আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসে ভয়াবহ দাবানল, পালাচ্ছেন মানুষ
পুড়ে ছাই ১১০০ ঘরবাড়ি ৫ জনের মৃত্যু
যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস শহরকে ঘিরে ধরেছে নিয়ন্ত্রণহীন দাবানল। এতে অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে ঘরবাড়িসহ সবকিছু। আগুনের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে সেখান থেকে পালাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সংবাদমাধ্যম লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) মধ্যরাতে ১০০ কিলোমিটার গতিতে বাতাস বইতে থাকে। এতে তিনটি বড় দাবানলের শক্তি বৃদ্ধি পায়। আগুনে দগ্ধ হয়ে এখন পর্যন্ত অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন।
এ পরিস্থিতিতে বুধবার এক লাখেরও বেশি বাসিন্দাকে তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দাবানলের মোকাবেলা করতে গিয়ে ব্যবহারযোগ্য সম্পদের ওপর চাপ পড়ছে এবং পানি সরবরাহ শেষ সীমায় গিয়ে ঠেকছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে। সবচেয়ে বেশি ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে পালিসাদেস দাবানলটি। এটির আগুনে ১৫ হাজার ৮০০ একর জমি পুড়ে গেছে। এ থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি কোনো কিছু বাদ যায়নি।
অপরদিকে ইটন দাবানলে ১০ একর জায়গা ভষ্মিভূত হয়ে গেছে। ছাই হয়েছে আলটাডেনা এবং পাসাডেনার বহু ঘরবাড়ি। এ দুটির পাশাপাশি তাণ্ডব চালাচ্ছে সানসেট এবং হার্স্ট দাবানল। এরমধ্যে নতুন করে হলিউড হিলে আগুন ছড়িয়েছে। ভয়াবহ আগুনে বেশ কয়েকজন হলিউড তারকার ঘর পুড়ে গেছে। তারা নিজেরাই সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি জানিয়েছেন।
আগুনের কারণে সেখানকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দাবানলের আগুনের তীব্রতা এতই বেশি যে অনেকে তাদের গাড়ি রেখেই পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংবাদমাধ্যম সিএনএনের সাংবাদিক অ্যান্ডারসন কুপার আলটাডেনা থেকে জানিয়েছেন, সেখানে আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়েছে। স্যাটেলাইটের ছবিতে দেখা গেছে আলটাডেনার এমন কিছু নেই যা দাবানলের আগুনে পুড়েনি।
দাবানলের কারণে অনেক জায়গার মানুষ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। এছাড়া অনেকে খাবার পানির অভাবে পড়েছেন। সিএনএন জানিয়েছে, অন্তত দুটি জায়গার মানুষকে আপাতত কলের পানি না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে, এ মুহূর্তে যেন শুধুমাত্র বোতলজাত পানি পান করেন তারা। মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) দাবানল শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় বাধাহীনভাবে ছড়িয়েছে, হারিকেনের শক্তি নিয়ে বইতে থাকা বাতাস দমকল কর্মীদের জন্য প্রবল বাধা হয়ে উঠেছে আর আগুন আরও ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করছে। হারিকেনের মতো জলীয়বাষ্প বয়ে আনার পরিবর্তে এই শুষ্ক বাতাস ইতোমধ্যে শুকনো হয়ে থাকা এলাকাগুলোতে আগুন আরও ছড়িয়ে দিয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বুধবার সূর্যাস্তের পর থেকে সবচেয়ে বিপজ্জনক দু’টি আগুন ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের দমকল বাহিনীর প্রধান ক্রিস্টিন ক্রাউলি এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, বুধবার সন্ধ্যায় লস অ্যাঞ্জেলেসের হলিউড হিলস অংশে নতুন একটি দাবানল শুরু হয়েছে, এতে আরও মানুষকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে সরিয়ে নিতে হয়েছে এবং লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টিতে জ্বলতে থাকা দাবানলের সংখ্যা ছয়টিতে দাঁড়িয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব আগুনের কোনোটিকেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি, এর মধ্যে এক জোড়া দাবানল শহরটিকে সাঁড়াশির মতো ঘিরে ধরেছে।
পশ্চিম দিকে প্যাসিফিক পলিসেডস অঞ্চলের পলিসেডস ফায়ার সান্তা মোনিকা ও মালিবুর মধ্যবর্তী পাহাড়গুলোর ১৫৮৩২ একর এলাকা আর ১০০০ স্থাপনা গ্রাস করেছে। এই দাবানলটি মঙ্গলবার টোপাঙ্গা ক্যানিয়ন থেকে এগিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের তীর পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এটি ইতোমধ্যে লস অ্যাঞ্জেলেসের ইতিহাসে অন্যতম ধ্বংসাত্মক একটি দাবানল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পূর্ব দিকে সান গ্যাব্রিয়েল পর্বতমালার পাদদেশে ইটন ফায়ার আরও ১০৬০০ একর, আরও ১০০০ স্থাপনা গ্রাস করেছে আর এখানে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। বেসরকারি আবহাওয়া পূর্বাভাসকারী অ্যাকুওয়েদারের প্রাথমিক হিসাবে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে আর্থিক মূল্যে তা পাঁচ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির জরুরি ব্যবস্থাপনার প্রধান কেভিন ম্যাকগোয়ান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “আমরা এক ঐতিহাসিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবেলা করছি, তবে তা যথেষ্ট শক্তিশালীভাবে নয়।”
"