আন্তর্জাতিক ডেস্ক
গাজায় ইসরায়েলি হামলার ৪০০ দিন
উত্তর সিটিতে দুর্ভিক্ষ নিহত বেড়ে ৪৩ হাজার ৫৫২
ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে নির্মূলে দখলদার ইসরায়েল গাজায় গত বছরের ৭ অক্টোবর হামলা শুরু করে। ওই যুদ্ধ শনিবার ৪০০ দিনে পৌঁছেছে। এই সময়ের মধ্যে গাজায় সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচার ও বর্বর হামলা চালিয়েছে দখলদার সেনারা। হামলায় ছোট এ উপত্যকায় ৪৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। যাদের ৭০ শতাংশই নিরীহ নারী ও শিশু। এ ছাড়া ধ্বংসস্তূপের নিচে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন আরো ১০ হাজার ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছে। দখলদার অবরোধের কারণে গাজার মানুষ এখন দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েছে। লাখ লাখ মানুষ এখনই না খেয়ে দিনযাপন করছেন। খবর আল-জাজিরার।
দখলদার ইসরায়েলের অবরোধ, খাবার পৌঁছাতে না দেওয়া এবং বর্বর হামলার কারণে দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তে যাচ্ছেন গাজার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দারা। শনিবার জাতিসংঘের সমর্থিত ‘ফেমিন রিভিউ কমিটি’ নামে সংস্থার মূল্যায়নে জানা গেছে এ তথ্য। সংস্থাটি বলেছে, গাজা উপত্যকার পরিস্থিতির দ্রুত অবনতির কারণে সেখানে দুর্ভিক্ষের ভয়াবহ আশঙ্কা রয়েছে। দুর্ভিক্ষ শুরু হওয়ার ধাপ হয়তো ইতিমধ্যে পার হয়ে গেছে অথবা খুবই দ্রুত পার হবে।
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আক্রমণের বড় কেন্দ্রবিন্দু এখন উত্তর গাজা। এমনিতেই পুরো গাজা উপত্যকা বিধ্বস্ত। সেখানে ওই অঞ্চলের উত্তরাংশে সামরিক অভিযান তীব্র ভারি করেছে ইসরায়েল। সব ধরনের মানবিক সহায়তা, জরুরি সেবা বন্ধ করে গত মাসের অক্টোবর থেকে চলছে এই বর্বর আক্রমণ।
জাতিসংঘের স্বাধীন দুর্ভিক্ষ পর্যালোচনা কমিটি উত্তর গাজার পরিস্থিতিকে ‘অত্যন্ত গুরুতর এবং দ্রুত অবনতিশীল’ বলে অভিহিত করেছে একই সঙ্গে তাদের আহ্বান যে যুদ্ধের সমস্ত অভিনেতাকে মানবিক বিপর্যয় এড়াতে ‘সপ্তাহ ৯ দিনের মধ্যে’ অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে।
ইসরায়েলি হামলায় আরো ৪৪ ফিলিস্তিনি নিহত : ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরো ৪৪ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৮১ জন আহত হয়েছে। ফলে উপত্যকাটিতে নিহতের সংখ্যা ছাড়াল ৪৩ হাজার ৫৫০। বর্বর এই হামলায় আরো অন্তত ১ লাখ ২ হাজার ৭৬৫ জন ব্যক্তিও আহত হয়েছে। এতে গত বছরের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৩ হাজার ৫৫২ জনে পৌঁছেছে। একই সঙ্গে গত বছরের অক্টোবর থেকে চলা এই হামলায় আহত হয়েছেন আরো লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি।
নিহতদের মধ্যে অন্তত ১৭ হাজার ৩৮৫ জনই শিশু। যার মধ্যে ৮২৫ শিশুর বয়স এক বছরেরও কম ছিল। নিহত বাকিদের মধ্যে ১২ হাজারই নারী। এক হাজারের বেশি স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছেন। যারা অন্যকে সহায়তা করতে গিয়ে নিজেদের প্রাণ দিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে অন্তত ১২ হাজার ৭০০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। যারা যুদ্ধের আগে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করত।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন। উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, গাজা উপত্যকা জুড়ে বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো ১০ হাজারেরও বেশি লোক নিখোঁজ।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে করে হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থীশিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
"