reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০২ আগস্ট, ২০২১

তারুণ্যের চোখে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু

বাংলার গ্রাম থেকে উঠে এসে বিশ্বনেতা হলেন এমন একজন মহান নেতার নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালি জাতির এই অবিসংবাদিত নেতা ১৭ মার্চ ১৯২০ সালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছোটবেলা থেকে ছিলেন স্বাধীনচেতা। তার আজীবন সংগ্রামে রক্তরঞ্জিত পথ পেরিয়ে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেন। আর সে পথ ধরে বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন দেশের জন্ম দেয়। ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালির মহানায়ক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাসকে কলুষিত করেছে ঘাতকরা। বঙ্গবন্ধু তার মহান কর্মের জন্য চিরদিন বাঙালি জাতির হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কী ভাবছেন? এ বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সাইফুল মিয়া

বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির নতুন সূর্যোদয়ের চেতনা

বাংলাদেশ এবং স্বাধীনতা এই শব্দদ্বয়ের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম। বঙ্গবন্ধু মানে স্বাধীনতা, স্বাধীনতা মানেই বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর আবির্ভাব না হলে সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা স্বাধীন বাংলার সূর্যোদয় অসম্ভব ছিল। যার চোখেই দেশের সাড়ে সাত কোটি বাঙালি দেখেছিল একটি স্বাধীন দেশের স্বপ্ন, ঝাঁপিয়ে পড়েছিল স্বাধীনতাযুদ্ধে। জীবনের প্রতিটা অধ্যায়ে তিনি এই জাতির উন্নতি নিয়ে ভেবেছেন এবং জাতিকে আলোর পথ দেখানোর চেষ্টা করেছেন। জাতিকে আলোর পথ দেখাতে গিয়ে শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষুকে তিনি ভয় করেননি। ফলে শাসকগোষ্ঠী তাকে অন্ধকার প্রকোষ্ঠে কারারুদ্ধ করে রাখে। তবে কারারুদ্ধ থেকেও তিনি সাহসের সঙ্গে লড়াই করে গেছেন বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অন্যায়, অবিচার, বৈষম্য, জুলুম, নির্যাতনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে গেছেন আমরণ। বাঙালি জাতির প্রতি বৈষম্য বঙ্গবন্ধু কখনো মেনে নেননি। অধিকার আদায়ের চূড়ান্ত মুহূর্তে তিনি বজ্রধ্বনি উচ্চারণ করেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। বাঙালির অস্তিত্বের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অস্তিত্ব জড়িত। অস্তিত্ব ছাড়া যেমন কোনো বস্তুকে কল্পনা করা যায় না, তেমনি বঙ্গবন্ধু ছাড়া স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্ব অকল্পনীয়। স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্ব কল্পনা করতে গেলেই জাতির কর্ণধার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা মনের মনিকোঠায় ভেসে উঠে। আমার কাছে বঙ্গবন্ধু হচ্ছেন স্বাধীন বাংলার সূর্যোদয়। বঙ্গবন্ধু ছাড়া স্বাধীন বাংলার সূর্যোদয় অসম্ভব ছিল। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির নতুুন সূর্যোদয়ের চেতনা।

সাইফুল্লাহ মানছুর ফারাবী

শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বঙ্গবন্ধু প্রতিবাদী এক মহানায়কের নাম

মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একটা নাম নয়; হাজারো বাঙালি তরুণের কাছে তিনি এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি নেতৃত্ব ও বীরত্ব দেখিয়ে ছিলেন তা কিন্তু নয়, বরং ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন অসীম সাহসী, সংগ্রামী, আত্মবিশ্বাসী, আত্মপ্রত্যয়ী ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী এক মহানায়ক। কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে ভর্তির পর থেকেই তার সক্রিয় রাজনীতির অধ্যায় শুরু। তারপর থেকে আর থেমে থাকেননি। নিজ মাতৃভূমির জন্য, মাতৃভূমির মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদার জন্য অবিরাম লড়াই করে গেছেন। তরুণদের কাছে ‘বঙ্গবন্ধু’ নামটি এখন আদর্শ, অনুপ্রেরণা, আত্মবিশ্বাসের নাম। তরুণরা তাদের সেই মহানায়কের আদর্শকে বুকে ধারণ করে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ছে এবং পরিশ্রম করছে নিরলস স্বার্থহীনভাবে। ব্যক্তিত্বের উচ্চতা, চরিত্রের দৃঢ়তায় বঙ্গবন্ধু ছিলেন সমসাময়িকদের ঊর্ধ্বে। মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে ও পশ্চিমা শাসক-শোষকরা তার মনোবল ভাঙতে পারেনি। ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন প্রভৃতি ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর অংশগ্রহণ দেখে তরুণ সমাজ আজ মনে সাহস পায়, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে দ্বিধা করে না। বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত শান্ত মাথায় ভবিষ্যৎমুখী রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতেন এবং তিনি বিশ্বাস করতেন, তরুণরা যে বেগে এগোতে পারে, প্রবীণরা ওই বেগে পারে না। তাই তরুণদের উচিত বঙ্গবন্ধুকে তাদের হৃদয়ে ধারণ করে সব অন্যায়, অবিচার, স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। তবেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলা যাবে।

নাজমুন নাহার জেমি

শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ বাংলার আকাশে উদিত হয়েছিল মুজিব নামের আরো একটি সূর্য। টুঙ্গিপাড়ায় এই মুমূর্ষু বাংলা জন্ম দিয়েছিল হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলার মুক্তিদূত বঙ্গবন্ধুকে। সেই ভাষা আন্দোলন থেকেই তার রাজনৈতিক জীবনের উত্থান, ন্যায্য দাবি আদায়ের আন্দোলনে বহিষ্কৃতির সঙ্গে কারাবরণও করেছেন বহুবার। ৬৬-এর ৬ দফা, ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানসহ ছাত্র, শিক্ষক, পেশাজীবী, শ্রমিক আর জনসাধারণের প্রাপ্য অধিকার আদায়ের প্রতিটি আন্দোলনেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। জাতির মুক্তির দাবিতে ১৯৭১-এর ৭ মার্চ যে দিগবিজয়ী, ইতিহাসখ্যাত, মর্মস্পর্শী ভাষণ বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন আজও সেটা বাঙালির রক্তে কাঁপন সৃষ্টি করে। তার দেওয়া স্বাধীনতার ঘোষণায় জীবনের মায়া উপেক্ষা করে দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতাযুদ্ধে অন্ধকার অতীতকে পেছনে ফেলে বাঙালি এগিয়েছে অনেকটা দূর। ১৯৭২-এ জেল মুক্তির পরই বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েই বিপর্যস্ত বাংলাকে যুক্ত করেছিলেন বহুদেশিক বাণিজ্যে। সংবিধান প্রণয়ন, স্কুল, কলেজ প্রতিষ্ঠা এবং জাতীয়করণ, কর্মসংস্থান, খাদ্য চাহিদা পূরণ, প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠনসহ বাংলার প্রত্যেকটা মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় দিন ও রাতের ঘুম এক করেছিলেন তিনি। অথচ ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের কালরাতে, ঘাতকের গুলির আঘাতে বাঙালি হারায় বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুকে। টাকায় বিক্রীত ঘাতক সমাজ বঙ্গবন্ধুকে বাংলার মানচিত্র থেকে উৎখাত করতে পারেনি। তিনি বসে আছেন বাঙালির বিজয়বৃত্তে, বাঙালির রক্তে, মিশে আছেন বাঙালির অস্তিত্বে।

মো. রাফছান

শিক্ষার্থী, মেরিন সায়েন্স বিভাগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

বঙ্গবন্ধু বাঙালির হৃদয়ে চিরদিন বেঁচে থাকবেন

আমরা বাঙালি জাতি ইতিহাস, ঐতিহ্যে বরাবরই মহিমান্বিত। এই মহিমান্বিত ইতিহাসের পেছনে রয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গৌরবগাথা

নেতৃত্ব। যার

সুদৃঢ় নেতৃত্বে

বাঙালির স্বাধীনতা অর্জনের

পথ সুগম হয়েছিল। এসেছিল সেই প্রত্যাশিত স্বাধীনতা। ২০২০ সালে

আমরা উদযাপন করেছি মহান এই নেতার জন্মশতবার্ষিকী। আর ২০২১ সালে পদার্পণের মধ্যে

দিয়ে পেয়েছি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। বঙ্গবন্ধু আর আমাদের অর্জিত স্বাধীনতা দুটো শব্দের সম্পৃক্ততার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতেই যেন বঙ্গবন্ধুর জন্মের

শতবার্ষিকীর পরই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বাঙালির দোরগোড়ায় এসে হাজির। আমাদের এই মহান

নেতার সুদৃঢ় নেতৃত্ব সেদিন বাঙালির মধ্যে

জন্মেছিল স্বাধীনচেতা মনোভাব। যার ফলে আমরা আজ স্বাধীন জাতি হিসেবে বাঁচতে পারছি।

তাই প্রিয় এই নেতৃত্বের আজন্ম স্মরণ হোক শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায়।

তার সংগ্রামী জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ বাঙালির কাছে হয়ে উঠুক আদর্শ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট

বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে সুপরিকল্পিতভাবে স্বাধীনতার অক্ষয় কীর্তি মুছে দিতে চাইছিল ঘাতকরা। কিন্তু তারা জানত না, পৃথিবীর বুকে বাঙালি যত দিন থাকবে, তত দিন তাদের হৃদয়ে বেঁচে

থাকবেন বঙ্গবন্ধু।

শাহিদা আরবী

ইংরেজি সাহিত্য বিভাগ

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা

দুর্নীতির বিরুদ্ধে এক আপসহীন নেতার নাম বঙ্গবন্ধু

দুর্নীতি বর্তমান বাংলাদেশের জাতীয় সমস্যা। কিন্তু এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে বরাবরই সোচ্চার ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে সরব ছিলেন সব সময়। বঙ্গবন্ধুর প্রায় প্রতিটি ভাষণেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি অত্যন্ত বিরক্তির সঙ্গে বলেছিলেন, ‘দেশ স্বাধীন করলে সবাই পায় সোনার খনি আর আমি পেয়েছি চোরের খনি! আমার ডানে চোর, বাঁয়ে চোর, সামনে চোর, পেছনে চোর, চোর আর চোর!’ স্বাধীনার পর বঙ্গবন্ধুর প্রথম কাজই ছিল বাংলার মাটি থেকে দুর্নীতিবাজদের উৎখাত করা। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশ চোরমুক্ত হয়নি। সেই থেকে এখন পর্যন্ত প্রজন্মের পর প্রজন্ম চোরেরা আমাদের চারপাশে রাজত্ব করে বেড়াচ্ছে। কেড়ে নিচ্ছে অনাহারীর মুখের খাবার, অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে সাধারণ মানুষদের। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের নিষ্ঠুরতায় বদলে গেছে পৃথিবী। কিন্তু বদলায়নি মানুষ! পত্রিকায় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গরিবের চাল চুরির যে মহোৎসবের চিত্র উঠে আসছে, তা রীতিমতো ভয়াবহ! জীবন-মৃত্যুর এ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েও চাল চোরদের চৌর্যবৃত্তি থামেনি। দেশের লুটেরারা এত নিকৃষ্ট মানসিকতার মানুষ যে তারা গরিব-দুঃখী, অসহায় মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত প্রণোদনা আত্মসাৎ করতেও দ্বিধা করেনি। দুর্নীতি এখন ক্যানসারের মতো বিস্তার লাভ করেছে। দুর্নীতি উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। দুর্নীতি রোধ করতে পারলে আমরা বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব ও বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব।

মো. আবদুল হাকিম জুবাইর

শিক্ষার্থী, আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close