reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৪ অক্টোবর, ২০২১

জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা

কোনো স্থানের ৩০-৩৫ বছরের আবহাওয়ার গড়কে সেই স্থানের জলবায়ু বলে। এই দীর্ঘ সময়ের আবহাওয়ার অবস্থান যদি পরিবর্তন হয়, তার একটা ক্ষতিকারক প্রভাব সেই স্থানের ওপর পড়তে পারে। তাই এই জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে কী ভাবছেন সচেতন শিক্ষার্থীরা? তাদের মন্তব্য তুলে ধরেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাফরুল ইসলাম

জলবায়ু পরিবর্তন মানবজাতির জন্য অশনিসংকেত

মানবজাতির কর্মকাণ্ডের জন্যই বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বাড়ছে কারণ তাপমাত্রা উঠছে ৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর এবং দেখা দিচ্ছে চরম আবহাওয়া। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এখন যে চরম তাপপ্রবাহ, প্রচণ্ড ভারী বৃষ্টিপাত, খরা বা সাইক্লোন হতে দেখা যাচ্ছে, তাতে জলবায়ুর এই পরিবর্তন স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলার যুদ্ধে মানবজাতি কতটুকু প্রস্তুত। পৃথিবীজুড়ে পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন চলছে। তবে বাংলাদেশ ভয়াবহ সংকটের মধ্যে রয়েছে। বিশেজ্ঞদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, আমাদের দেশ এক-তৃতীয়াংশ সমুদ্রে তলিয়ে যাবে। সুন্দরবন আমাদের বড় বড় সাইক্লোন থেকে বাঁচায়। অথচ আমরা সুন্দরবন ধ্বংস করা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। আমাদের দেশে প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে। আমরা যতই বিত্তশালী হই না কেন, তা রাষ্ট্রের প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য অশনিসংকেত। তার প্রমাণ হিসাবে কোভিড-১৯ বুঝিয়ে দিয়েছে। পরিবেশের ক্ষতি করলে তার বিপরীত প্রতিক্রিয়া হিসাবে আজকের পৃথিবীতে প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিল দেখতে হচ্ছে। মানুষের নানা কর্মকাণ্ডের পরিণতিতে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন দ্রুত হারে সাগরপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে এবং বরফ গলছে। সেই সঙ্গে, জীবজন্তুর বিভিন্ন প্রজাতি তাদের আবাসস্থল বদলাচ্ছে। বরফের আচ্ছাদন বিলীন হওয়ার কারণে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। মানবসৃষ্ট গ্রিনহাউস গ্যাসের ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়েই চলছে। ফলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বসবাসের জন্য অযোগ্য পৃথিবী রেখে যাব। পৃথিবী আমাদের সবার তাই পৃথিবী রক্ষার দায়িত্ব সবার। ফলে প্রাণ প্রকৃতি ধ্বংসের সব ধরনের প্রকল্প বন্ধ করতে হবে। আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলতে হবে।

রাশেদুজ্জামান রাশেদ

প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, জয়পুরহাট

জলবায়ু পরিবর্তনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে

বাংলাদেশের সৌন্দর্যের কাছে পৃথিবীর অন্যদেশগুলোর সৌন্দর্য হার মেনে যায়। প্রতিনিয়ত হাজারো পর্যটকের ভিড় জমা হয় পর্যটনকেন্দ্র কিংবা স্থানগুলোতে, প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্যগুলোকে উপলব্ধি করা জন্য। বিশেষ করে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কক্সবাজার, তেঁতুলিয়া, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন ইত্যাদি জায়গাগুলোতে। স্বভাবতই যেখানে মানুষের কোলাহল সেখানেই নানারকম ব্যবসারও জমজমাটপূর্ণ অবস্থা। ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশ তাদের মূল ব্যবসায়িক বিষয়গুলোর মধ্যে প্লাস্টিককে বেশি গুরুত্ব দিয়ে বসে এসব জায়গাগুলোতে। ব্যবসায় তারা লাভবান হয় ঠিক, কিন্তু প্লাস্টিক ব্যবহারের ফলে দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। পরিবেশ দূষণ মানেই জলবায়ুতে নেতিবাচক প্রভাব। এ ছাড়া পশুপাখি কিংবা প্রাণীগুলোও তাদের প্রাণ হারিয়ে ফেলছে, তাদের চলাচলের পথেও নানা রকম বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। তাই প্লাস্টিককে না বলুন পরিবেশকে রক্ষা করুন এবং জলবায়ু পরিবর্তনে নেতিবাচক প্রভাবগুলো কমিয়ে আনতে সাহায্য করুন। আমি, আপনি, আমরা, আপনারা সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবগুলোর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে।

আনতাজ হেনা আখি

মনোবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

পৃথিবীর অস্তিত্ব রক্ষার্থে জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে হবে

একবিংশ শতাব্দীর এক অন্যতম চ্যালেঞ্জ জলবায়ু পরিবর্তন। পৃথিবীতে মানবজাতির তথাকথিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফলে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে। জলবায়ু পরিবর্তনের অনিবার্য পরিণতি হিসেবে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, অতি বৃষ্টি, বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রকোপ দিন দিন বাড়ছে। বরফ গলছে দ্রুতগতিতে এবং এর প্রভাব পড়ছে প্রাণিকুল ও জীববৈচিত্র্যের ওপর। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ পরিবর্তন যদি সমগতিতে চলতে থাকে, তবে ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যেতে পারে ১১ মিটারের মতো। ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি, লকডাউনে বায়ুদূষণ কমছে হু হু করে। মেরামত হচ্ছে পৃথিবীর প্রতিরক্ষা ঢাল ওজনস্তর। সমুদ্রসৈকতগুলোতে বেড়েছে মাছ ও সামুদ্রিক প্রাণীদের আনাগোনা। আজ উন্নত বিশ্বের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সম্ভাব্য নাজুক পরিস্থিতি সামলাতে টেকসই পদক্ষেপ নিচ্ছে বাংলাদেশ। পলিথিন ও জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প ব্যবহার, কার্বন নির্গমন হ্রাসে আরো সোচ্চার হতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, বেশি বেশি গাছ লাগানো। সর্বোপরি, আপনার আমার সমগ্র বিশ্বেরই হাতে হাত রেখে কাজ করতে এখনই দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে। তাহলেই সুস্থ পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব।

সাইদুন্নিছা তোহ্ফা

উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ

জলবায়ু পরিবর্তন ও তারুণ্যের দায়বদ্ধতা

জলবায়ু হচ্ছে কোনো এলাকা বা ভৌগোলিক অঞ্চলের ৩০-৩৫ বছরের গড় আবহাওয়া। জলবায়ু পূর্বেও পরিবর্তন হয়েছে এখনো হচ্ছে। তাহলে প্রশ্ন বর্তমান জলবায়ু পরিবর্তন কেন এত বেশি আলোচিত? এর একমাত্র কারণ, বিশ্বব্যাপী মানুষের কর্মকাণ্ড। জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক সমস্যা হলেও ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে আমার দেশ তথা বাংলাদেশ নিয়ে আলাদা করে সত্যিই উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো। ইতোমধ্যে বিশ্বে তাপমাত্রা ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। এ কারণে বন্যা-ঘূর্ণিঝড়ও বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় যদি প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ না করা যায় এবং এই শতাব্দীর মধ্যে বিশ্বের তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেলে নিঃসন্দেহে বন্যার পরিমাণ বাড়বে। অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে আছে, অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টি, তীব্র শৈত্যপ্রবাহ, তীব্র দাবদাহ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা, জোয়ার-জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি।

তরুণ প্রজন্ম এলে এ বিষয়ে কতটুকু ভাবে? একটা গবেষণা ফলাফল প্রকাশিত হয়। সেখানে তরুণদের জলবায়ু সম্পর্কে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অনুসন্ধান করা হয়। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে বলতে বা ব্যাখ্যা করতে পারবে এমন তরুণ-তরুণীর সংখ্যা ৫০ শতাংশ। অথচ তরুণদের সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণে প্রস্তুত থাকতে হবে। বেশি বেশি সবুজায়নে মনোযোগী হতে হবে। অনলাইনভিত্তিক তৎপরতাকেও কাজে লাগানো যেতে পারে।

সুমাইয়া আক্তার

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

পরিবেশবান্ধব দূষণহীন প্রযুক্তি দরকার

একবিংশ শতাব্দীর সন্ধিক্ষণে মানবজাতি যখন সভ্যতার চরম শিখরে, ঠিক তখনই পরিবেশ আমাদের ঠেলে দিচ্ছে মহাবিপর্যয়ের দিকে। পরিবেশে দেখা দিয়েছে জলবায়ুর পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন। যা পৃথিবীব্যাপী পরিবেশ বিপর্যয় করছে। এসব নিয়ে চিন্তা ভাবনার অন্ত নেই। জলবায়ু পরিবর্তনের সুদূরপ্রসারী প্রভাবের মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলো টিকে থাকার চেষ্টা করছে। এ পরিস্থিতি রোধে নেওয়া প্রয়োজন বৈশ্বিক উপশম লক্ষ্য, নীতি ও জরুরি কর্মপরিকল্পনা। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমের প্রায় ৮০ শতাংশ অবদান এনার্জি সেক্টরের। বিশ্বব্যাংকের ধারণানুযায়ী, ২০৩০ সালে কার্বন নির্গমন ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে এজন্য পরিবেশবান্ধব দূষণহীন প্রযুক্তি দরকার। এ প্রযুক্তি অধিকহারে নবায়নযোগ্য ও স্থানান্তরযোগ্য এনার্জি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারবে। টেকসই উন্নয়ন কাঠামোর মধ্যে থেকেই উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের উপকৌশল গ্রহণ করতে হবে। এসব দেশের জাতীয় নীতির সঙ্গে উপশম কৌশলকে সমন্বয় করে পরিবেশ উপযোগী উপশম কর্মসূচি প্রণয়ন করতে হবে। যা হবে পরিমাপযোগ্য, যেন তা প্রতিবেদনাকারে প্রকাশ করা যায় এবং যথার্থতাও যেন নিরূপণ করা যায়। বিশেষ করে গুরুত্ব দিতে হবে দূষণহীন প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা প্রদানে উন্নত দেশগুলোকে রাজি করানো এবং তা সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগানো- এমনটিই আমি মনে করি।

মাহমুদা টুম্পা

ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

জলবায়ু পরিবর্তন কৃষির ওপর প্রভাব

বর্তমান পরিবেশের সবচেয়ে বড় হুমকি হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। কোনো ভৌগোলিক অবস্থানের ৩০-৩৫ বছরের গড় আবহাওয়াকে জলবায়ু বলে আখ্যায়িত করা হয়। সাধারণত আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত, জৈব প্রক্রিয়া, সৌর বিকিরনের পরিবর্তন, গাছপালার সংখ্যা ক্রমান্বয়ে হ্রাস ইত্যাদি নিয়ামকের কারণেই জলবায়ুর পবিবর্তন হচ্ছে। পরিবেশ সুরক্ষিত থাকলে মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো, যেমন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, ওষুধ, জ্বালানি পানিসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ নিরবচ্ছিন্নভাবে পূরণ করতে পারবে। কিন্তু পরিবেশ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেই পরিবেশে বসবাসের জন্য অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বনাঞ্চলের ধ্বংস হলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যায় এবং চাষাবাদের যথেষ্ট ক্ষতি করে। বিশেষ করে গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধির ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়েই চলছে। পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে একসময় উপকূল অঞ্চল তলিয়ে যাবে। ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে বিশ্বের যেসব দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। মানুষের চাহিদা পুরণ ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্যই প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর নির্ভরশীলতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। দেশে অতিরিক্ত জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণ করতে বনাঞ্চল ধ্বংস করা হচ্ছে। এ ছাড়া অতিরিক্ত যানবাহন ও কলকারখানায় কালো ধোঁয়া ওজন স্তর ধ্বংস করছে যা জলবায়ুর ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। জলবায়ুর এই বিরূপ পরিবেশের সঙ্গে খাপখাওয়াতে বিভিন্ন অভিযোজন সক্ষমতা সম্পন্ন চারা প্রস্তুত কনতে হবে, যাতে করে জলবায়ুর পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থকে কৃষিকে মুক্ত রাখা যায়। তাই কৃষিনির্ভর এই অর্থনীতিকে বাঁচাতে হলে জলবায়ুকে গুরুত্ব দিতে হবে।

মাসুম বিল্লাহ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close