মোহাম্মদ অংকন

  ১৫ জুন, ২০২১

আম বেচে সাড়া ফেলেছেন সিংড়ার ছয় শিক্ষার্থী

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের মার্চে বন্ধ হয়ে যায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে পনেরো মাসেরও বেশি সময় পেরিয়েছে। পরিস্থিতি প্রতিকূলে থাকায় খোলা সম্ভব হয়নি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ এ সময় শিক্ষার্থীরা যেমন হতাশায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন, তেমনি পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি কিংবা পার্টটাইম চাকরি হারিয়ে বিপাকে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। বাড়িতে কতটা সময় আর অলসভাবে বসে থাকা সম্ভব? যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছেই না, তখনই আমের ব্যবসায় নেমে পড়েন বিশ্ববিদ্যায়পড়ুয়া ছয় শিক্ষার্থী। আমের মৌসুম হওয়ায় জমে উঠেছে তাদের আমের ব্যবসা। রাজশাহীর বিভিন্ন আমের বাগান থেকে সংগ্রহ করা আম তরুণ এই উদ্যোক্তাদের হাত ধরে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

করোনাকালে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মির্জা মো. শাফি কালাম জানাচ্ছিলেন তাদের এই পথচলার গল্প। তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ, বাসাতেই বসেছিলাম, অবসর সময় কাটছিল। তাই কয়েকজন বন্ধু মিলে শুরু করি অনলাইনে আম বিক্রি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ক্রেতারা বাজার থেকে যে আমগুলো কিনে খান, সেগুলোতে ক্ষতিকর কেমিক্যাল ও মেডিসিন দেওয়া থাকে। আমরা একদম সরাসরি বাগান থেকে ফ্রেশ আম সরবরাহ করার লক্ষ্য নিয়েই কাজ শুরু করি। এবং বেশ সাড়া পাচ্ছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা চারজন বন্ধু মিলে উদ্যোগ গ্রহণ করি। আমাদের কাজের তৎপরতা দেখে পরে আরো দুজন আমাদের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এতে আমাদের কাজের গতি বাড়তে থাকে। আমরা সাহসও পেতে থাকি।’ অনলাইনে আমের ব্যবসাকে মাথায় নিয়ে আমের শহরখ্যাত রাজশাহীতে ছয় বন্ধু তিনটে বাগান কেনেন এক বছরের জন্য। মূলত তারা সেই বাগান থেকে আম সংগ্রহ করে সাপ্লাই দিয়ে থাকে। এরই মধ্যে চাহিদা বেশি হওয়ায় তারা আশপাশের বাগান থেকেও আম সংগ্রহ করে বিক্রি করতে থাকে। তবে পাইকারি ও আড়ৎ বাজার থেকে তারা আম নেন না। কেননা, তাতে শতভাগ কোয়ালিটি নিশ্চিত করা যায় না। এ বিষয়ে কথা হয় উদ্যোক্তাদের আরেক সদস্য সৈয়দ মেহেদী হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, “প্রথমে আমরা ‘চাষিঘর’ নামে ফেসবুকে একটি পেজ খুলি এবং প্রচারণা চালাতে শুরু করি। আমাদের প্রচার-সহযোগিতায় এগিয়ে আসে বন্ধুবান্ধবী ও পরিচিতজন। আমাদের প্রতি গ্রাহকদের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়তে থাকে।’ ব্যবসার প্রচার-প্রসার ও পলিসিগত বিষয় বলতে গিয়ে মেহেদী আরো বলেন, ‘আমরা সর্বপ্রথম ক্রেতার সঙ্গে ভার্চুয়ালি যোগাযোগ করে দামসহ যাবতীয় তথ্য দিতে থাকি। সব শুনে তারা যখন অর্ডার কনফার্ম করেন, তখন কুরিয়ার খরচ বা ক্ষেত্রবিশেষ অর্ধেক খরচ অগ্রিম নিয়ে নিই। বেশির ভাগ অর্ডার আমরা কুরিয়ারে পাঠাই। তবে পরিমাণে বেশি অর্ডার থাকলে বাস, ট্রাক বা ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে পাঠাই। বাংলাদেশ সরকার ম্যাংগ্যো স্পেশাল ট্রেন চালু করায় আমাদের সুবিধা হয়েছে।” এখন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে অনেক শিক্ষার্থীরা অনলাইনে আম, লিচু বিক্রিতে ঝুঁকছেন এবং নিজেরা সাময়িক একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে নিচ্ছেন। নাটোরের সিংড়ার এই ছয় তরুণ শিক্ষার্থীর আম ব্যবসার সফলতার গল্প এরই মধ্যে অন্যদের মাঝে অনুপ্রেরণার মাধ্যম হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close