আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ইসরায়েলের হামলা চললে জিম্মিরা কফিনে ফিরবে

হামাসের হুমকি

ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসের সামরিক শাখা ইসরায়েলকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ইসরায়েলের সামরিক চাপ অব্যাহত রাখা হলে তাদের হাতে থাকা জিম্মিদের পরিণতি ভালো হবে না। জিম্মিদের ‘কফিনে করে’ ইসরায়েলে ফিরতে হবে। খবর বিবিসি ও আল-জাজিরার।

হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসেম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু উবায়দা সোমবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘একটি চুক্তি সইয়ের পরিবর্তে জোর খাটিয়ে জিম্মিদের মুক্ত করতে নেতানিয়াহুর (ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু) চাপ দেওয়ার পরিণতি হলো জিম্মিরা কফিনে করে পরিবারের কাছে ফিরবেন।’

সতর্ক করে দিয়ে আবু উবায়দা আরো বলেন, ‘জিম্মিদের পরিবারগুলোকে একটি বিকল্প বেছে নিতে হবে। হয় তারা মৃত অবস্থায় ফিরবেন, নয়তো জীবিত।’ রাফা থেকে ছয় জিম্মির মরদেহ উদ্ধারের দুদিন পর এ কথা বললেন হামাসের সামরিক শাখার এই মুখপাত্র।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, বন্দিবিনিময় চুক্তিতে ইচ্ছাকৃতভাবে বাধা দেওয়ার কারণে জিম্মিদের যেকোনো পরিণতির জন্য নেতানিয়াহু ও ইসরায়েলের সেনাবাহিনী দায়ী থাকবে।

এদিকে ছয় জিম্মির মৃত্যুর পেছনে ইসরায়েলকে দায়ী করেছেন হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা উজ্জাত আল-রিশেক। তিনি বলেন, ছয় জিম্মি ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন।

হামাসের হাত থেকে জিম্মিদের উদ্ধারে চুক্তি করতে ও যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পর্যাপ্ত উদ্যোগ নেননি বলে অভিযোগ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যদিও এ বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা ‘চূড়ান্ত’ হয়েছে বলে জানা গেছে।

মার্কিন কর্মকর্তারা হালনাগাদ এ প্রস্তাবনাকে ‘গ্রহণ করুন বা ছেড়ে যান চুক্তি’ বলে শ্রেণিবদ্ধ করেছে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট।

গতকাল জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস গাজার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন। বৈঠকে আরো ছিলেন গাজা নিয়ে শান্তি আলোচনায় অংশ নেওয়া মার্কিন আলোচকরাও।

জিম্মিদের উদ্ধারে এরপর আর কী করা যায়, সেটা নিয়েও কথা বলেছেন তারা। কাতার ও মিসরে চলা শান্তি আলোচনা নিয়েও কথা হয়েছে তাদের। এরপরই বাইডেনের পক্ষ থেকে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করা হয়েছে। এর আগে গত শনিবার গাজা উপত্যকা থেকে ছয় জিম্মির মরদেহ উদ্ধারের খবর জানায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তাদের মধ্যে একজন ইসরায়েলি-আমেরিকান জিম্মিও রয়েছেন। এ ঘটনার পর ইসরায়েল জুড়ে তুমুল বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।

রুটি কেনার লাইনে ইসরায়েলি বোমায় নিহত ৮ : গাজার জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরে একটি রুটির দোকানে লাইনে দাঁড়ানো মানুষের ওপর বোমা হামলায় অন্তত আটজন নিহত হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় এ হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, গাজা উপত্যকার উত্তরে জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরে একটি রুটির দোকানের সামনে উদ্বাস্তু নারী-পুরুষ ও শিশুরা রুটি কেনার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

জাতিসংঘ পরিচালিত একটি স্কুলের সামনে ওই লোকজনের ওপর বোমা হামলা চালায় ইসরায়েলি বিমান। এতে ঘটনাস্থলে অন্তত আটজন নিহত হয়েছে। নিহতের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে। এ নিয়ে গাজায় গত বৃহস্পতিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত পাঁচ দিনে ইসরায়েলি হামলায় ১৮৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরো ৩৬৯ জন। হতাহতদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। জাতিসংঘ এক প্রতিবেদনে বলেছে, সাম্প্রতিক হামলায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারী ও শিশুদের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক কার্যালয় (ওসিএইচএ) বলেছে, নুসিরাত শরণার্থীশিবিরের একটি আবাসিক ভবনে হামলায় ৯ জন নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনটি শিশু এবং দুই নারী রয়েছে। এক নারী ছিলেন গর্ভবতী।

ওসিএইচএর প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, গাজা শহরের সাবরা এলাকায় একটি বাড়িতে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় একই পরিবারের সাতজন ফিলিস্তিনিও নিহত হয়েছে।

এ ছাড়া দক্ষিণে খান ইউনিস ও রাফাহ এবং দেইর এল-বালাহ, গাজার উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। গাজায় গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত ৪০ হাজার ৭৮৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

আহত হয়েছে ৯৪ হাজার ২২৪ জন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close