reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৮ জুলাই, ২০২১

বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবস নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা

২৮ জুলাই বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবস। প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার সর্বোত্তম অনুশীলন সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বব্যাপী এ বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবস পালন করা হয়। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা দিন দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশবিজ্ঞানীরা অদূর ভবিষ্যতের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে আমাদের সতর্ক করেছেন। বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তরুণ শিক্ষার্থীদের কী ভাবনা? এ বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মারুফ মজুমদার

‘প্রকৃতি সংরক্ষণে জনসচেতনতা জরুরি’

প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সর্ম্পক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রকৃতি ছাড়া মানুষের জীবন কল্পনা করা যায় না। বর্তমানে নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে দিন দিন প্রকৃতি হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। তাই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রকৃতি সংক্ষরণ বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে বৃক্ষ। বৃক্ষকে বলা হয় মানুষের পরম বন্ধু। আমাদের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন বৃক্ষ সরবরাহ করে এবং আমাদের ত্যাগ করা দূষিত কার্বন ড্রাই-অক্সাডাইড বৃক্ষ গ্রহণ করে। এ ছাড়া বৃক্ষ আমাদের নানা রকম ফলমূল দিয়ে থাকে। কিন্তু আমরা এই পরম বন্ধুকে প্রতিনিয়ত ধ্বংস করছি। অধিক জনসংখ্যার চাপে বন উজাড় করে তৈরি করা হচ্ছে ঘরবাড়ি। পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো দেশের মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের দেশের মোট আয়তনের প্রায় ১৫ শতাংশ বনভূমি আছে। বেপোরোয়াভাবে ব্ক্ষৃ নিধন করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা, কিন্তু তেমন কোনো প্রতিবাদ বা বিচার হচ্ছে না। পুঁজিবাদীরা নিজেদের স্বার্থে ফসলি জমি ও গাছপালা কেটে শিল্প-কারখানা তৈরি করেছেন। প্রকৃতির অন্যতম আরেকটি উপাাদন হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। ক্রমাগত আমাদের দেশের জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। হুমকিগুলোর মধ্যে রয়েছে দ্রুত ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়ন, বন ও জলাভূমিকে কৃষিক্ষেত্রে রূপান্তর, অতিরিক্ত প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ, বায়ু ও পানিদূষণ, অতিরিক্ত জনসংখ্যার বাড়তি চাপ ইত্যাদি। জীববৈচিত্র্য আমাদের দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই প্রকৃতি সংরক্ষণে জনসচেতনতা শুধু দিবস পালনে শেষ না করে সরকারি ও বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ নিতে হবে।

মো. সাইফুল মিয়া

শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

‘বন্যপ্রাণীদের সংরক্ষণ করা জরুরি’

প্রকৃতি সংরক্ষণ হলো সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত স্বাভাবিক ও নৈসর্গিক বস্তুকে সংরক্ষণ করা। সৃষ্টিকর্তা প্রকৃতিকে সাজিয়েছেন বন্যপ্রাণী, উদ্ভিদ আর পরিবেশের অন্যান্য উপাদান দিয়ে। সময়ের পরিক্রমায় আমাদের অপরিকল্পিত পদক্ষেপের কারণে ইতোমধ্যে উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির এক বিরাট অংশ প্রকৃতি থেকে হারিয়ে গেছে। গন্ডার, বুনো মহিষ, ডাইনোসর, বরসিঙ্গা, নীলগাই, বনছাগলসহ অনেক বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত এ দেশ থেকে। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা আইইউসিএন-এর ‘ডেটা বুক ২০০০’-এ ৮ প্রজাতির উভচর, ৫৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪১ প্রজাতির পাখি

ও ৪০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীসহ অনেক বন্যপ্রাণী বিপদাপন্ন ও বিলুপ্তপ্রায় হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এ ছাড়া গত বছরের নভেম্বরে বনবিভাগের গবেষণায় উঠে এসেছে যে, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গত সাত বছরে ৪২ হাজার বন্যপ্রাণী পাচারের সময় আটক হয়েছে। এসব বন্যপ্রাণীর একটা অংশ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচারের চেষ্টা হচ্ছিল। আরো উঠে এসেছে দেশের প্রায় ২৫টি বেসরকারি চিড়িয়াখানা, অবকাশকেন্দ্র ও বাগানবাড়িতে অবৈধভাবে বন্যপ্রাণীদের নিয়ে রাখা হয়। প্রতিনিয়ত বন্যপ্রাণীরা এভাবেই আমাদের প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি দেশ ও জাতির স্বার্থে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করা দরকার। বন ও বন্যপ্রাণী আমাদের জাতীয় সম্পদ। দেশের বন্যপ্রাণীদের রক্ষা করতে হলে অবশ্যই বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন বিভাগকে শক্তিশালী হতে হবে। সেখানে দক্ষ জনবল নিয়োগ দিতে হবে।

তাসনিম জাহান তুলি

শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

‘প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধে পদক্ষেপ জরুরি’

একুশ শতকের এ যুগে জনসংখ্যার ঊর্ধ্বমুখী চাপে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে

নানাবিধ প্রয়োজন। আর এসব প্রয়োজন মেটাতে হাতে নেওয়া হচ্ছে যত্রতত্র প্রকল্প। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাহীন এসব প্রকল্পে যেখানে-সেখানে ইটভাটা ও কল-কারখানা স্থাপন ইত্যাদির মতো অসচেতন কর্মকান্ডে পরিবেশ আজ বিপর্যস্ত। জৈব-অজৈব বর্জ্যরে অব্যবস্থাপনায় উন্নয়নশীল দেশগুলো এখন মারাত্মকভাবে জর্জরিত। যা মাটি, পানি ও বায়ুদূষণ ঘটিয়ে ভূমির উর্বরতা শক্তিকে বিনষ্ট করছে, পানিতে বসবাসকারী জীব-অণুজীবের স্বাভাবিক জীবনে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে এবং বায়ুদূষণজনিত রোগব্যাধির সৃষ্টি করছে। এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে অবাধ বৃক্ষ নিধন ও রেইন ফরেস্টসমূহে চলমান ধ্বংসযজ্ঞের কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়াসহ মেরু অঞ্চলের বরফ গলতে শুরু করেছে, যা সমুদ্রের পৃষ্ঠের উচ্চতা ১.৫ মিটার পর্যন্ত বাড়িয়ে দেবে। ফলাফল হিসেবে ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাসসহ পৃথিবীর সমুদ্র তীরবর্তী নিম্ন জনপদগুলো তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর তাই ভবিষ্যৎ বিপর্যয়ের হাত থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে আন্তর্জাতিকভাবে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রকৃতি সংরক্ষণে সবাইকে সচেতন ও মনযোগী হয়ে একযোগে কাজ করতে হবে।

মো. মিজানুর রহমান

শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

‘ক্ষয় নয়, চাই প্রকৃতি সংরক্ষণে স্বচ্ছ বাস্তবায়ন’

বর্তমান পৃথিবীতে মানুষের রয়েছে অবাধ চাহিদা, অন্যদিকে বিজ্ঞান মানুষকে করে তুলেছে স্বার্থপর ও যান্ত্রিক। মানুষ তার চাহিদা পূরণের জন্য পরিবেশের নানাভাবে ক্ষতি করে যাচ্ছে, এতে প্রকৃতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। মানুষ বসবাসের জন্য অবাধে বৃক্ষ নিধন ও বনভূমি উজাড় করছে। প্রাকৃতিক সম্পদের অসচেতনতা ও অপব্যবহার, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়ন পরিবেশের ওপর নানা বিরূপ প্রভাব ফেলছে। শিল্প-কলকারখানার বর্জ্য, গাড়ির বিষাক্ত ধোঁয়া, ওজন স্তরের ক্ষয়, অ্যাসিড বৃষ্টি, যার ফলে বায়ু ও পানিতে দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জমিতে সার ও কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। একটা সময় ছিল মানুষ প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে টিকে থাকত, কিন্তু এখন প্রকৃতি টিকে থাকে মানুষের ওপর নির্ভর করে। একবিংশ শতাব্দীতে এসে মানুষ প্রকৃতির সুরক্ষা চিন্তা করে নিজেদের সচেতনতা ও করণী সম্পর্কে জানে। শুধু বাস্তবায়নের অপেক্ষা। মানুষের উচিত নিজেদের প্রয়োজনকে দূরে রেখে প্রকৃতির স্বার্থে গ্যাস, জ্বালানি তেল এবং কয়লার ব্যবহার যত দ্রুত সম্ভব কমাতে হবে, সঙ্গে নবায়নযোগ্য শক্তির ওপর নির্ভরশীল হতে হবে। সমাজের সবাই মিলে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি তৈরি করতে হবে। এ কাজের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের চেয়ে বিভিন্ন দেশের সরকারের করণীয় সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে আশার বিষয় এই যে, সব দেশের জন্য নবায়নযোগ্য শক্তির খরচ নাগালের মধ্যে। প্রতিটি দেশের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধের

কর্মসূচি ও আলোচনার মাধ্যমে পরিবেশে সুরক্ষা করতে হবে। সহযোগিতা, উন্নয়নের মেলবন্ধনের

মাধ্যমে যৌথ উদ্যোগে পরিবেশ সুরক্ষণের কাজ সফল হতে পারে।

নাইমা সুলতানা

শিক্ষার্থী

দর্শন বিভাগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

‘প্রকৃতি সংরক্ষণে চাই কার্যকর পদক্ষেপ’

আজ বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবস। প্রকৃতি সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত এক অমূল্য সম্পদ। যা মানুষের জন্য অনেক মঙ্গলজনক। মানুষ কখনো প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারবে না। তাই মহান সৃষ্টিকর্তা যা আমাদের জন্য প্রদান করেছেন তাই আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে। বর্তমান শিল্পায়নের যুগে প্রকৃতি বিভিন্নভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। শিল্প-কারখানার বর্জ্য পদার্থসমূহ নদী ও সাগরে পতিত হয়ে সেগুলোর নাব্যতা হারাচ্ছে। অনেক নদী এখন মৃত্যুর পথে। যার ফলসরূপ অনেক জলজপ্রাণী হুমকির মুখে। নৌযান ও জাহাজ চলাচলের ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়াও বিভিন্ন পানিবাহিত রোগজীবাণু বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বন ও সংরক্ষিত পাহাড়ি এলাকাসমূহ। এই বন ও পাহাড়ি এলাকাও আজ নানাভাবে হুমকির মুখে আছে। গ্লোবাল অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট অন বায়োডাইভারসিটি অ্যান্ড ইকোসিস্টেম সার্ভিস বা আইপিবিইএস-এর রিপোর্ট অনুসারে, বন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর জৈববস্তু ৮২ শতাংশ কমে গেছে, প্রাকৃতিক বাস্তুসংস্থানের প্রায় অর্ধেক অঞ্চল শেষ হয়ে গেছে এবং দশ লাখ প্রজাতির সামনে বিলুপ্তির ঝুঁকি রয়েছে। এগুলোর অধিকাংশই মানুষের ক্রিয়াকলাপের ফল। ২৫ শতাংশ গাছপালা এবং প্রাণীজ প্রজাতি আজ বিলুপ্তির পথে।

বাংলাদেশের সংবিধানেও প্রকৃতি সংরক্ষণের ওপর

জোর দেওয়া হয়েছে। তাই, শুধু কাগজে নয় প্রকৃতি সংরক্ষণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। অন্যথায়

নানাবিধ সমস্যার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবী।

মোহাম্মদ এনামুল হক

শিক্ষার্থী, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close