মো. আফসারুল আলম মামুন

  ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০

ধর্মনিরপেক্ষতার অনন্য নজির খুবি

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) জন্মলগ্ন থেকেই বাংলাদেশের একমাত্র ছাত্ররাজনীতিমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশের একমাত্র ক্যাম্পাস সেখানকার মাটিতে এখন পর্যন্ত কোনো রক্তের দাগ লাগেনি। সন্ত্রাসী হামলা বা রাজনৈতিক অস্থিরতা কোনটিও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্র মাটিকে কলঙ্কিত করতে পারেনি। খুবির শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত না হলেও প্রত্যেক শিক্ষার্থীই রাজনীতি সচেতন। তারই ধারাবাহিকতায় ক্যাম্পাসে গড়ে উঠেছে ছাত্রবিষয়ক পরিচালক দফতর থেকে অনুমতিপ্রাপ্ত প্রায় ৩০টি সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন। এ ছাড়াও রয়েছে ধর্মীয় এবং আর্থিক নানা সংগঠন। যার মাধ্যমে রাজনীতিতে সরাসরি সক্রিয় না হয়েও প্রতিটি শিক্ষার্থীর মাঝেই সৃষ্টি হচ্ছে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা।

এ ছাড়া প্রাকৃতিক পরিবেশেও বাংলাদের অন্যতম লাবণ্যময় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলো আমাদের খুবি। ক্যাম্পাসের পরিবেশ অবলোকন করলে মনে হয় এই যেন ক্ষুদ্র এক সুন্দরবন। রাজনৈতিক এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের মতোই খুবির জন্মলগ্ন থেকেই ধর্মীয় এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ বহমান। ১০৬ একরের এই বিশাল ক্যাম্পাসে রয়েছে দুটি মসজিদ আর একটি মন্দির। দ্বিতীয় একাডেমিক ভবনের সামনের রাস্তা ধরে কিছুক্ষণ হেঁটে গেলেই অপরাজিতা হলের অদূরেই দেখা মিলবে ক্যাম্পাসের একমাত্র দৃষ্টিনন্দন  মন্দিরটির। প্রতিটি হিন্দু পার্বণেই মন্দির থেকে ভেসে আসে ঢাকের বাজ আর তার সঙ্গে শঙ্খের ধ্বনি। গত ১১ আগস্ট মঙ্গলবার যথাবিহিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে মহাসমারোহে উদযাপিত হলো শুভ জন্মাষ্টমী। প্রতিটি উৎসবে মন্দির ঘিরে সনাতন ধর্মাবলম্বী ছাত্র এবং শিক্ষকদের মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়। অনেক মুসলমান ছাত্রও সেই উৎসবে যোগ দেন। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ধরে কিছুটা ভেতর দিকে আসলেই প্রশাসনিক ভবনের কোলঘেঁষেই দেখা মিলবে  বিশ্ববিদ্যালয় জামে মসজিদের? ছোট্ট এই মসজিদটিই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল মসজিদ নামেই পরিচিতি পেয়ে ছিল। আকারে কিছুটা ছোট হওয়ায় জুমার নামাজে তিলধারণের ঠাঁই থাকত নাই। মসজিদ পূর্ণ হয়ে সামনের রাস্তা এমনকি পাশের সাইকেলস্ট্যান্ড নামাজ পড়ার জন্য ব্যবহার করতে হতো। জুমার নামাজ উপলক্ষে খুলনার নানা অঞ্চল থেকে মুসল্লির আগমন হতো খুবির জামে মসজিদে। সম্প্রতি কটকা স্মৃতিস্তম্ভের অদূরে ১৪৫০০ বর্গফুট জায়গা জুড়ে প্রায় ২০০০ মুসল্লি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন আরো একটি মসজিদের উদ্বোধন করা হয়েছে। এই মসজিদই এখন থেকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ নামে পরিচিত পাবে আর পূর্বের মসজিদটি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় জামে মসজিদ হিসাবেই পরিগণিত হবে। গত ২৮ আগস্ট শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ফায়েক উজ্জামান নতুন এই মসজিদের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এরপর জুমার আজান এবং নামাজ দিয়েই নিয়মিতভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। ১৪৫০০ বর্গফুট আয়তনের একতলা বিশিষ্ট এই মসজিদটি এক গুম্বজবিশিষ্ট। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এম আবদুল কাদির ভূঁইয়া ২০০৩ সালে এ মসজিদটির নির্মাণের উদ্যোগ নন। স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের তৎকালীন শিক্ষক মুহাম্মদ আলী নকী মসজিদটির প্রাথমিক নকশা প্রণয়ন করেন। তবে মসজিদের প্রাথমিক ভিত্তির কাজ শুরুর পর দীর্ঘদিন আর এর নির্মাণকাজ এগোয়নি। ২০১৪ সালের ১৬ জুলাই বর্তমান উপাচার্য মসজিদের নির্মাণকাজ পুনরায় শুরু করে এবং তা শেষ করতে নিরন্তর উদ্যোগ নেন। এ সময় মসজিদটির নকশার কিছুটা পরিবর্তন সাধন করে পূর্ণাঙ্গ করা হয়। সমযের পরিক্রমায় যা আজ ষাটগম্বুজের পর এক গম্বুজবিশিষ্ট একতলা মসজিদ  হিসেবে খুলনাঞ্চলে সর্ববৃহৎ। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকার পর প্রথম নামাজে মসজিদটি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক-কর্মচারী উক্ত নামাজে অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়া অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের কোনো উপাসনালয় না থাকলেই তাদের ধর্মীয় উৎসবগুলোও যথাযথ মর্যাদায় খুবি চত্বরে উদযাপিত হয়। আর এভাবেই রাজনৈতিক,  প্রাকৃতিক এবং ধর্মীয় এক সুষ্ঠু পরিবেশের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম বিদ্যাপীঠ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম; যা দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close