reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২০ অক্টোবর, ২০২১

বাবরের সেরাদের সেরা হওয়ার গল্প

শৈশব থেকে নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে আসা বাবর আহমদ ইতোমধ্যে পেয়েছেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) সোশ্যাল সায়েন্স এন্ড হিউম্যানিটিস অনুষদ সেরা হওয়ার তকমা। তিনি হাবিপ্রবির অর্থনীতি বিভাগের ১ম ব্যাচের শিক্ষার্থী। আজকের পর্বে থাকছে বাবর আহমেদের সেরাদের সেরা হওয়ার পেছনের গল্প। আগামীতে তার হাতে উঠবে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক। প্রতিবেদনটি করেছেন মো. মিরাজুল আল মিশকাত।

অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী বাবা মো. আব্দুল ওয়াহেদ ও গৃহিণী মায়ের (মোছা. নুরজাহান বেগম) একমাত্র সন্তান বাবর আহমদ। তার জন্ম ১৯৯৬ সালের জানুয়ারি মাসে রংপুর শহরে। তবে তার শৈশব কাটে কুড়িগ্রামে এবং প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার হাতেখড়ি শুরু হয় কুড়িগ্রামের শিশু নিকেতন স্কুলে। ছোট বেলা থেকে তিনি প্রতিটি শ্রেণিতেই কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়েছেন। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে বাবরের বাবা রংপুরের ‘বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন’ (বিসিক) এ হিসাবরক্ষক পদে বদলি হয়ে আসলে বাবর তৎকালীন রাইফেলস পাবলিক স্কুলে (বর্তমানে বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রংপুর) ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন এবং সেখান থেকেই এসএসসি তে জিপিএ ৪.৯৪ আর্জনের পাশাপাশি দিনাজপুর বোর্ডে সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়ে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে তিনি রংপুর সরকারি কলেজের মানবিক শাখা থেকে ২০১৩ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫.০০ আর্জনের পাশাপাশি দিনাজপুর বোর্ডে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এইচএসসি পরীক্ষাতে ভালো ফলাফলের পেছনে তার বাবা ও রাইফেলস পাবলিক স্কুলের সিরাজুল ইসলাম স্যারের অনুপ্রেরণা তার কাছে আজ স্মরণীয়।

স্বপ্নের শুরু : স্বপ্নের শুরুটা হয় চাচাতো ভাই হাবিবুর রহমান শামিমকে দিয়ে। মূলত সে-ই বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানায়। বাবার ইচ্ছে ছিল বাবর রংপুরের আশেপাশেই কোনো ভালো প্রতিষ্ঠানে তার উচ্চশিক্ষা অর্জন করবে কিন্তু বাবরের ইচ্ছে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) পড়ার। এজন্য তিনি প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন সাধ্যমত। ২০১৩-১৪ সেশনে বাবর ঢাবিতে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মেধা তালিকায় স্থান করে নেন। কিন্তু বাবার কারণে সেবার ভর্তি হতে পারেননি বাবর আহমেদ। এই অভিমানে ঐ বছর আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহনই করেননি তিনি। বাবা নিজের ভুল বুঝতে পাড়ায় পরের বছর অনুমতি দেন। কিন্তু ২০১৪-১৫ সেশনে ঢাবিতে ভর্তির সুযোগ হয়নি, তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায় বাবর। এবারও বাবা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে বাঁধা দেন। তবে বাবর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হননি ঐ সময়ের সেশনজটের কারণে। উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সময় থেকেই বাবরের পছন্দের বিষয় ছিল অর্থনীতি। তাই হাবিপ্রবির অর্থনীতি বিভাগ ছিল তার প্রথম চয়েজ। কোনো কিছু না ভেবে পরে প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসাবে হাবিপ্রবিতে ভর্তি হয় বাবর।

লেখাপড়ার কলাকৌশল : লেখাপড়ার ক্ষেত্রে আমি পরিশ্রম ও আল্লাহর রহমতে বিশ্বাসী। আমি ছোট থেকেই আমার আম্মুর বানানো হ্যান্ডনোট পড়তাম। তাই বড় হওয়ার পরও এই অভ্যাস ত্যাগ করতে পারিনি। যে কারণে আমি নিয়মিত প্রতিটি বিষয়ের লেকচারই বুঝে বুঝে নিজের ভাষায় নোট করতাম এবং পরে তা পড়তাম। যেহেতু আমরা হাবিপ্রবির অর্থনীতি বিভাগের ১ম ব্যাচ ছিলাম, সেহেতু আমাদের শিক্ষকদের কাছে ব্যাপক সহযোগিতা ও স্নেহ পেয়েছিলাম।

ভালো ফলাফলের রহস্য: আমার বাবার দেখানো পথে না হাঁটলে হয়তো আজ এতদূর আসতে পারতাম না। যিনি আমার জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রেই অনুপ্রেরণা দিয়েছেন, দিয়েছেন সৎ উপদেশ এবং সর্বদা শিখিয়েছিলেন ‘There is no shorcut to be succeeded and you have to be industrious with adequate patience.’ আমার মা যিনি নিয়মিতই লেখারপড়ার খবর নিতেন। তারা দুজনেই সর্বদা আমাকে অনুপ্রেরণা ও দৃঢ় মনোবল গঠনে সহায়তা করেছেন। এছাড়া প্রতিটি শিক্ষকের অবদান অনস্বীকার্য!

ক্যাম্পাস জীবন : ক্যাম্পাস জীবনের অধিকাংশ সময়ই আমরা চার বন্ধু (সৈকত, শিশির, আরিফ ও আমি) একসাথে কাটিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকটময় মুহূর্তের কথা বলতে গেলে তৃতীয় সেমিস্টারের কথা বলতে হয়। কারণ ঐ সময় আমার রেজাল্ট খারাপ হয়। যার কারণে পরবর্তী সেমিস্টার গুলিতে ৩.৮৫-এর বেশি পেতে হতো ডিপার্টমেন্ট ১ম হওয়ার জন্য। আমি চেষ্টার ত্রুটি করিনি বিধায় মহান আল্লাহ তায়ালাও আমাকে হতাশ করেনি।

বর্তমানে আমি International Rice Research Institutes (IRRI) Gi Post Graduate Thesis Scholar হিসেবে হাজী মোহাম্মদ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর অধ্যয়নরত। যদিও ২০২০ সালে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল কিন্তু করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে সম্পন্ন হয়নি। এছাড়া আমি অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রব্বানী স্যারের সাথে দুটি প্রজেক্টে কাজ করেছি।

অনুজদের প্রতি আহ্বান : আমার অনুজদের আমি বলব ভালো রেজাল্ট করতে নিয়মিত ক্লাস করতে হবে। এর সাথে প্রতিটি লেকচার ক্লাসে ভালোভাবে বুঝতে হবে এবং পরবর্তীতে নিজের ভাষায় তা নোট করতে পারলে আরো ভালো হয়। আর সবাইকে অর্থনীতির মূল বিষয়গুলো (Basic Concepts) সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা অর্জন করতে হবে। অনেকেই বলবে একাডেমিক বিষয়গুলো বা ঈএচঅ কিছু না। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় এটিও একটি অর্জন এবং একাডেমিক জ্ঞান তাদের গবেষণার ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে। আমি আশা করি অনুজেরা লেখাপড়ার পাশাপাশি গবেষণার কাজেও অংশগ্রহণ করবে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা : আমি ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার পাশাপাশি গবেষণা করতে চাই।

এছাড়া বিদেশে গিয়ে পিএইচডি ও পোস্ট ডক

করতে চাই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close