reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৬ জুলাই, ২০২১

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ঈদ উদযাপন

করোনাকালে কেটে গেল আরো একটি ঈদ। মানুষ যখন প্রিয়জন হারানোর শোকে ব্যথিত; ঠিক তখনই খুশির বার্তা নিয়ে উপস্থিত মুসলিম জগতের সবচেয়ে আনন্দের দিন পবিত্র ঈদুল আজহা। করোনা পরিস্থিতিতে এবারও ব্যতিক্রমভাবেই উদযাপিত হয়েছে এই ঈদ। করোনাকালীন দীর্ঘদিন ছুটিতে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের কেমন কাটল ঈদ? বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের ঈদ উদযাপন তুলে ধরেছেন জবি শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ

‘ঈদের রং যেন ফিকে হয়ে আসছে’

ছেলেবেলার ঈদের সঙ্গে বড়বেলার ঈদের বেশ ফারাক। মনে হয় ঈদের আনন্দ যেন কয়েকগুণ কমে গেছে। অবশ্য এই অবস্থার সঙ্গে অভ্যস্ততাও হয়ে গেছে। এখন আবার নতুন বাস্তবতা হিসেবে যুক্ত হয়েছে করোনা মহামারি। বিশেষ করে এবারের ঈদে আনন্দের চেয়ে আতঙ্ক ছিল আরো বেশি। কয়েক সপ্তাহ ধরেই কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। তাই ঈদের আমেজেও যেন ভাটা পড়েছে। ঈদের নামাজ, কোরবানি, আত্মীয়দের বাসায় যাওয়া সবকিছুতেই শুধু সংক্রমণের দুশ্চিন্তা। তবে ভালো দিক হলো, সবার মাঝে সচেতনতা কিছুটা হলেও বেড়েছে। নামাজে, কোরবানির মাংস বিতরণে সবখানেই মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার একটা প্রবণতা দেখা গেছে। আর শহুরে ঈদ সবসময় মানুষের সঙ্গে একটু হলেও বিচ্ছিন্নতা থাকেই। তবু এর মাঝেই আনন্দ খুঁজে নিয়ে ঈদ পার করলাম। পৃথিবী থেকে মহামারি উঠে গিয়ে যেন শান্তি ফিরে আসে, এটিই ছিল এই ঈদে মহান আল্লাহর দরবারে প্রধান প্রার্থনা।

ফারহান ইশরাক

শিক্ষার্থী, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

‘করোনায় মলিন ঈদ আনন্দ’

বছর ঘুরে আবার মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রাণের উৎসব ঈদুল আজহা উদযাপিত হলো। ঈদ আনন্দ বলতে শৈশব-কৈশোরে ফেলে আসা সেই স্মৃতিমাখা সময়টাকেই বুঝি। সময়ের পরিক্রমায় প্রতি বছর ঈদ এলেও ফিরে আসে না ফেলে আসা সোনালি শৈশবের ঈদ। তার ওপর দেড় বছরের বেশি সময় ধরে তান্ডব চালানো করোনা আরো মলিন করে দিয়েছে ঈদ আনন্দ। আশপাশে স্বজন হারানোর আর্তচিৎকার, হাসপাতালে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়া মানুষের করুণ আকুতি উপেক্ষা করে মোটামুটি খাপছাড়াভাবে উদযাপিত হলো ঈদুল আজহা। তৃতীয়বারের মতো এবারও অনেকটা গৃহবন্দি হয়ে পালন করলাম ঈদুল আজহা। আত্মীয়স্বজন ছাড়া আর করোনা আতঙ্কেই কাটল এবারের ঈদ। কেমন যেন ছন্দপতন বিশ্বজুড়ে! তবুও এই মহাক্ষণে বিশ্বের কোটি প্রাণের একটাই চাওয়া ধরণী ফিরে পাক তার আপন রূপ। মহামারিহীন এক রঙিন পৃথিবীতে প্রাণের মেলবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে উদযাপিত হোক সব ধর্মীয় উৎসব এমনটাই কাম্য।

ইসরাত জাহান চৈতী

শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

‘কেটে গেল আরেকটি

হর্ষ-বিষাদময় ঈদ’

বড় হওয়ার সঙ্গে ঈদ আনন্দগুলো ক্রমশ ম্লান হয়ে যাচ্ছে। মহামারি করোনা ঈদকে আরো বিষাদময় করে তুলেছে। এবারের ঈদও বরাবরের মতোই কেটেছে। ঈদের দিন সকালে ঈদের জামাত তাই আগের দিন দ্রুত ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল সেরে নিলাম। এরপর প্রস্তুত হয়ে ঈদগাহে গেলাম নামাজ আদায় করতে। মহামারিকালীন চতুর্থ ঈদে ঈদগাহে নামাজ পড়তে পেরেছি, এটাই স্বস্তি। ঈদগাহ থেকে ফিরে গরু কোরবানির কাজে সহায়তা করেছি। রান্না শেষে খাওয়া-দাওয়া সম্পন্ন করে মাংস দিতে গিয়েছিলাম আপুর বাড়িতে। এ ছাড়া প্রযুক্তির কল্যাণে ঘরে বসে সোশ্যাল মিডিয়া, মেসেজ চালাচালি আর অডিও ও ভিডিও কলের মাধ্যমেই সবার মাঝে ঈদ আনন্দকে ভাগাভাগি করে নিয়েছি। এভাবেই কেটে গেল হর্ষ-বিষাদময় আরো একটি ঈদ। অসুস্থ পৃথিবীতে সুস্থ থেকে পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটাতে পেরেছি এটাই তৃপ্তি।

আজাহার ইসলাম

শিক্ষার্থী, ল’ অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

কুষ্টিয়া

‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে আনন্দে কাটল ঈদ’

মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে বড় ও আনন্দপূর্ণ হচ্ছে ঈদের দিন। তবে এবারের ঈদের চিরচেনা রূপ একদম দেখা মেলেনি। নেই কোনো জাঁকজমক, নেই সেই আগের মতো উদ্দীপনা। এর কারণ করোনাভাইরাসের আতঙ্ক। তবে সেই ছোট থেকে ঈদুল আজহা বা কোরবানি নিয়ে আমার একটি বিশেষ আনন্দ কাজ করে। আমার দাদুর বাড়ি জমিদারবাড়ি হিসেবেই পরিচিত। তাই ঈদ এলে সবকিছু যেন নিজ নিজ নিয়মে সেজে উঠে। কিন্তু করোনার কারণে এবারের ঈদে হয়তো সবকিছু নিজ নিজ নিয়মে সাজতে পারেনি। তাও প্রতিবারের মতো এবার কোরবানির ঈদে গ্রামের বাড়ি আসলাম। ঈদের আগের দিন রাত থেকে সকাল পর্যন্ত প্রতিবেশী কিছু মহিলা এসে রুটি পিঠা বানানোর কাজ করে, সেগুলো দেখছিলাম আর উনাদের সঙ্গে গল্পও করছিলাম অনেক রাত পর্যন্ত। তারপর সকালে গরু জবাইয়ের পর দুপুরের মধ্যে সেই মাংস নিজের জন্য এক ভাগ রেখে, প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের মধ্যে দুই ভাগ বিতরণ করা হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাংস বিতরণ হয়, কারণ এ সময়টা আমাদের সবার জন্য নিরাপদ থাকা জরুরি। এরপর গ্রামের প্রায় সব বয়সের প্রতিবেশীরা আসে আমাদের ঘরে, সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে একসঙ্গে রুটি-মাংস খওয়া হয়। করোনামুক্ত সেই ঈদের দিনের পরিবেশ আর এখনকার ঈদের মধ্যে পার্থক্য থাকলেও ভালোই কেটেছে এবারের ঈদ।

আয়েশা সিদ্দিকা

শিক্ষার্থী, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

‘পরিবারের সঙ্গেই কেটেছে ঈদ’

বিগত কয়েকটি ঈদের মতো এবারও করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতে এসেছে ঈদুল আজহা। দীর্ঘ বিরতিতে তাই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেই কেটেছে এবারের ঈদ। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে সেমাই খাওয়া, লুডু খেলা, বিকালে সাজুগুজু করে সবার সঙ্গে সেলফি তোলা, সবার সঙ্গে ফোনালাপ, সন্ধ্যায় নাশতার আড্ডা, রাতে পরিবারের সঙ্গে টেলিভিশনে ঈদ আয়োজনের নানা অনুষ্ঠান দেখার মধ্য দিয়েই দিনটি কেটে গেছে। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে যথারীতি সবার সঙ্গে দিনভর ভিডিও কলে আলাপন, আড্ডা। এইতো এভাবেই কেটে গেল ঈদের সময়টুকু। আমাদের এই সীমাবদ্ধতার মধ্যেই পরিবারের সঙ্গে আনন্দটা খুঁজে নিয়েছি। এলাকার মধ্যে সংক্ষিপ্তভাবে ঘোরাঘুরি হলেও আত্মীয়দের বাসায় যাওয়া হয়নি। তবে কোরবানি, মাংস কাটা, পরিমাপ, বিতরণ, এসবের মাঝে আনন্দ ছিল অপরিসীম। আপনজনের মাঝেই রয়েছে ঈদের প্রকৃত আনন্দ। দ্রুতই পৃথিবী আগের মতো সুস্থ হয়ে উঠবে এবং আগের মতো সবার কাছে ঈদের আনন্দ ফিরে আসবে এমনটাই প্রত্যাশা।

মোছা. জান্নাতী বেগম

শিক্ষার্থী, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

‘যান্ত্রিক শহরেই কেটেছে ঈদ’

করোনায় যেমন সবকিছু থমকে গেছে, ঠিক সে রকমই ঈদের মজাটাও শৈশবের স্মৃতিতে আটকে গেছে। দিন দিন যত বড় হচ্ছি ঈদের আনন্দ ততই কমে যাচ্ছে। আগের মতো আর সালামি নিতে বাড়ি বাড়ি যাওয়া হয় না, টিভি ছেড়ে নতুন জামা জুতা পরে ঈদের গান, নাটক দেখা হয় না, মনের আনন্দে ঘুরে বেড়ানো ও আর হয় না। সবকিছু যেন একদম থমকে গেছে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বদলে দিয়েছে ঈদের সেই চিরচেনা আমেজ। প্রতি মুহূর্তে নতুন সংক্রমণ, নতুন মৃত্যুর খবরে সবাই আতঙ্কিত। এমন অসুস্থ পৃথিবীতে যে ঈদ পালন করতে হবে, তা কখনো ভাবিনি। করোনা আতঙ্কে এবারের ঈদ আমার কাছে ফ্যাকাসে মনে হয়েছে। ঈদের আমেজ যেন বজায় থাকে, সেজন্য মা হরেক রকমের রান্না করেছেন, পরিবারের কিছু সদস্যকে দাওয়াত দিয়েছে। করোনার কারণে অনেকেই আসতে পারেনি। যারা এসেছে তাদের সবাই একসঙ্গে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম, ছবি তুললাম। তাও যেন আগের মতো আর ঈদের আমেজটা পেলাম না। কিন্তু কী আর করার না চাইলেও এর মধ্যেই আনন্দ খুঁজে নিতে বাধ্য হলাম।

রওশন জাহান সুমাইয়া

শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close