আন্তর্জাতিক ডেস্ক
দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন জারি নিয়ে উত্তেজনা
প্রেসিডেন্ট ইউনকে অভিশংসনের দাবি
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলকে অভিশংসন করতে গতকাল বুধবার দাবি জানিয়েছেন দেশটির আইনপ্রণেতারা। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আকস্মিকভাবে সামরিক শাসন জারির কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হওয়ার পরই এ দাবি উঠল। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কয়েক দশকের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে সিউল। ১৯৭৯ সালের পর এই প্রথম দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্শাল ল জারি করা হয়। পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াবে, তা নিয়ে দেশব্যাপী অনিশ্চয়তা ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন দক্ষিণ কোরিয়ার পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানিয়েছে। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের একজন মুখপাত্র জানান, তারা সিউলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল মঙ্গলবার এক আকস্মিক টেলিভিশন ভাষণে সামরিক শাসন জারি করার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, উত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট শক্তি থেকে মুক্ত গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়ার স্বাধীনতা এবং সাংবিধানিক শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য আমি এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছি।
জাতীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে প্রেসিডেন্ট ইউন বলেছেন, পারমাণবিক শক্তিধর উত্তর কোরিয়া ও রাষ্ট্রবিরোধী উত্তর কোরীয়পন্থিদের হুমকি মোকাবিলায় দেশের সংবিধান রক্ষার জন্য সামরিক শাসন প্রয়োজন ছিল। তবে তিনি কোনো সুনির্দিষ্ট হুমকির কথা উল্লেখ করেননি।
এ সময় সংসদ ভবনে হেলমেট পরা সেনারা প্রবেশের চেষ্টা করেন। আকাশে সামরিক হেলিকপ্টার চক্কর দিতে থাকে। পার্লামেন্টে কর্মরত কয়েকজন ব্যক্তি অগ্নিনির্বাপক স্প্রে ছুঁড়ে সেনাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। পার্লামেন্টের বাইরে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন আন্দোলনকারীরা।
সামরিক শাসন ঘোষণার পর রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম বন্ধ এবং গণমাধ্যম ও প্রকাশনা সামরিক কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে জানায় সেনাবাহিনী। তবে মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পার্লামেন্টের ১৯০ সদস্যের সর্বসম্মত ভোটে সামরিক শাসন প্রত্যাহারের প্রস্তাব পাস হয়। ওই সদস্যদের মধ্যে প্রেসিডেন্টের নিজ দলের ১৮ সদস্যও ছিলেন। এরপর সামরিক শাসনের ঘোষণাটি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট ইয়ুন।
সামরিক শাসন প্রত্যাহারের পর পার্লামেন্টের বাইরে অপেক্ষারত আন্দোলনকারীরা বিজয়োল্লাস শুরু করেন। তাদেরকেও আমরা জিতেছি! বলে স্লোগান দিতে দেখা যায়।
বিরোধী দলীয় আইনপ্রণেতাদের একটি জোট প্রেসিডেন্টের অভিশংসনের জন্য প্রস্তাব তোলার পরিকল্পনা করেছেন। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ভোটাভুটির জন্য বিলটি উত্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে। এবিষয়ে আইনপ্রণেতা হোয়াং উন-হা বলেছেন, অভিশংসনের প্রস্তাব দ্রুত পাশ করতে পার্লামেন্টের উচিত প্রেসিডেন্টের কার্যক্রম তাৎক্ষণিকভাবে স্থগিত করার ওপর মনোযোগ দেওয়া।
প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফসহ সিনিয়র সেক্রেটারিরা একযোগে পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
এদিকে, দেশটির বৃহত্তম ট্রেড ইউনিয়ন সংস্থা, দ্য কোরিয়ান কনফেডারেশন অব ট্রেড ইউনিয়নস জানিয়েছে, তারা সিউলে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে ও ইউন পদত্যাগ না করা পর্যন্ত ধর্মঘট চালিয়ে যাবে।
"