্পনার মতো এত সহজেই শীত আসেনি। সময়ের পরিক্রমায় শীত এসেছে পাঁচ ঋতু অর্থাৎ ১০ মাসের বিরতির পর। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি) ক্যাম্পাসে এখন যেন ভরা শীতকাল।
প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি এখানকার অধিবাসীদের অকৃত্রিম ভালোবাসা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আধুনিক গ্রামে পরিণত করেছে। তাই সিকৃবিতে শীতের আগমন কোনোভাবেই গ্রাম থেকে আলাদা নয়।
সবুজের নৈসর্গিক শোভামণ্ডিত সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শীত আসে চিরচেনা রূপের বাইরে আরো কিছু মুগ্ধতা নিয়ে। আসে অনবদ্য কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে। এবারও ক্যাম্পাসে শীতের যে বর্ণিল রূপ তাতে একটুও ছেদ পড়েনি।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃতি ও পরিবেশ অনেকটাই গ্রামীণ আবহে তৈরি। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশ দিয়ে রয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য টিলা। গ্রামের শীতের আমেজ পেতে ঘুরে আসা যেতে পারে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
শীতের আগমন টের পাওয়া যায় গোধূলির সোনালি সূর্য অস্ত যাওয়ার আগেই ঘন কুয়াশার চাদরে আঁকড়ে ধরা প্রকৃতির দিকে তাকালে। হাড়ে কাঁপন ধরানো হিমেল বাতাসে ক্যাম্পাসে সবার গায়েই এখন শীতের গরম কাপড়।
ভেটেরিনারি অনুষদের ছাত্র জুয়েল রানা বলেন, চারদিকের টিলা আর অরণ্য ঘেরা ক্যাম্পাসে শীতের সময়টা অন্য রকম অনভূতির জন্ম দেয়। সবকিছুকেই যেন শীতের কুয়াশা তার বিশাল চাঁদর দিয়ে ঢেকে এক মায়াবী হাতছানির সৃষ্টি করে। সকালে শিশির ভেজা রাস্তা মাড়িয়ে গরম কাপড় জড়িয়ে ক্লাস করতে যাওয়াটা আমার কাছে বেশ উপভোগ্য। বন্ধুদের সঙ্গে চায়ের আড্ডা বেশ জমে।
ভেটেরিনারি অনুষদের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ডা. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ক্যাম্পাসে শীতের পরিবেশ বেশ উপভোগ করি। রাস্তার দুই পাশের ফুলগাছ আর লেক ভরা লাল শাপলা আমাকে খুব মুগ্ধ করে।
সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ক্যাম্পাসের পিঠা। দুপুরের পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এসব দোকানে পাওয়া যায় শীতের বিভিন্ন রকম পিঠা। এসবের স্বাদ নিতে সারাক্ষণ দোকানগুলোতে ভিড় লেগেই থাকে।
শীতের রুক্ষ আর শুষ্ক প্রকৃতি নাকি রং-রূপহীন। অথচ এ ক্যাম্পাসে রূপণ্ডলাবণ্যের কোনো ঘাটতি হয় না কখনোই। শীতে ক্যাম্পাসের প্রকৃতি ও পরিবেশ সেজে ওঠে অন্য রকম সাজে। প্রতিটি রাস্তার দুই পাশ ভরে উঠেছে ফুলে ফুলে। লেকগুলোও ভরে উঠেছে লাল শাপলায়। বিভিন্ন হলের সামনে তৈরি করা হয়েছে ব্যাডমিন্টন খেলার কোর্ট। বিকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে খেলা। সন্ধ্যা হলেই হলের গেম রুমে সময় কাটান অনেক শিক্ষার্থী। অনেকেই টেবিল টেনিস, ক্যারম, দাবা, কার্ড খেলার প্রতি ঝুঁকে পড়ছে। মেয়েদের হলেও দাবা ক্যারম বা লুডুর মতো বিভিন্ন ইনডোর গেম চলে সময় কাটানোর ব্যবস্থা হিসেবে। অনেক শিক্ষার্থীর কাছেই শীত মানে ফ্যাশন। রং-বেরঙের ড্রেস পরে সময় কাটানো বছরের অন্য কোনো ঋতুতে সম্ভব হয়ে ওঠে না। কেউ কেউ আবার ঘুরতে চলে যান একেবারে নেটওয়ার্কের বাইরে। শীতকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ব্যাচমেটদের সঙ্গে নিয়ে দেশের নানা দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণ করেন। ফলে সুন্দর কিছু সময় কাটানোর পাশাপাশি হয়ে যায় নিজের দেশকে জানা ও দেখার কাজটি।
"