reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৭ মার্চ, ২০২১

বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতা

তোমার বুকের সমান

সিকান্দার ফয়েজ

তুমি ছিলে বলে এক দিন

বাঙাল মানুষগুলো জেগে উঠেছিল

রক্তিম সূর্যের মতো আলো নিয়ে তারা

হয়ে উঠেছিল একেকটা ক্ষেপণাস্ত্র।

তুমি ছিলে বলে এক দিন

সমুদ্রে উত্তাল ঝড় উঠেছিল, তীব্র ভয়ংকর!

এই ভূমি, আমাদের মাতৃভূমি, এই কণ্ঠস্বর

সবুজ বনানী মেঠোপথ এমনকি

দূর্বাঘাসগুলো জেগে উঠেছিল বাঁচার আশায়।

আমাদের মিঠেপানি, সাদাবক, দোয়েল পায়রা

এমনকি ঘাসফরিংও স্বপ্ন দেখছিল,

স্বপ্ন দেখা শিখছিল।

এক দিন আমাদের নিদ্রা, আমার পুকুর ঘাট

ভোরের শিশির ভেজা ফসলের মাঠ

ধানের ছড়ায় শীতে লেপ্টে থাকা কৃষকের হাসি

সবকিছু গৃহবন্দি ছিল।

তুমি এলে স্বপ্ন নিয়ে শৃঙ্খল-মুক্তির

স্বাধীন সত্তায় হেসে খেলে

আমরা বাঁচতে পারি,

যেন হাত ধরাধরি করে গোল্লাছুট খেলা যায়

মোনোসার কান্না যেন আলীর হৃদয় ছুঁয়ে যায়,

যেন উলু আর আজানের শব্দ না তোলে দেয়াল।

তুমি ছিলে বলে এক দিন

তালপাতায় বাঙলা লেখা শুরু করি

তালপাতায় আমার মা অ আ ক খ-র

দাগ কেটে দেন।

সেই শিশুবেলা আমি দৌড় শিখি

অজপাড়াগাঁ’র মেঠোপথ ছেড়ে পিচঢালা পথে

যেখানে আজও ছুটে বেড়াই সদর্পে।

তুমি ছিলে বলে এক দিন

কুঞ্জবাবু আমাদের বাড়ি এসে

খোশগল্প করে বলতেন

‘আর ভয় নেই ঘর হারাবার

সাহসের বরপুত্র এসে গেছে, ওই শোনো

উলু আর শঙ্খধ্বনি শোনো’।

এই ভূমি আর কেউ কেড়ে নিতে পারবে না

আমার ভাষা আমার, আমার হাত-পা

বাইরের আলোছায়া, দমকা হাওয়া

সবকিছু আমাদের, এর মালিকানা আমাদের

কি সাধ্য কানাকড়িও এর লুটে নেয় কেউ?

তুমি ছিলে বলে এক দিন

সন্ধ্যা নদীর দাপট দেখে আঁতকে উঠেছিলাম

কীর্তনখোলাও সে কি রুদ্ররোষে ছোটে

আর এই বুড়িগঙ্গা, সেদিন পদ্মার কোলে মাথা ছুঁয়ে

কী নিশ্চিন্তে সাঁতরে সাঁতরে

গিয়ে মিশেছিল বঙ্গোপসাগবে, তুমি ছিলে বলে।

তুমি ছিলে বলে এক দিন

অকস্মাৎ বজ্রকণ্ঠ ভেসে এলো,

ঘুম ভাঙো, জাগো ‘ভায়েরা আমার’

সবাই জেগে উঠল, প্রকৃতি জাগল,

পাখিরা জাগল, গভীর রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে

জাগল জমিন। মায়ের সম্মান বাঁচাতে জাগল খোকা,

বই-খাতা ফেলে বারুদের প্রেম এলো খোকার জীবনে।

ডাকাত পড়েছে ঘরে, হানাদার রাজাকার আর

যত লুটেরার দল সবকিছু কেড়ে নিতে চায়

তুমি ডাক দিলে মুক্তির, স্বাধীনতার;

নিরস্ত্র বাঙালি দু’হাতে নতুন স্বপ্ন নিয়ে

নেমে পড়ল রাস্তায়।

সবুজ জমিন লাল হয়ে গেল রক্ত-দরিয়ায়!

এই বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, মেঘনার কোল

আমাদের কীর্তনখোলা, পায়রা, পদ্মা-যমুনার বুক

এই সবুজ জমিন, খাল-বিল, ডোবা-নালা

বাঙালির লাশে ভরে গেল!

ঘরের কোনায়, গাছের আড়ালে, ঝোপ-ঝাড়ে

ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ল শাড়ির খুঁট, লালচুড়ি

কপালের টিপ, শাঁখার অংশবিশেষ

সিঁদুরের রং সব।

তার পরও থামল না দুর্বার বাঙালি।

ফুঁসে উঠল জমিন

প্রকৃতি বলল, বীর বাঙালি এগিয়ে যাও, আমি আছি

খাল-বিল-নদী বলল, আমরা আছি

সমুদ্র বলল, ভয় নেই জয় তোমাদের!

প্রকৃতি পত্র-পল্লবে ঢেকে দিল দেহ

সমুদ্র দু’হাত ভরে ছুড়ে দিল বান

তোমার পানিতে মারার স্বপ্নটা সত্যি হয়ে গেল;

বাঙালি নতুন করে লিখে ফেলল আত্মপরিচয়।

পিতা তুমি বন্ধু তুমি স্বপ্নদ্রষ্টা বীর

তুমি ছিলে বলে আঁকা হয়ে গেল

তোমার বুকের সমান নতুন এক মানচিত্র

যার নাম বাংলাদেশ!

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close