তানভীর পিয়াল

  ১১ অক্টোবর, ২০২১

বিনা খরচে অসচ্ছল-সম্ভাবনাময় নারীদের পড়াবে ইডিইউ

বর্তমান বিশ্বে নারীরা দারিদ্র্য, লিঙ্গবৈষম্য ও সহিংসতার শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বিশ্বজুড়ে নানা অঞ্চলে যুদ্ধ ও জাতিগত সংঘাতেও জর্জরিত অসংখ্য সম্ভাবনাময় নারী, যারা সমাজ-রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রেই রাখতে পারে ইতিবাচক ভূমিকা। এ ধরনের সংগ্রামী ও সম্ভাবনাময় নারীদের মানসম্মত উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে নিজেদের বিকশিত করার সুযোগ দিতে ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি (ইডিইউ) হাতে নিয়েছে এক যুগান্তকারী উদ্যোগ- ‘উইম্যান এম্পাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড লিডারশিপ ফান্ড’। এ তহবিলের অধীনে নারীরা এখন থেকে বিনা খরচেই পড়তে পারবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাংলাদেশে এই প্রথম কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এ ধরনের উদ্যোগ নিল।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে নারীদের উন্নত পরিবেশে মানসম্মত উচ্চশিক্ষার অভিজ্ঞতা দিয়ে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য গড়ে তুলতে চায় ইডিইউ। এ পরিবর্তনে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে একজন দায়িত্বশীল ও প্রয়োজনীয় শিক্ষায় আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠা একজন নারী, বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান সাঈদ আল নোমান।

তিনি আরো বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ইডিইউ বৈচিত্র্যময় শিক্ষাপরিবেশ ও সমাজের সব শ্রেণির শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিতে কাজ করে চলেছে। শিক্ষার্থীদের, বিশেষত

সম্ভাবনাময় নারীদের সব সময়ই আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে আসছি আমরা। আনুষ্ঠানিকভাবে ফান্ড তৈরি করে বিষয়টিকে এবারই জনসমক্ষে আনা হলো। বাংলাদেশ সরকারের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এ উদ্যোগ সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ইডিইউর এ উদ্যোগ সাধারণের মাঝে অসাধারণত্বের সম্ভাবনা নিয়ে বেড়ে উঠতে থাকা নারীদের জন্য। তাদের কাছে এ বার্তা পৌঁছে দেওয়া ও সামাজিক সচেতনতা তৈরির জন্য সেরা রাঁধুনি-১৪২৭ চ্যাম্পিয়ন ইডিইউর শিক্ষার্থী সাদিয়া তাহেরকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। একই সঙ্গে তার সাফল্য ও সমাজে ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা ও ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারও দেওয়া হয়েছে।

ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি এ উদ্যোগে সমাজের সামর্থ্যবান ও দায়িত্বশীল শ্রেণিকেও শামিল করতে চায়। আর তাই ‘ম্যাচিং গ্র্যান্ট’ পদ্ধতিতে এ তহবিল গড়ে তুলছে ইডিইউ। যার অর্থ, কেউ যদি এতে অনুদান দেয়, বিশ্ববিদ্যালয়ও সমপরিমাণ টাকা ফান্ডে প্রদান করবে।

এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজ করছেন ইডিইউর সহকারী অধ্যাপক রওনক আফরোজ ও তাসমিম চৌধুরী বহ্নি। তারা জানান, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে আগ্রহী যে কেউ আর্থিক অনুদান দিতে পারবে এতে। ফান্ডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই ইডিইউর প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান সাঈদ আল নোমান ব্যক্তিগত অনুদানের ঘোষণা দেন, ফলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও সমপরিমাণ টাকা এতে দেওয়া হবে। প্রতি বছর আবেদনের ভিত্তিতে ১০ জন শিক্ষার্থীকে ফান্ডের আওতায় আনা হবে। এ শিক্ষার্থীদের চার বছরের গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রামে মোট ৭৫ লাখ টাকার আনুমানিক শিক্ষা ব্যয় বরাদ্দ করা হয়েছে। সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় গৃহীত এ উদ্যোগে সামর্থ্যবান সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

ইডিইউর উপাচার্য অধ্যাপক মু. সিকান্দার খান বলেন, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক নেতৃত্ব সৃষ্টিতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে ইডিইউ। সম্ভাবনাময় বা সমাজে নানাভাবে ভূমিকা রাখা শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক জীবন সুমসৃণ করতে এবং তাদের মাঝে সামাজিক দায়বদ্ধতা তৈরিতে পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছি আমরা। প্রতিটি সেমিস্টারেই যোগ্য শিক্ষার্থীদের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়।

এ বৃত্তির জন্য আবেদনকারীদের অবশ্যই এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করতে হবে; ও/এ লেভেলের ক্ষেত্রে মোট পয়েন্ট ৩০ হতে হবে। এ ছাড়া প্রার্থীরা যদি কোনো এনজিও, সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবী কাজে জড়িত থাকে; দারিদ্র্য বিমোচন, সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে সম্পৃক্ত থাকে; অথবা সমাজে এরই মধ্যে অসামান্য ভূমিকা রেখে থাকে বা উদ্যোক্তা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। যদি প্রার্থী কোনো ধরনের সৃজনশীল ও সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে জড়িত থাকে এবং স্বীকৃতি বা অর্জনের অধিকারী হয়- সেসবও বিবেচনা করা হবে।

আবেদনের সময় পরিবারের সদস্যদের বিস্তারিত পরিচয়, আর্থসামাজিক অবস্থার বিবরণ, আয় বিবরণী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পূর্বের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানের সনদ প্রদান করতে হবে। এ ছাড়া নিজের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা সম্পর্কে বিশদে লিখে আবেদন করতে প্রার্থীকে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close