আন্তর্জাতিক ডেস্ক
গাজায় হাসপাতাল ও শরণার্থী শিবিরে হামলায় নিহত ৫০
গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। গতকাল শনিবার (৭ ডিসেম্বর) ভোরে গাজার একটি হাসপাতাল ও একটি শরণার্থী শিবিরে হামলায় ৫০ জন নিহত হয়েছে। এরমধ্যে বেশির ভাগই নারী-শিশু ও আহত রোগী। খবর আল জাজিরার।
ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় ছয় শিশু ও পাঁচ নারীসহ ২০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে।
গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি জানিয়েছে, উত্তর গাজার বেইত লাহিয়ায় অবস্থিত ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতাল নামে পরিচিত কামাল আদওয়ান হাসপাতালে এবং পাশের একটি বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ২৯ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
গাজায় আল জাজিরার সংবাদদাতা জানিয়েছেন, বিমান হামলার পাশাপাশি ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক এবং ড্রোন কামাল আদওয়ান হাসপাতালের আশপাশে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ড্রোন যেকোনো চলন্ত বস্তুতে গুলি করছে, তা হাসপাতালের ভিতরে মানুষ হোক কিংবা কাছাকাছি থাকা কিছু।
গাজায উপত্যকায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। বিগত ১৪ মাসে টানা ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৪৪ হাজার ৬১২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৮৩৪ জ নের বেশি।
গাজার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হতাহতের এই পরিসংখ্যানের বাইরে আরও অন্তত ১০ হাজার ফিলিস্তিনির মরদেহ ইসরায়েলি বিমান হামলায় বিধ্বস্ত বাড়িঘরের ধ্বংসস্তুপের ভেতরে চাপা পড়ে রয়েছে। তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এই হতভাগ্যদের নিখোঁজ হিসেবে ধরা হচ্ছে।
গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৯০ ভাগের বেশি ঘরবাড়ি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। হামলা থেকে হাসপাতাল, স্কুল, মসজিদ, আশ্রয়কেন্দ্র, জাতিসংঘ ভবন কিছুই রেহাই পায়নি। ঘরবাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়েছে গাজার ২০ লাখের মতো মানুষ।
এদিকে গাজার পাশাপাশি লেবাননেও হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এক বছরের মাথায় গত সপ্তাহে লেবাননের হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করেছে ইসরায়েল। তা সত্ত্বে লেবাননে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী।
লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৪৭ জন নিহত এবং ১৬ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে। ইসরায়েলি বিমান হামলায় লেবাননের দক্ষিণ সীমান্ত এলাকায় শত শত ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।
আল-হুথির উদ্বেগ : ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ আন্দোলনের নেতা আব্দুল মালিক আল-হুথি গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসন ও গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। ৫ ডিসেম্বর এক টেলিভিশন ভাষণে তিনি অভিযোগ করেন, ইসরায়েল ও আমেরিকা গাজাকে প্রাণঘাতী অস্ত্র পরীক্ষার ময়দান হিসেবে ব্যবহার করছে। দখলদার ইসরায়েল ফিলিস্তিনে আজান দেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ, মসজিদ ধ্বংস এবং কোরআন পোড়ানোর মত জঘন্য কাজ করছে।
আল-হুথি বলেন, আমেরিকার সহায়তায় ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠী মুসলমানদের প্রতি তীব্র শত্রুতা প্রদর্শন করছে। ইসরায়েলিরা মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু, ইসলামি বিশ্বের এক নম্বর শত্রু। তারা আরব জনগণ ও মুসলমানদের মানুষ নয়, বরং পশু হিসেবে বিবেচনা করে। তাদের কথাবার্তা ও কাজকর্মেই এটি স্পষ্ট।
তিনি আরও বলেন, ফিলিস্তিনিদের ট্র্যাজেডি আমেরিকার কাছে গুরুত্বহীন। এ ঘটনা সকল আন্তর্জাতিক চুক্তি, নীতি, আইন ও নৈতিকতাকে উল্লঙ্ঘন করেছে।
"