আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

বস্তির শিশুদের ফ্যাশন ফটোশুটের ভিডিও ভাইরাল ভারতে

বস্তিবাসী শিশুদের নিয়ে ভারতে ফ্যাশন ফটোশুটের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। রাতারাতি এই শিশুরা এখন রীতিমতো সেলিব্রিটি হয়ে উঠেছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সি বেশির ভাগ কিশোরী লাল ও সোনালি রঙের পোশাক পরে ফটোশুটে অংশ নিয়েছে। পোশাকগুলো পুরোনো বাতিল কাপড় দিয়ে তৈরি।

ফটোশুটে অংশ নেওয়া কিশোর-কিশোরীরা নিজেরাই পোশাকগুলোর নকশা তৈরি এবং সেলাই করেছে। বস্তির ভাঙাচোরা দেয়াল, খসে পড়া পলেস্তারা, কুঁড়ে ঘর এবং ছাদকে পটভূমি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে র‌্যাম্পে হাঁটার জন্য। ফেলে দেওয়া কাপড় দিয়ে ভারতের শীর্ষস্থানীয় ফ্যাশন ডিজাইনার সব্যসাচী মুখার্জির মতো পোশাক তৈরি, আর তা পরে ভিডিও শুট করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বস্তির এই শিশুরা। ভিডিওটি শুট এবং সম্পাদনা করেছে ১৫ বছর বয়সি এক কিশোর। ভিডিওটি এ মাসের শুরুর দিকে প্রথম প্রকাশ হয় ভারতের লখনো শহরের বেসরকারি সংগঠন (এনজিও) ‘ইনোভেশন ফর চেঞ্জ’-এর ইনস্টাগ্রাম পেজে।

এই দাতব্য সংগঠন শহরের বস্তি এলাকার প্রায় ৪০০ শিশুকে নিয়ে কাজ করে। তাদের বিনামূল্যে খাবার, শিক্ষা এবং বিভিন্ন কাজের প্রশিক্ষণও দিয়ে থাকে। ভিডিওতে দেখা যাওয়া শিশুরা এই এনজিওর শিক্ষার্থী।

ফটোশুটে অংশ নেওয়া কিশোরী মেহক কান্নোজিয়া বিবিসিকে জানায়, তিনি ও তার সহপাঠীরা ইনস্টাগ্রামে বলিউডের অভিনেত্রীদের পোশাকের স্টাইল নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতেন। সেই ফ্যাশন দেখে তারা নিজেরা প্রায়ই কিছু পোশাক বানাতেন। ১৬ বছর বয়সি মেহেক বলেন, ‘বার আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে আমরা সবাই মিলে দল বেঁধে কাজ করব।’ আর এ কাজের জন্য তারা কলকাতার খ্যাতনামা ফ্যাশন ডিজাইনার সব্যসাচী মুখার্জির আইডিয়া বেছে নেয়। সব্যসাচী বলিউডের বিভিন্ন নামকরা তারকা, হলিউড অভিনেত্রী এমনকি বহু ধনকুবেরের পোশাকও ডিজাইন করেছেন। ২০১৮ সালে তিনি কিম কার্দাশিয়ান এর ‘ভোগ’ ম্যাগাজিনে শুটিংয়ের জন্য লাল শাড়ির ডিজাইন করেছিলেন। তা ছাড়া, ভারতে ‘বিয়ের পোশাক ডিজাইনের রাজা’ হিসাবেও পরিচিত সব্যসাচী। হাজার হাজার বধূর পোশাক তিনি ডিজাইন করেছেন। এর মধ্যে কয়েকজন নামি বলিউড তারকার বিয়ের পোশাকও তিনি ডিজাইন করেন।

কিশোরী মেহক জানায়, তাদের প্রকল্পের নাম ‘ইয়ে লাল রং’ (এই লাল রং)। ডিজাইনার সব্যসাচী মুখার্জির বিয়ের পোশাকের সংগ্রহ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই প্রকল্পের এ নাম দেওয়া হয়েছে।

সব্যসাচী মনে করেন, সব ভারতীয় নারীকেই লাল রঙের পোশাকে অসাধারণ দেখতে লাগে। সে ক্ষেত্রে গায়ের রং, চেহারার কোনো বাছবিচার নেই। ফেলে দেওয়া কাপড় দিয়ে লাল-সোনালি পোশাক বানিয়ে সব্যসাচীর এই ভাবনাতেই যেন আরো রং জুড়ে দিয়েছে বস্তির শিশুরা।

কীভাবে কাজ করা হলো তা জানিয়ে মেহক বলেন, ‘মানুষের দানে পাওয়া কাপড়গুলো থেকে সব লাল পোশাক আলাদা করলাম। এরপর আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম ঠিক কেমন পোশাক বানাতে চাই। তারপর সেগুলো নিয়ে কাজ করতে শুরু করলাম।’ এ কাজে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। তিন-চার দিনের মধ্যেই প্রায় এক ডজন পোশাক সেলাই করতে হয়েছে। তবে মেহক এর কথায়- তারা আনন্দ নিয়েই এ কাজ করেছে। এরপর র‍্যাম্প ওয়াকের জন্য সব্যসাচীর ভিডিওগুলোর মডেলদের মনোযোগ দিয়ে তারা দেখেছে এবং তাদের হাঁটার স্টাইল অনুকরণ করেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close