প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
গাজা যুদ্ধে যুক্ত হচ্ছে নতুন ফ্রন্ট!
* নিহতের সংখ্যা ১৩ হাজার ছাড়াল * নিহতের ৭৫ শতাংশই নারী ও শিশু * নিখোঁজ আরো ছয় সহস্রাধিক
ফিলিস্তিনের গাজায় হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের রেশ নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে সম্প্রসারিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কর্তৃক বন্দিবিনিময় চুক্তি প্রত্যাখ্যান হওয়ার পর এই আশঙ্কা আরো জোরালো হয়েছে। এরই মধ্যে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ না থামালে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নতুন যুদ্ধফ্রন্ট খোলার বিষয়ে সতর্ক করেছেন ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডস কর্পসের সাবেক প্রধান মোহসেন রেজাই। লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ-সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যম আল মায়াদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তিনি। খবর টাইমস অব ইসরায়েলের।
মোহসেন রেজাই বর্তমানে ইরানের সুপ্রিম কাউন্সিল ফর ইকোনমিক কো-অর্ডিনেশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, প্রতিরোধ জোট সামনের দিনে আরো বড় ভূমিকা পালন করবে। এই যুদ্ধে অবশ্যই ইসরায়েলের পরাজয় হবে। ইসরায়েলি সেনারা গাজার যত ভেতরে যাবে তারা ততই চোরাবালিতে তলিয়ে যাবে। তিনি বলেন, আমি মনে করি এই যুদ্ধ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পতন ঘটাবে। আর আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আমরা ইসরায়েলি শাসনের পতন দেখব।
গাজায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ১৩ হাজার ছাড়াল : এদিকে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহতের সংখ্যা ১৩ হাজার ছাড়িয়েছে। তাদের মধ্যে শিশু এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের সংখ্যা অন্তত সাড়ে পাঁচ হাজার। এ ছাড়া সাড়ে তিন হাজার নারীও রয়েছেন। খবর আনাদুলু এজেন্সির।
তুরস্কের সরকারি সংবাদ সংস্থাটি জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গত ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় অন্তত ১৩ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩০ হাজার। আহতদের ৭৫ শতাংশই নারী ও শিশু। এ ছাড়া নিখোঁজের সংখ্যা ছয় হাজার ছাড়িয়েছে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। নিখোঁজদের বেশির ভাগই ধসে পড়া ভবনগুলোর নিচে পড়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আনাদুলু এজেন্সির খবরে আরো বলা হয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে ৮৩টি মসজিদ। তিনটি গির্জাকেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়। ৪৩ হাজারের বেশি আবাসন ইউনিট সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়েছে। বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাজা উপত্যকার ৬০ শতাংশ আবাসিক ইউনিট।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর থেকে ২৫টি হাসপাতাল এবং ৫২টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিষেবার বাইরে চলে গেছে। ইসরায়েলি বাহিনী ৫৫টি অ্যাম্বুলেন্সকেও লক্ষ্যবস্তু করেছে। গাজা প্রশাসন সেখানে চলমান নৃশংসতার জন্য ইসরায়েল এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দায়ী করেছে।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের যোদ্ধারা গাজাসংলগ্ন ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে নজিরবিহীন হামলা চালায়। হামলার ব্যাপকতায় হতভম্ব ইসরায়েল হামাসকে নির্মূল করার প্রত্যয় নিয়ে সেদিন থেকেই গাজায় ব্যাপক হামলা শুরু করে। তারপর থেকে দখলদার ইসরায়েয়ের জঙ্গি বিমানগুলো গাজা ভূখণ্ডে লাগাতার বিমান হামলা চালিয়ে আসছে। এর পাশাপাশি স্থল অভিযানও শুরু করেছে। তাদের বর্বরোচিত হামলায় প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছেন বহু ফিলিস্তিনের নাগরিক।
গত শনিবার (১৮ নভেম্বর) গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে শরণার্থীশিবিরে ইসরায়েলি হামলায় ৮০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। এই হামলায় লক্ষ্যবস্তু হয়েছে শরণার্থীশিবিরে জাতিসংঘ পরিচালিত একটি স্কুলও। এ ছাড়া অবরুদ্ধ গাজার সবচেয়ে বড় শরণার্থীশিবির জাবালিয়ায় ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর হামলায় আবু হাবাল নামে এক ব্যক্তির পরিবারের ৩২ জন সদস্য নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৯ শিশুও ছিল।
"