আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী আদেশে যুক্তরাষ্ট্রগামী শরণার্থীরা ক্ষতির মুখে

অস্ট্রেলিয়া সরকার জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী কঠোর পদক্ষেপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রগামী একদল শরণার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সিডনি থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ট্রাম্প অভিবাসনবিরোধী এক নির্বাহী আদেশ বা ডিক্রি জারি করেন। যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে সকল শরণার্থীর আগমন বন্ধ করে দেওয়া হয়।

২০১৬ সালের মার্কিন-অস্ট্রেলিয়া চুক্তির অধীনে, অস্ট্রেলিয়ার অফশোর ডিটেনশন সেন্টার কেন্দ্রগুলোতে আটক থাকা ১,২৫০ জন শরণার্থী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসনের জন্য আবেদন করতে সক্ষম হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ান সরকার জানিয়েছে, গত বছরের আগস্টের শেষ নাগাদ ১,১০৬ জন শরণার্থী ইতিমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন।

স্বরাষ্ট্র বিভাগের একজন মুখপাত্র বলেন, ৩০ জনেরও কম অস্থায়ীভাবে অবস্থানরত ব্যক্তি মার্কিন পুনর্বাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসনের জন্য আবেদন করেছেন। তাদের মামলাগুলো প্রক্রিয়ার বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে বলে তিনি জানান।

শুক্রবার এএফপিকে দেওয়া এক বিবৃতিতে মুখপাত্র বলেন, ট্রাম্পের এ আদেশ সকল শরণার্থী আবেদনের উপর প্রভাব ফেলবে। যার মধ্যে অস্থায়ীভাবে অবস্থানরত ব্যক্তিরাও অন্তর্ভুক্ত। বিভাগটি জানিয়েছে, শরণার্থী পুনর্বাসন কর্মসূচির পরিকল্পনা সম্পর্কে অস্ট্রেলিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আরো পরামর্শের অপেক্ষায় রয়েছে। ২০১২ সালে প্রবর্তিত এক কঠোর নীতির অধীনে,অস্ট্রেলিয়া নৌকায় করে দেশে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হাজার হাজার অভিবাসীকে অফশোর সংশোধনাগার কেন্দ্রগুলোতে পাঠিয়েছে। তাদের দুটি আটক কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল। একটি নাউরুতে এবং অন্যটি পাপুয়া নিউ গিনির মানুস দ্বীপে।

জানা গেছে , যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিপজ্জনক ৩০ হাজার অভিবাসীকে বন্দীদের নিপীড়নের জন্য কুখ্যাত গুয়ানতানামো বে কারাগারে পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কারাগারটিকে প্রস্তুত করতে এরই মধ্যে তিনি পেন্টাগন ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টকে নির্দেশ দিয়েছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এতথ্য জানা গেছে।

কিউবায় অবস্থিত গুয়ানতানামো বে একটি মার্কিন নৌ ঘাঁটি। এখানে সন্দেহভাজন বিদেশি সন্ত্রাসীদের জন্য উচ্চ নিরাপত্তার কারাগার স্থাপন করা হয়েছে। দশকের বেশি সময় ধরে কারাগারটি হাইতি ও কিউবার সমুদ্র থেকে উদ্ধার হওয়া অভিবাসীদের রাখার জন্য ব্যবহার হয়ে আসছে। গতকাল বুধবার হোয়াইট হাউসে এক ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ‘মার্কিন জনগণের জন্য বিপজ্জনক অভিবাসীদের রাখার জন্য এই কারাগার ব্যবহার করা হবে। কিছু অভিবাসী এতই বিপজ্জনক যে, তাঁদেরকে নিজ দেশে রাখাও আমরা নিরাপদ মনে করি না। তাই তাঁদের গুয়ানতানামো বে কারাগারে রাখব।’

ট্রাম্প প্রশাসনের সীমান্ত নীতির প্রধান কর্মকর্তা টম হোম্যান জানান, বিদ্যমান আটক কারাগারটিকে সম্প্রসারণ করা হবে এবং এটি অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগ সংস্থা (আইসিই) পরিচালনা করবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কত অর্থের প্রয়োজন হবে এবং কীভাবে এটি কার্যকর করা হবে, তা নিয়ে এখনো পরিষ্কার কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন, শরণার্থী অধিকার গোষ্ঠী এবং বিদেশি নেতারা। কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াজ-ক্যানেল ট্রাম্পের এই পরিকল্পনাকে ‘বর্বরতা’ বলে অভিহিত করেছেন।

ইন্টারন্যাশনাল রিফিউজি অ্যাসিসটেন্স প্রজেক্টের ২০২৪ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুয়ানতানামো বে কারাগারে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, শিশুদের শিক্ষার অভাব এবং ফোন কল সুবিধার অভাব রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতি ঘোষণার ধারাবাহিকতায় এ সিদ্ধান্ত এল। প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথের দিনই তিনি এই নীতি ঘোষণা করেন। গত সপ্তাহে অভিবাসী আগমন ঠেকাতে জরুরি অবস্থা জারি করে মেক্সিকো সীমান্তে ১ হাজার ৬০০ সেনা মোতায়েন করেন। সেসঙ্গে সামরিক ফ্লাইটে অভিবাসীদের বের করে দেওয়ার নির্দেশ দেন।

গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা কলোরাডোর বাকলি স্পেস ফোর্স ঘাঁটিতে অভিবাসীদের আটক রাখার অনুমতি দিয়েছে।

কেন বন্ধ হচ্ছে না গুয়ানতানামো বে কারাগারকেন বন্ধ হচ্ছে না গুয়ানতানামো বে কারাগার পূর্বসূরি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও জো বাইডেনের বিপরীত নীতি গ্রহণ করেছেন রিপাবলিকান ট্রাম্প। সাবেক দুই প্রেসিডেন্ট গুয়ানতানামো বে কারাগার বন্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close