প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
যুদ্ধবিরতিতে সম্মত ইসরায়েল
নিজ দেশ ও আন্তর্জাতিক চাপে নেতানিয়াহু
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি নিয়ে একটি চুক্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে হামাস, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। চুক্তির আওতায় হামাস বেশ কয়েক জিম্মিকে মুক্তি দেবে। বিনিময়ে পাঁচ দিনের যুদ্ধবিরতি দেবে ইসরায়েল। চুক্তি-সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে শনিবার (১৮ নভেম্বর) এসব তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শেষ মুহূর্তে কোনো বাধা ছাড়াই আগামী কয়েক দিনের মধ্যে জিম্মিদের মুক্তিদানের প্রক্রিয়া শুরু হবে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, যুদ্ধের সবপক্ষ অন্তত পাঁচ দিনের জন্য লড়াই বন্ধ রাখবে। এ সময় প্রতি ২৪ ঘণ্টায় গ্রুপ গ্রুপ করে ৫০ বা এর চেয়ে জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে ১২০০ ইসরায়েলি হত্যার পাশাপাশি দুই শতাধিক ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস। এরপর হামসকে নিশ্চিহ্নের নাম করে গাজায় নির্বিচারে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি হামলায় এরই মধ্যে ১২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
গাজায় হাজার হাজার মানুষ হত্যার প্রতিবাদ এবং যুদ্ধবিরতির দাবিতে বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ বিক্ষোভণ্ডসমাবেশ করলেও এত দিন তা আমলে নেয়নি ইসরায়েল ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। শেষমেশ নিজ দেশের হাজার হাজার নাগরিকের বিক্ষোভের মুখে চাপে পড়ে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে নেতানিয়াহু সরকার।
জানা যায়, জিম্মিদের মুক্তি দাবিতে শনিবার ইসরায়েলের হাজার হাজার মানুষ জেরুজালেমে পদযাত্রা করেছে। পাঁচ দিন আগে শুরু করা জিম্মিদের স্বজন ও তাদের সমর্থকদের এই পদযাত্রা শনিবার জেরুজালেমে পৌঁছেছে। সেখানে জিম্মিদের মুক্তির ব্যবস্থা করতে নেতানিয়াহু সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছে তারা।
জেরুজালেম বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নোয়াম অ্যালন নামের এক যুবক বলেন, তেল আবিব-জেরুজালেম মহাসড়কে বিক্ষোভে যোগ দেওয়া মানুষের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে ইসরায়েলি সরকারের ওপর চাপ তৈরির লক্ষ্যে এই বিক্ষোভ করছেন তারা। গত ৭৮ অক্টোবর হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলে ঢুকে যে ২৪০ জনের বেশি মানুষকে ধরে নিয়ে জিম্মি করেছেন, তাদের মধ্যে নোয়ামের প্রেমিকাও রয়েছেন।
এই যুবক বলেন, আমরা আশা করছি তারা আমাদের সঙ্গে দেখা করবে। আমরা আশা করছি, জিম্মিদের কীভাবে ফিরিয়ে আনা হবে, সেই বিষয়ে তারা আমাদের জানাবেন। তিনি বলেন, আমরা আর অপেক্ষা করতে পারছি না। আমরা যেকোনো মূল্যে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার দাবি জানাই। তাদের এ মুহূর্তে উদ্ধারের দাবি জানাচ্ছি।
জিম্মিদের স্বজন ও বন্ধুদের অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, অবরুদ্ধ গাজায় হামাসকে ধ্বংস করতে ইসরায়েল হামলা চালানোর যে পরিকল্পনা করেছে, তাতে জিম্মিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তবে ইসরায়েলের সরকার বলছে, গাজায় চলমান স্থল হামলা জিম্মিদের উদ্ধারের সম্ভাবনা আরো বাড়িয়ে তুলবে। সম্ভাব্য বন্দিবিনিময়ের মাধ্যমে জিম্মিদের মুক্ত করার পথ তৈরি হবে।
কিন্তু হামাসের হামলায় ইসরায়েলের সরকার অন্ধ হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। জেরুজালেমে অভিমুখে শুরু করা পদযাত্রায় যোগ দিয়েছেন ইসরায়েলের মধ্যপন্থি বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ। হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অন্যতম সমর্থক হলেও তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবি তুলেছেন।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ইয়োভাল হারান রয়টার্সকে বলেন, তার পরিবারের সাত সদস্যকে অপহরণের পর গাজায় নিয়ে জিম্মি করেছে হামাস। তাদের মধ্যে তার মা, বোন, ভগনিপতি এবং তাদের ৮ ও ৩ বছর বয়সি দুই সন্তান ও ১২ বছরের চাচাতো ভাই রয়েছে। তিনি বলেন, তিন বছর বয়সি একটি মেয়েশিশুর আপনি কীভাবে মূল্য দেবেন? যেকোনো মূল্যে আমরা তাদের ফেরত চাই।
"