আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

গাজায় শিগগিরই যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান কমলার

গাজায় যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ফিলিস্তিনি এ উপত্যকাটি ফের ইসরায়েলের দখল করা উচিত হবে না বলেও মনে করেন তিনি। ফিলাডেলফিয়ায় মঙ্গলবার ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ব্ল্যাক জার্নালিস্টসের (এনএবিজে) সঙ্গে আলাপে এসব কথা বলেন কমলা। সেখানে তিনি ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।

কমলা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সংকট নিরসনে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের কথাও বলেন। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে এমনভাবে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে, যেন ইরান ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠার সুযোগ না পায়।

একই দিন আফ্রিকান-আমেরিকান সাংবাদিক, শিক্ষার্থী এবং সংবাদমাধ্যম পেশাজীবীদের সংগঠন এনএবিজের তিন সাংবাদিক গাজা যুদ্ধ বিষয়ে কমলাকে প্রশ্ন করেন। জবাবে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা খুব ভালো করে জানি, এ অঞ্চলের সবার সর্বোত্তম স্বার্থের জন্য ওই চুক্তি হওয়া দরকার।’

গত বছর ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া গাজা যুদ্ধ এক বছরে গড়াতে চলেছে। গাজা থেকে ওইদিন ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হামাস যোদ্ধারা এক নজিরবিহীন হামলা চালান। জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় তাণ্ডব শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের হামলায় এ উপত্যকায় এখন পর্যন্ত ৪১ হাজার ২৫২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৯৫ হাজারের বেশি মানুষ।

অন্যদিকে ইসরায়েলের দাবি, হামাসের হামলায় ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় এক হাজার ২০০ মানুষ নিহত হন। জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয় আরও প্রায় ২৫০ জনকে।

ওহাইও অঙ্গরাজ্যের নগর স্প্রিংফিল্ড নিয়েও এদিন কমলাকে প্রশ্ন করা হয়। কয়েক দিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে স্প্রিংফিল্ড। সেখানে ডানপন্থিরা একটি মিথ্যা দাবি ছড়িয়েছে। তারা বলছে, হাইতি থেকে আসা অভিবাসীরা পোষা প্রাণী খেয়ে ফেলছেন। ৫ নভেম্বরের ভোটে কমলার প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচিত হলে স্প্রিংফিল্ড থেকে গণহারে হাইতির অভিবাসীদের তাড়িয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। যদিও স্প্রিংফিল্ডে বসবাস করা হাইতির অভিবাসীদের বড় অংশই বৈধভাবে সেখানে বসবাস করেন।

এ বিষয়ে কমলা বলেন, ‘এটা বিরক্তিকর, ক্ষতিকর, ঘৃণ্য এবং পুরোনো কিছু ঘটনার ওপর ভিত্তি করে বলা হয়েছে। আমাদের এসব মেনে নেওয়া উচিত হবে না।’ ৪৫ মিনিটের এই সাক্ষাৎকার কমলা শুরু করেছিলেন অর্থনীতির নানা বিষয় নিয়ে কথা বলে। তিনি বলেছেন, যদি তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তবে আবাসন সরবরাহ বাড়াতে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কাজ করবেন। মার্কিনিদের জন্য দ্রব্যমূল্য কমাতে আরো কাজ করা উচিত ছিল বলেও স্বীকার করেন তিনি।

গাজায় ইসরায়েলি নৃশংসতা চলছেই : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বর্বর হামলায় আরো ২৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে করে উপত্যকাটিতে নিহতের সংখ্যা ৪১ হাজার ২৫০ ছাড়িয়ে গেছে। এ ছাড়া গত বছরের অক্টোবর থেকে চলা এই হামলায় আহত হয়েছেন আরো ৯৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত আগ্রাসনে ২৬ জন নিহত এবং আরো ৮৪ জন আহত হয়েছে। অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছে, কারণ উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মনে করছে, গাজা উপত্যকা জুড়ে ধ্বংস হওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো ১০ হাজারেরও বেশি লোক নিখোঁজ রয়েছে। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।

গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থীশিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।

মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছে। এ ছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close