ফরহাদ আলম

  ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০

ফিরে দেখা ক্যাম্পাসের প্রথম বছর

চার দেয়ালে ঘেরা অস্বাভাবিক জীবন অতিবাহিত করতে করতে শুধু মনে পড়ে আমার খাতা, কলম, বই, আমার বন্ধুরা সব কই। ভাল্লাগেনা এই মিথ্যা ছুটি, ক্যাম্পাসে চেয়ে রই। প্রথম বর্ষে কাটানো দিনগুলোর স্মৃতি স্মরণ করে বলছিলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের ৭৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার ক্যাম্পাস প্রতিনিধি ইমরান খান।

সেই একই অনুভূতি প্রকাশ করে কৃষি ব্যবসা ব্যবস্থাপনা অনুষদের ১৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী কিং নামে পরিচিত মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, ফিরে পাওয়ার মতো নয় সেই অতীতের সোনালি স্মৃতিগুলো। বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া এক ধরনের সোনার হরিণ পাওয়ার মতোই। কারণ, ভার্সিটি একটি স্বপ্নের জায়গা, আবেগঘন একটি নাম। নিজের বাড়ি ছেড়ে নতুন জায়গায় কিছু নতুন মুখের সঙ্গে পরিচিতি লাভ করে নতুন স্বপ্ন দেখা। যদিও মন খারাপ থাকার কথা ছিল কিন্তু ঘটনাটা উল্টো। সারা দিন ঘোরাঘুরি, খাওয়া- দাওয়া, সব নতুন মুখদের সাথে আড্ডায় দিনগুলো কাটানো ছিল রাতে ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখার মতো। ঘরে বসে বন্দিজীবনে বার বার মনে পড়ে স্মৃতিগুলো। আর কি ফিরে পাবো সেই দিনগুলো?”

আবেগে ভরপুর বিশ্ববিদ্যালয় নামটি প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীর জন্যই স্মৃতি হয়ে থাকে হৃদয়ের এক কোণে। কিন্তু প্রথম বর্ষটা থাকে স্মৃতির পাতায় অন্যতম স্থানে এবং বেশি নাড়া দেয়। প্রথম বর্ষের মুহূর্তগুলো মনে পড়ে না এন কাউকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। নাই বললেও চলে।

আবেগে উচ্ছ্বাসে দলবেঁধে ক্যাম্পাসের প্রতিটি কোণায় বিচরণ করার সময় শুধু প্রথম বর্ষেই পাওয়া যায়। রাতের আঁধারে মুড়ি পার্টি, চা পার্টি, মাঠে গিয়ে আড্ডা দেওয়া, গিটারের সঙ্গে গানের আসর জমানো। সেই সোমবারের দিনটি। তখনো করোনা ভাইরাসকে উপেক্ষা করে চালিয়ে যাচ্ছি ক্লাস। ক্লাস শেষে বিকেল হয়ে গেল, আড্ডার আসর জমালো পুরাতন ফ্যাকাল্টিতে। সেখানে বসে অতীতের স্মৃতিগুলো বলছিল সবাই নিজের মতো করে মধু মিশিয়ে। আড্ডার মাঝে রোমাঞ্চকর ভাব ফুটিয়ে তুলতে তামজিদ, মাকামা মাহমুদ, প্রান্ত, স্মরণ এবং নয়ন মন্ডলের তুলনাই হয় না। ফটোগ্রাফার হতে চাওয়া মামুনের ছবি তোলার স্টাইল ছিলো দেখার মতো। কখন যে রাতের আঁধারে ডুবে গেলাম টেরই পাইনি।

মনে পড়ে গেল সেই ক্যাম্পাসে প্রথম পদার্পণের স্মৃতি। ক্লাসে প্রবেশ করেই অপরিচিতি মুখগুলো হঠাৎ পরিচিতি লাভ করতে শুরু করলো। ক্লাস শেষে মেতে উঠেছিলাম হইহুল্লোড়ে। সেদিন প্রথম ক্লাসে অধ্যাপক এম এ জলিল স্যারের কথা এখনও নাড়া দেয়, আমাকে সালাম দিলা, ভালো। কিন্তু বাইরে রিকশাওয়ালা দেরকে সম্মান করো?

ক, খ, অ, ই, আলিফ, বা, থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজের সেই বাঁধা ধরা নিয়ম এখানে পঙ্গু। নতুনভাবে নতুন জ্ঞানের খোঁজে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবির্ভাব। অনেক মেধাবী মুখের সঙ্গে পরিচিতি লাভ করে নতুনভাবে আকাশছোঁয়া স্বপ্ন দেখা শুরু হলো। বহু দিনের লালিত স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে এক বিশাল আয়োজন। পড়া লেখার প্রতি কেউ সিরিয়াস, কেউ হাস্যরত্মক কেউ আবার নিজেকে নিয়ে উদাসীন। বেশ বৈচিত্রময় মেধাবী শিক্ষার্থীরা ।

ক্যাম্পাসে আড্ডার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে পুরাতান ফ্যাকাল্টি, প্রেম পুকুর, প্যারিস রোড, হতাশার মোড়, ওয়াইফাই জোন, ক্যাফেটেরিয়া, অক্সফোর্ড রোড এবং এগ্রোনোমি ফিল্ড সব জায়গায় নবীনদের পদচারণায় মুখরিত ছিল সেদিন। সঙ্গে আনন্দে আত্মহারা হয়ে ছবি তুলার ক্লিক ক্লিক শব্দটা ছিল মনোমুগ্ধকর। এভাবেই বুকভরা আশা এবং সাহস নিয়ে পথচলা ৮৭ একরের শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close