আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইউক্রেনে ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরিকল্পনা করছে রাশিয়া : যুক্তরাষ্ট্র
রাশিয়া শিগিরই ইউক্রেনে মধ্যম-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে পেন্টাগন। বুধবার (১১ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এই ধারণার কথা প্রকাশ করেছে তারা। মার্কিন বার্তাসংস্থা এপি এ খবর জানিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে পেন্টাগনের মুখপাত্র সাবরিনা সিং বলেছেন, সামনের দিনগুলোতে হামলাটি হতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা। তবে ওরেশনিক নামের এই ক্ষেপণাস্ত্র নাটকীয়ভাবে যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার সক্ষমতা রাখে বলে মনে করে না মার্কিন প্রশাসন। কেবল ইউক্রেনকে তটস্থ রাখতে নিজেদের ভাণ্ডারের সব অস্ত্র ব্যবহার করছে রাশিয়া।
গত মাসে প্রথমবারের মতো ওই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে ক্রেমলিন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মস্কো আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে। সম্প্রতি পাওয়া কিছু গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন বলে উল্লেখ করে সিং বলেছেন, রাশিয়ার সম্ভাব্য লক্ষ্য বা এ সংক্রান্ত আর কোনও তথ্য এ মুহূর্তে তাদের পক্ষে প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বিভিন্ন নাটকীয়তার মধ্যেই এই হামলার আশঙ্কা দেখা দিল। ওভাল অফিসে বসে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই যুদ্ধের অবসান ঘটানোর অঙ্গীকার করেছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর পশ্চিমা মিত্ররা বলছে, আসছে শীতকালেই সমঝোতা আলোচনা শুরু হতে পারে। বিমানহামলা প্রতিরক্ষাসহ ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সবরকম সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন সিং। কিছুদিন আগে, আকাশ প্রতিরক্ষার গোলাবারুদসহ ইউক্রেনের জন্য প্রায় ১০০ কোটি মার্কিন ডলার সমমূল্যের সামরিক সহায়তার অঙ্গীকার করেছে ওয়াশিংটন।
এদিকে, ইউক্রেনের সামরিক সহায়তা প্রাপ্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প তার শপথ গ্রহণের আগে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ইউক্রেনকে হয়ত কম সামরিক সহায়তার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। বাইডেন প্রশাসন সম্প্রতি ইউক্রেনকে ৯৮৮ মিলিয়ন ডলারের দীর্ঘমেয়াদি সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এর আগে, গত সপ্তাহে ৭২৫ মিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তার ঘোষণা দেওয়া হয়, যার মধ্যে ড্রোন প্রতিরোধী ব্যবস্থা ও হিমার্স গোলাবারুদ অন্তর্ভুক্ত। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার আক্রমণের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে ৬২ বিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা দিয়েছে।
এদিকে, রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মার্কিন এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় রোস্টোভের টাগানরোগ বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন, তাই, এর প্রতিশোধ নেওয়ার অধিকার তাদের রয়েছে। রাশিয়ার কৌশলগত পরিকল্পনা নিয়ে এর আগেও এমন সতর্কতামূলক বিবৃতি দিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। এ ধরনের হামলার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কূটনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে এসব বার্তা দিয়ে থাকে পেন্টাগন। ইউক্রেনে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রুশ আগ্রাসন শুরুর আগে যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে জানিয়েছিল যে, কিয়েভে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে মস্কো। পরবর্তীতে অন্য এক বিবৃতিতে তারা দাবি করে, পূর্ব ইউক্রেনে ‘ফলস-ফ্ল্যাগ’ অভিযান চালিয়ে হামলার অজুহাত সৃষ্টির পরিকল্পনা করছে রাশিয়া।
মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, রাশিয়ার কাছে অল্প কয়েকটি ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। অন্যান্য ক্ষেপণাস্ত্রের তুলনায় ছোট আকারের ওয়ারহেড বহন করে এগুলো। রাশিয়া ২১ নভেম্বর প্রথমবার এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ইউক্রেনের দিনিপ্রো শহরে হামলা চালায়। সার্ভেইল্যান্স ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা যায়, ক্ষেপণাস্ত্রটি দ্রুতগতিতে আঘাত হেনে আগুনের বিশাল কুণ্ডলী তৈরি করে।
হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জাতীয় টেলিভিশনে উপস্থিত হয়ে এই নতুন হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের প্রশংসা করেন। তিনি পশ্চিমা দেশগুলোকে হুমকি দিয়ে বলেন, পরবর্তীতে এই অস্ত্র ইউক্রেনেকে দীর্ঘ-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহকারী ন্যাটো মিত্রদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হতে পারে। হামলার দুই দিন আগে রাশিয়ার পরমাণু নীতিতে পরিবর্তন আনেন পুতিন। ফলে, তার দেশে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা আরো কমে আসে।
"