মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ

  ১৯ অক্টোবর, ২০২১

জবিতে প্রাণ ফিরেছে

দীর্ঘ ছুটির পর ক্যাম্পাসে ফিরেছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষা দিয়ে শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম। নানা জল্পনা-কল্পনা শেষে ৫৬৮ দিন পর প্রাণ ফিরেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় আবারও মুখরিত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ঢাকা ও ঢাকার আশপাশ এলাকা এবং বিভিন্ন জেলা শহর থেকে ক্যাম্পাসে আসতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলো। সবার অপেক্ষার প্রহর দূর করে শিক্ষার্থীদের নিয়ে পিপ পিপ শব্দে বাসগুলো একযোগে ক্যাম্পাসে পৌঁছায়। ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস। ভিড় বাড়তে থাকে ক্যাফেটেরিয়ায়। কদিন আগেও যেখানে শিক্ষার্থীদের খুঁজেই পাওয়া যেত না আজ সেখানে বসার জায়গা পাওয়াই ভার। এ যেন এক অন্য রকম পরিবেশ। ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের কাউন্টারে আগের মতো লম্বা সিরিয়াল দেখা গেছে। আগের মতোই বাস থেকে নেমে সকালের নাশতার জন্য অনেকে ছুটে গেছে ক্যাফেটেরিয়াতে। পরীক্ষা থাকায় সবাই নাশতা শেষে চলে গেছেন নিজ নিজ বিভাগের সেমিনার আর লাইব্রেরিতে। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, শহীদ মিনার, কলা ভবন, নিউ অ্যাকাডেমিক ভবন, টিএসসি, বিজ্ঞান অনুষদ চত্বর, কলা অনুষদ চত্বর, কাঁঠালতলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেটের বাহিরে, বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় গেটের সামনে, বিশ্ববিদ্যালয় বাসের ভেতরে, ক্যান্টিনে, ভাষা শহীদ রফিক ভবনের সামনে, অবকাশ ভবনে, শহীদ মিনারের সামনে, বিভিন্ন অ্যাকাডেমিক ভবনে ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের আড্ডা এবং দলবেঁধে বন্ধুদের খোশগল্পে আবারও ভরপুর হয়ে ওঠেছে। টিএসসি আর আশপাশের দোকানগুলোতে ফুটে উঠেছে আগের সেই জটলা। ক্যাম্পাস খোলায় হাসি ফুটেছে টিএসসি আর চাওয়ালা মামাদের মুখেও। অনেক দিন পর সবাই একসঙ্গে হওয়ায় সবার আনন্দের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম।

অনেক দিন পর ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ায় উচ্ছ্বসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ায় অনেক শিক্ষার্থীকেই ক্যাম্পাসে আসতে দেখা যায়। প্রথম দিন অনেকের পরীক্ষা থাকলেও অনেকেই এসেছিলেন ঘুরতে, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে আর আড্ডায় মেতে উঠতে। সেদিন সবাই হারিয়ে যায় আড্ডা, আনন্দ, খুনসুটি আর সেলফি তোলায়। সন্ধ্যায় ক্যাম্পাস আড্ডাটা একটু অন্য রকমই ছিল। বিভিন্ন চত্বরে শিক্ষার্থীরা অনেক দিনের জমানো গল্পের হাঁড়ি নিয়ে বসেছে। যেন রাজ্যের সব গল্প এই আড্ডায় শেষ করার সংকল্প নিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

ক্যাম্পাসে আবার মুখরিত দেখে গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী অনুপম মল্লিক আদিত্য বলেন, ক্যাম্পাসে অবশেষে প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। অনেক দিন একটা আফসোস ছিল মনের মধ্যে যে, এত দিন ক্যাম্পাসে এসেছি এখনো একটা পরীক্ষাও দিতে পারলাম না। অবশেষে বন্ধু, ভাইয়া, আপুদের সঙ্গে দেখা হলো। আমরা সবাই খুব খুশি। অতিমারি করোনার ভয়াল থাবায় দীর্ঘ ছুটির পর ক্যাম্পাসে এসে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মীম আফরোজ রায় বলেন, অনেক দিন পর ক্যাম্পাস খুলেছে। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতেই ক্যাম্পাসে আসা। আমরা আবার আগের মতো প্রাণোচ্ছল ক্যাম্পাস ফিরে পেতে চাই।

প্রাণের স্পর্শে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ফের মুখরিত হয়ে ওঠায় পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান সিফাত বলেন, অনেক দিন পর ক্যাম্পাসে এসেছি। বন্ধুদের দেখে খুব ভালো লাগছে। আবার আমরা একসঙ্গে আড্ডা, গল্পে মেতে উঠব। আনন্দঘন পরিবেশ দেখে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান আপন বলেন, ভালো লাগছে সবাইকে দেখে। প্রিয় ক্যাম্পাসে প্রাণের সঞ্চার হয়েছে এটাই অনেক আনন্দের। প্রাণ ফিরেছে ক্যাম্পাসে, শিক্ষার্থীদের মেলা বসেছে চত্বর আর প্রাঙ্গণে। ক্যাম্পাসের এই প্রাণোচ্ছল পরিবেশ যেন আর থমকে না যায় এই প্রত্যাশা সবার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close