আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০৯ জানুয়ারি, ২০২৫

তিব্বতে ভূমিকম্প

জীবিতদের খোঁজে রাতভর তল্লাশি

চীনের তিব্বতে হিমালয় পর্বতমালার কাছে এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভূমিকম্পে অন্তত ১২৬ জন নিহত হওয়ার পর উদ্ধারকারীরা জীবিতদের খোঁজে রাতভর তল্লাশি চালিয়েছেন। গত মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৫ মিনিটের দিকে হওয়া এ ভূমিকম্পে ৩৬০০টিরও বেশি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম সিজিটিএন জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ডিংরি কাউন্টির শহর এলাকাগুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলো মেরামত করা শুরু হয়েছে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ ফের শুরু হয়েছে।

সামরিক বাহিনীর ও স্থানীয় হাসপাতালগুলোর চিকিৎস দল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে উপস্থিত হয়ে তল্লাশি ও উদ্ধারকাজে যোগ দিয়েছে। চীনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় উদ্ধারকাজে ১৮৫০ জন উদ্ধারকর্মী ও তিনটি হেলিকপ্টার নিয়োগ করেছে। চীনের বিমান বাহিনীও উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে ড্রোন মোতায়েন করেছে।

মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত ৯টা পর্যন্ত নিশ্চিত করা মৃতের সংখ্যা ১২৬ জন ছিল আর আহত হয়েছেন আরও ১৮৮ জন। আহতদের মধ্যে ২৮ জনের অবস্থা সঙ্কটজনক। রাত ১০টা পর্যন্ত ৩০৪০০ জনকে ১৪টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো সম্ভব হয়। স্থানীয় সময় বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ৬৬০টি পরাঘাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে তীব্রটি ছিল ৪ দশমিক ৪ মাত্রার।

মঙ্গলবার রাতেই ৩৪টি মোবাইল আশ্রয়ের প্রথম চালানটি ভূমিকম্প ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছায়। বুধবার এ ধরনের আরও ১২০০টি মোবাইল আশ্রয়ের চালান সেখানে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। আটকা পড়া জীবিতদের খোঁজে বড় ধরনের একটি অভিযান শুরু করা হয়েছে।

ঘটনাস্থলে রাতে তাপমাত্রা মাইনাস ১৬ সেন্টিগ্রেড হওয়ার পূর্বাভাস ছিল। চীনের জলবায়ু প্রশাসন জানিয়েছে, রাত নাম আগেই ডিংরি কাউন্টিতে তাপমাত্রা মাইনাস ৮ সেন্টিগ্রেড ছিল। এই চরম আবহাওয়া পরিস্থিতি জীবিতদের জন্য অতিরিক্ত আরেকটি চাপ হয়ে এসেছে। ভারতীয় ও ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষে কারণে চীনের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চল, নেপাল ও ভারতের উত্তরাঞ্চলে প্রায়ই ভূমিকম্প হয়। তিব্বতের হিমালয় অঞ্চলটি একটি বড় ধরনের ভূতাত্ত্বিক ফল্ট লাইনের উপর অবস্থিত। ফলে ভূমিকম্প এখানে একটি সাধারণ বিষয়, কিন্তু তারপরও মঙ্গলবারেরটি চীনে কয়েক বছরের মধ্যে হওয়া অন্যতম প্রাণঘাতী ভূমিকম্প। যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভের তথ্য অনুযায়ী, ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে উৎপত্তি হওয়া ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ১। এটি তিব্বতের প্রতিবেশী নেপাল, ভুটান, ভারতের উত্তরাঞ্চল ও বাংলাদেশেও অনুভূত হয়েছে।

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম সিসিটিভিতে প্রকাশিত ভিডিওগুলোতে তিব্বতের পবিত্র শহর শিগাৎসিতে ধ্বংস হয়ে যাওয়া ঘরবাড়ি ও ধসে পড়া ভবন দেখা গেছে। উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছেন আর স্থানীয়দের ভারী কম্বল বিতরণ করছেন। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রাণহানি কমাতে সর্বাত্মক উদ্ধার অভিযান চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন। যত দ্রুত সম্ভব ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের নিদেশ দিয়েছেন তিনি।

চীনের ভূমিকম্প নেটওয়ার্ক সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, হিমালয় পর্বতমালার উত্তরাঞ্চলীয় প্রবেশপথ হিসেবে পরিচিত প্রত্যন্ত ডিংরি কাউন্টির সোগো শহরে ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের ২০ কিলোমিটার ব্যাসের মধ্যে তিনটি শহর ও ২৭টি গ্রাম আছে। গ্রামগুলোর মোট লোকসংখ্যা ৬৯০০ জন। শিগেইস বিভাগের ডিংরি কাউন্টিতেই অধিকাংশ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ডিংরির চাংসুও শহরে টংলাই এলাকায় বহু ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে। শিগেইস বিভাগের লোকসংখ্যা প্রায় আট লাখ। শিগেইস বিভাগের কেন্দ্রীয় শহর শিগেইস তিব্বতের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর, এটি শিগাৎসি নামেও পরিচিত। লাসা থেকে ২৮০ কিলোমিটার দক্ষিণপমশ্চিমের এ শহরটি তিব্বতের দ্বিতীয় পবিত্রতম শহর এবং পাঞ্চেন লামার বাসস্থান। ভূমিকম্পে হিমালায় পর্বতমালার নিকটবর্তী এই শহরটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ডিংরি কাউন্টির প্রধান সিনহুয়াকে জানিয়েছেন, ভূমিকম্পটি তাদের কাউন্টিতে প্রবলভাবে অনুভূত হয়েছে। মূল ভূমিকম্পের পর কয়েক ডজন পরাঘাতও অনুভূত হয়েছে। ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি হিসাব করতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন শহরে উপস্থিত হচ্ছে বলে সিনহুয়া জানিয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, সামাজিক মাধ্যমে আসা এক ভিডিওতে লাটসি শহরের চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাওয়া দোকান দেখা গেছে, সামনের রাস্তায় আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close