reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৪ জুন, ২০২১

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা

‘বেড়েই চলেছে মানসিক অবসাদ ও বিষণ্নতা’

বারবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার তারিখ পেছালেও এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ পাননি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এখনো অনিশ্চয়তার মেঘ কাটেনি। সেশনজটের সঙ্গে বেড়েই চলেছে শিক্ষার্থীদের মানসিক অবসাদ, বিষণ্নতা এবং নৈরাশা। বেড়েছে ক্যাম্পাসে ফেরার আকুলতা। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরতে চান, ফিরে পেতে চান তাদের প্রাণের স্পন্দন।

স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরে শিক্ষার্থীরা তাদের মস্তিষ্কে জং ধরা নিউরনগুলো সতেজ করতে চান। আবারও ঘুরে দাঁড়াতে চান সাহিত্য, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানচর্চায়। তাই অপেক্ষার প্রহর আরো দীর্ঘ না করে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা

গ্রহণ করা উচিত।

সাকিব আহমেদ

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

‘শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি’

করোনা আক্রান্ত হায়ে এখনো দেশে প্রায় ২০ থেকে ৪০ জনের মৃত্যু হচ্ছে। তার মধ্যে অনেকেই আবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ থাকলেও ক্যাম্পাস খালি পেয়ে হাজার হাজার মানুষের বিচরণ তো রয়েছেই, নেই কোনো সতর্কতা। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে আবাসন সংকট

বিশেষ করে যারা গণরুমে গাদাগাদি করে

থাকছে তারা বেশি স্বাস্থ্য সংকটে পড়বে। মেসগুলোর অবস্থাও আরো বেশি নাজেহাল।

তাই এ মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিলে করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা অবশ্যই রয়েছে। আর একদিকে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম যেমন ব্যাহত হচ্ছে; তেমনি শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যেরও চরম অবনতি হচ্ছে। বেকারত্বের দাসত্ব আমাদের চরমভাবে গ্রাস করছে। তাই এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে ক্যাম্পাস খোলার কোনো বিকল্প দেখছি না। সেক্ষেত্রে প্রশাসন কর্তৃক কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে, প্রতিটি শিক্ষার্থীর টিকা নিশ্চিত করে এবং আপাতত করোনাকালীন বহিরামুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করে অতিদ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হোক।

মারজুকা রায়না

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

‘শিক্ষাক্ষেত্রে সচল অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে’

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে ছাত্র-শিক্ষকের অর্ধেক অংশই হতাশাগ্রস্ত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার দরুণ চিন্তাশীল সমাজ গঠনে গোটা জাতি বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছে। এতে করে অনেক শিক্ষার্থী মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছেন। যাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর কথা ছিল তাদের অনেকে অকালে ঝরে যাচ্ছেন। গৃহবন্দি থাকার দরুণ অনেক মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের বাবা-মা মেয়ের পড়াশোনার চেয়ে বিয়ে করে সংসারি হওয়াটাকে প্রাধান্য দিচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে একটা গুরুতর পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে গোটা ছাত্রসমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে। সময়ের মাত্রা সংকোচন করে তাই অতিদ্রুত শিক্ষার সচল অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।

জান্নাতুল ফেরদৌস প্রিয়া

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

‘বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিন’

ক্যাম্পাস খুললে আবাসিক হলে সংক্রমণ নিয়ে সরকার চিন্তিত। কিন্তু যেসব শিক্ষার্থীরা বাসায় অবস্থান করছেন, জীবিকার তাগিদের তাদের বাসার সবাই বাইরে যাচ্ছে হর হামেশা, এখানে কি তাদের করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নেই? যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয়, চতুর্থ বর্ষে অবস্থান করছেন, তারা অল্প কিছুদিনের মধ্যেই কর্মক্ষেত্রের লড়াইয়ে প্রবেশ করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বেশির ভাগ শিক্ষার্থী নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। সবার বাসার সংগতি উচ্চবিত্তদের মতো না, সেক্ষেত্রে আর্থিকভাবে তাদের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভার্সিটি বন্ধ থাকায় ঘরে বসে থেকে। অথচ সরকারি সার্কুলার ঠিকই একের পর এক হয়ে যাচ্ছে, অনেক চাকরির পরীক্ষার লিখিত এবং ভাইভাও হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, সঙ্গে পরিবারগুলো আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে আছে। সরকারের প্রতি অনুরোধ দয়াকরে

বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিন।

মো. মিজানুর রহমান

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

‘অনিশ্চিত জীবন আর কত দিন’

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের ৭৬ শতাংশ শিক্ষার্থী হতাশায়, ৭১ শতাংশ উদ্বেগ এবং ৭০ শতাংশ মানসিক চাপে নিমজ্জিত। অনেকে পড়া ছেড়ে মাদক কিংবা অনলাইন গেমে আসক্ত হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত হাজারো শিক্ষার্থী বই ছেড়ে কাজে লেগে পড়েছে। আজ ছাত্রসমাজ চরম বিপর্যয়ের মুখোমুখি। করোনায় মৃত্যুর চেয়ে আত্মহত্যায় মৃত্যুহার দ্বিগুণ। যার সিংহভাগ শিক্ষার্থী। এই অনিশ্চিত জীবন থেকে আমরা মুক্তি পেতে চাই, আপন স্রোতে আবার ফিরে যেতে চাই।

রিম্পা খাতুন

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়া হোক’

২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। করোনাকালীন অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চললেও তা ফলপ্রসূ হয়ে উঠেনি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী মফস্বল এরিয়ার হওয়ায়, উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবার আওতাভুক্ত না

হওয়ায় অনলাইন ক্লাস করতে সক্ষম হয়নি। অপরদিকে শিক্ষার্থীদের বিরাট একটা অংশ নিজের পরিবারের হাল ধরতে গিয়ে বিভিন্ন চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।

কিন্তু এ অবস্থা নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে ক্লাস করানোর সিদ্ধান্ত এখন সময়ের দাবি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের জন্যে যেমন বিরাট ক্ষতি হচ্ছে। তাই স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিয়ে অনতিবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়া হোক।

মো. জহির রায়হান লিমন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান

ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

গোপালগঞ্জ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close