আন্তর্জাতিক ডেস্ক
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রাণহানি ছাড়াল ৪১০০০
ফিলিস্তিনের গাজার ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৪১ হাজার ছাড়িয়েছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকা জুড়ে অব্যাহত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। খবর আল-জাজিরার।
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ঢুকে হামলা চালায়। এক দিনের হামলায় ১১৩৯ জন নিহতের দাবি ইসরায়েলের। এ ছাড়া ২৪০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে আসে হামাস।
হামলার প্রতিশোধ নিতে ও হামাসকে উৎখাতের কথা বলে ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় নির্বিচার বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। একই সঙ্গে উপত্যকা জুড়ে চালিয়ে যাচ্ছে স্থল অভিযান। ইসরায়েলি বোমা ও কামানের গোলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে পুরো গাজা।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলায় গাজায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নিহত হয়েছে ৪১ হাজার ২০ জন ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছে আরের ৯৪ হাজার ৯২৫ জন। হতাহতদের বেশির ভাগই বেসামরিক লোক, নারী ও শিশু।
এদিকে গতকাল বুধবার ভোরেও গাজার বিভিন্ন অঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অসংখ্য মানুষের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থীশিবিরে হামলায় ৪ জন ও খান ইউনিস শহরে হামলায় ১৩ জন নিহতের কথা জানা গেছে।
আগের দিন মঙ্গলবার ভোরে গাজার দক্ষিণের আল মাওয়াসি এলাকায় উদ্বাস্তু ফিলিস্তিনিদের তাঁবুতে হামলায় অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছে। বোমার আঘাতে ধুলিস্যাৎ হয়ে গেছে অসংখ্য তাঁবু। আল মাওয়াসি মূলত ইসরায়েলি বাহিনীর ‘নিরাপদ’ ঘোষিত অঞ্চল। সেখানে আশ্রয় নিয়েছিল লাখ লাখ ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু। সেই উদ্বাস্তুদের ওপর বিমান হামলার নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ।
একটি মানবাধিকার সংস্থা এ হামলায় ফিলিস্তিনি নিহতের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করছে। ইউরো-মেডিটেরেনিয়ান হিউম্যান রাইটস মনিটর জানায়, মধ্য রাতে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান তিনটি মার্কিন তৈরি ৯০০ কেজি ওজনের এমকে-৮৪ বোমা ফেলে। এমন সময় এসব বোমা ফেলা হয়, যখন বেসামরিক লোকেরা ঘুমাচ্ছিল।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, খান ইউনিস শহরের পশ্চিমে ‘মানবিক অঞ্চল’ ঘোষিত আল-মাওয়াসিতে বাস্তুচ্যুতদের আবাসস্থল (তাঁবু) লক্ষ্য করে তিনটি হামলা চালানো হয়। তাতে বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে সেখানে।
হামাসের সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষের পরিচালক (অপারেশন) বলেছে, হামলায় ৪০ জন নিহত ও ৬০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। অনেকে এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বিবিসিকে বলেছেন, মধ্য রাতের পরপরই আল-মাওয়াসি এলাকায় বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটে এবং আগুনের শিখা আকাশে উঠতে দেখা যায়।
ঘটনাস্থলের কাছাকাছি বসবাসকারী একটি দাতব্য সংস্থার স্বেচ্ছাসেবক খালেদ মাহমুদ বলেন, তিনি এবং অন্য স্বেচ্ছাসেবীরা সাহায্যের জন্য ছুটে এসেছিলেন; কিন্তু ধ্বংসের ব্যাপকতা দেখে স্তব্ধ হয়ে যান। হামলায় ৭ মিটার গভীর তিনটি গর্তের সৃষ্টি হয়েছে এবং ২০টিরও বেশি তাঁবু চাপা পড়েছে।
এদিকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, হামাসের সঙ্গে সাময়িক যুদ্ধবিরতি সম্ভব। এই সুযোগ সীমিত হয়ে আসছে। তবে যুদ্ধ পুরোপুরি শেষ করার বিষয়টি অনেক জটিল। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি উল্লেখ করেছেন, হামাসের সঙ্গে অন্তত ছয় সপ্তাহের একটি যুদ্ধবিরতি সম্ভব, যা দেশের উত্তরের লেবানন সীমান্তেও কিছুটা স্থিতিশীলতা আনতে পারে।
"