আন্তর্জাতিক ডেস্ক
বাইডেন আমলে মার্কিন অর্থনীতি ট্রাম্প শাসনামলের মতোই
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘনিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে দেশটির অর্থনীতি নিয়ে একটি প্রশ্ন বারবার ঘুরেফিরে আসছে। তা হলো, নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, নাকি বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শাসনামলে দেশটির অর্থনীতি বেশি ভালো ছিল। যদিও অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, বাইডেন আমলে মার্কিন অর্থনীতি ট্রাম্প শাসনামলের মতোই চলছে। খবর বিবিসির।
আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী ও বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস দাবি করেন, ‘আমাদের অর্থনীতি অনেক সূচকেই বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিশালী।’
তবে কমলার প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্পের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তিনিই দেশের অর্থনীতিকে সবচেয়ে শক্তিশালী করেছেন। কিন্তু বাইডেন-কমলা প্রশাসন সেটি ধ্বংস করেছে। দুই প্রেসিডেন্টের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি কেমন ছিল, কয়েকটি সূচকে বিষয়টির তুলনামূলক একটা চিত্র তুলে ধরা যাক :
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি : করোনা মহামারির প্রভাবের কারণে দুই প্রেসিডেন্টের সময়কার অর্থনৈতিক অবস্থার তুলনা করা জটিল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিদ্যমান মজুরিতে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে উঠলেও উভয় প্রেসিডেন্ট উল্লেখযোগ্য কিছু অর্থনৈতিক সাফল্য দাবি করতে পারেন।
করোনা মহামারি চলাকালে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ধস নামে। মহামারির প্রকোপ কমলে ট্রাম্প প্রশাসনের অধীন মার্কিন অর্থনীতি শক্তভাবে ঘুরে দাঁড়ায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পশ্চিমা অনেক দেশের চেয়ে আরো ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়ায় অর্থনীতি।
বাইডেনের সময়ও অর্থনীতির এ ধারা অব্যাহত ছিল। জিডিপির মানদ-ে যুক্তরাষ্ট্র শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭-এর সদস্যদের মধ্যে করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে সবচেয়ে শক্ত অবস্থানে যেতে সক্ষম হয়। তবে, ট্রাম্পের চার বছরের শাসনামলে দেশের অর্থনীতি ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল না, যেমনটা তিনি দাবি করে থাকেন।
২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপির বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ২ দশমিক ৩ শতাংশ। এ সময়ের মধ্যে ছিল, করোনা মহামারির কারণে দেশের অর্থনীতি মন্দায় পড়া ও তা থেকে উত্তরণের কালও।
বাইডেন প্রশাসনের অধীন এখন পর্যন্ত এ প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থাৎ, ট্রাম্প শাসনামলের মতোই। অথচ ট্রাম্প ও বাইডেনের শাসনামলের আগে এমন একসময় ছিল, যেমন ১৯৭০-এর দশকে, যখন জিডিপির প্রবৃদ্ধি ছিল উল্লেখ করার মতো।
মূল্যস্ফীতি : যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি যে হারে বাড়ছে, তাতে চলতি নির্বাচনী প্রচারে তা এক বড় ইস্যু হয়ে উঠেছে। বাইডেনের শাসনামলের প্রথম দুই বছরে এ স্ফীতি বেড়ে ২০২২ সালের জুনে দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ১ শতাংশ।
এ ঘটনায় ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির কবলে।’
তবে ট্রাম্পের এ দাবি সত্য ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রে এর আগে ৯ শতাংশের ওপরে মূল্যস্ফীতি ছিল ১৯৮১ সালে। মার্কিন ইতিহাসে ওই মূল্যস্ফীতি ছিল কয়েকটি ক্ষেত্রে বাইডেনের সময়ের চেয়ে আরো বেশি। বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার প্রায় ৩ শতাংশ। অবশ্য ট্রাম্প যখন হোয়াইট হাউস ছাড়েন, সেই সময়ের তুলনায় এটি এখনো কিছুটা বেশি। আবার, অর্থবছরের শেষে ২০২২ সালের আগস্টে মুদিপণ্যের দামও উদাহরণ হিসেবে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। বাইডেন প্রশাসনের সময় এটিই ছিল পণ্যের সর্বোচ্চ দাম। তখন থেকে এখন পর্যন্ত কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে পণ্যমূল্য। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে এ বছরের জুলাই পর্যন্ত এসব পণ্যের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ১ শতাংশ।
"