আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

ভারতে সেনাবাহিনীর অভিযানে ৮ মাওবাদী নিহত

ভারতের মধ্যাঞ্চলের গভীর জঙ্গলে দেশটির বিশেষ বাহিনীর অভিযানে অন্তত ৮ জন মাওবাদী কমিউনিস্ট বিদ্রোহী নিহত হয়েছে। দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী গতকাল শনিবার মাওবাদী বিদ্রোহ দমনে দীর্ঘদিন ধরে চলা তাদের অভিযান আরও জোরদার করেছে।

বার্তাসংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দশকব্যাপী এই সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। বিদ্রোহীরা দাবি করে আসছে, তারা প্রান্তিক আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি ও অধিকার রক্ষার জন্য লড়াই করছে। ঘটনার বিস্তারিত সম্পর্কে জানা যায়, শনিবার ভোরে ছত্তিশগড় রাজ্যের বিজাপুর জেলার বনাঞ্চলে দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। এই অঞ্চল মাওবাদী বিদ্রোহের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।

বিজাপুরের শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা সুন্দররাজ পি. এএফপিকে জানান, তীব্র বন্দুকযুদ্ধের পর আজ বিজাপুর জেলার জঙ্গল থেকে ৮ মাওবাদীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।’ তিনি আরও জানান, নিহতদের কাছ থেকে গ্রেনেড লঞ্চার ও রাইফেলসহ বেশ কয়েকটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযানের অংশ হিসেবে এখনো এলাকাটিতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, গত এক বছরে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে প্রায় ২৮৭ জন মাওবাদী নিহত হয়েছে, যার বেশিরভাগই ছত্তিশগড়ে। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গত বছর বলেছিলেন, ২০২৬ সালের মধ্যেই মাওবাদী বিদ্রোহ সম্পূর্ণভাবে দমন করা হবে।

জানা গেছে, সিপিআই (মাওবাদী) বিশ্বাস করে যে ভারতীয় রাষ্ট্র পরিচালিত হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ, মুৎসুদ্দি বুর্জোয়া ও সামন্তবাদী প্রভুদের সহযোগিতায়। [১৮] দক্ষিণ এশিয়া সন্ত্রাসবাদ পোর্টাল অনুযায়ী, পার্টির দুটি অংশই তাদের ২০০৪ সালের সম্মেলনের পূর্বে কমিউনিজমের ভিন্ন ভিন্ন সংস্করণগুলির সাথে সামঞ্জস্য রেখেছিল, যদিও উভয় সংগঠন ‘শ্রেণি শত্রু ধ্বংসে তাদের বিশ্বাস রেখেছিল এবং এবং গণযুদ্ধকে সাংগঠনিক লক্ষ্য অর্জনের উপায় হিসাবে গ্রহণ করেছিল। কোন্ডাপল্লী সীতারামাইয়া প্রতিষ্ঠিত পিপলস ওয়ার গ্রুপ (পিডব্লুজি) বা জনযুদ্ধ গোষ্ঠী একটি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী অবস্থান পালন করে, যখন মাওবাদী কমিউনিস্ট সেন্টার অফ ইন্ডিয়া (এমসিসিআই) মাওবাদী মনোভাব নিয়েছিল। একত্রিত হওয়ার পর, অন্ধ্রপ্রদেশের পিডব্লিউজি সচিব ঘোষণা করেন যে সিপিআই-মাওবাদী তার চিন্তাভাবনা পথনির্দেশক হিসাবে তার “কার্যক্রমের সমস্ত ক্ষেত্রের মধ্যে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ মতাদর্শিক ভিত্তিকে অনুসরণ করবে।” এই মতাদর্শ অন্তর্ভুক্ত করেছে “দীর্ঘস্থায়ী সশস্ত্র সংগ্রামের” একটি প্রতিশ্রুতি যা রাষ্ট্র ক্ষমতার দখল এবং ক্ষমতা ফিরিয়ে উদ্দেশ্যে।[১৫] ২০১৪ সালের মে দিবসে গণপতি ও অজিৎ (সিপিআই (এমএল) নকশালবাড়ীর সম্পাদক) এক যৌথ বিবৃতিতে এক বিবৃতিতে জোর দিয়েছিলেন যে “একীকৃত দল মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদকে পথিকৃৎ মতাদর্শ হিসেবে গ্রহণ করবে।” দলের মতাদর্শ একটি “পার্টি প্রোগ্রাম”-এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একটি দলিলে, মাওবাদীরা বিশ্বায়নকে বাজার মৌলবাদীদের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে এবং সামাজিক নিপীড়নের একটি রূপ হিসাবে বর্ণ প্রথাকে নিন্দা জানিয়েছে।

ইসলামিক মৌলবাদী ও জঙ্গী সংগঠনগুলির প্রতি মাওবাদী দলের দ্বান্দিক মত আছে। ইসলামিক জঙ্গী গোষ্ঠীর আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াইকে তারা সমর্থন করে পাশাপাশি তাদের ধর্মীয় গোঁড়ামি ও মৌলবাদী দৃষ্টিকে সমালোচনার চোখে দেখে মাওবাদী নেতৃত্ব।

সিপিআই (মাওবাদী) দাবি করে যে তারা গণ যুদ্ধ”, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি নেতা মাও সেতুং কর্তৃক গেরিলা যুদ্ধকালীন সময়ে বিপ্লবী বলপ্রয়োগের একটি কৌশলগত পদ্ধতি, পরিচালনা করছে। তাদের শেষ উদ্দেশ্য হচ্ছে ভারতে একটি নয়া-গণতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে জনগণের সরকার” বা জনতানা সরকার” প্রতিষ্ঠা করা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close