প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
অন্ধকারের পথে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র!
আড়াই বছরেরও বেশি সময় আগের কথা। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি। মার্কিন সরকারের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এক নজিরবিহীন প্রতিকূলতার মুখে পড়ে। সেদিন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা নির্বাচনের ফল পাল্টে দিতে ক্যাপিটল হিলে হামলা চালায়। বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে নিজেদের জাহির করা যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে এমন ঘটনা অভাবনীয় ছিল। বিশ্বজুড়ে এ ঘটনা ব্যাপক আলোড়নও সৃষ্টি করে।
দশকের পর দশক ধরে গণতন্ত্রের বাতিঘর হিসেবে নিজেদের দাবি করে আসছেন আমেরিকানরা। কিন্তু বর্তমান সময়ে এসে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র নিয়েই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ নির্বাচনের ফল নিজেদের পক্ষে নিতে খুব কম দেশের পার্লামেন্ট ভবনেই এমন জঘন্য হামলার ঘটনা ঘটেছে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদলীয় প্রার্থী জোসেফ রবিনেট বাইডেনের কাছে নিজের পরাজয় মেনে নিতে অস্বীকার করেন ট্রাম্প। এরপর আড়াই বছর পার হলেও পরাজয় স্বীকার করেননি তিনি। যদিও ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন এই রিপাবলিকান।
২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ আমেরিকানই মনে করেন তাদের দেশের গণতন্ত্র হামলার মুখে। তখন ৫১ শতাংশ মার্কিন নাগরিক মত দিয়েছেন, ভবিষ্যতে নিজেদের দল জয়ী হতে না পারলে নির্বাচনী কর্মকর্তারা ভোটের ফল সফলভাবেই উল্টে দিতে পারবেন।
৫৬ শতাংশ নাগরিক মনে করেন, তাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা হামলার মুখে পড়েছে। আর ৩৭ শতাংশ মত দিয়েছেন, দেশের গণতন্ত্র এক কঠিন পরীক্ষার মুখে। অর্থাৎ অধিকাংশ আমেরিকানের ধারণা, তাদের সরকারের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা মারাত্মক নাজুক অবস্থায় পড়েছে। মাত্র ছয় শতাংশ আমেরিকান জানিয়েছেন, তাদের গণতন্ত্রের জন্য কোনো ঝুঁকি নেই।
ওই জরিপে যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান দলীয় সমর্থকরা মনে করেন, ২০২০ সালের নির্বাচনে তাদের কাছ থেকে বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের ধারণা, ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হলেও তাকে পরাজিত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ না থাকলেও তাদের মতে, ওই নির্বাচনে জো বাইডেন বিজয়ী না। আর গেল সপ্তাহে বাইপার্টিজান পলিসি সেন্টারের এক জরিপ বলছে, মার্কিন গণতন্ত্রের বর্তমান অবস্থা নিয়ে তারা হতাশ।
দ্য হিলের খবরে জানা যায়, ৮২ শতাংশ ভোটার জানিয়েছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র নিয়ে হতাশ। তাদের মধ্যে ৪০ শতাংশ বলেছেন, তারা ‘খুবই হতাশ’। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট- দু-দলের সমর্থকরাই এই উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।
গেল জানুয়ারিতে ফরেন অ্যাফেয়ার্স সাময়িকীর এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা উন্নতির দিকে যাচ্ছে। দেশটিতে ২০২২ সালের নির্বাচনগুলো সফলভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। তখন নির্বাচনী ফল অস্বীকারকারীরা অ্যারিজোনা ও পেনসিলভানিয়ার মতো দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে হেরে গেছেন। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, নানা কারণে মার্কিন গণতন্ত্র ভয়াবহ ঝুঁকিতে পড়েছে।
ক্যাপিটল হিলের হামলার ঘটনায় গঠিত মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের তদন্ত কমিটি প্রমাণ পেয়েছে, ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল উল্টে দিতেই ওই দাঙ্গা হয়েছে এবং তাতে ট্রাম্পের ভূমিকা হামলাকারীদের প্ররোচিত করেছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাকে সরাসরি জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র।
ফরেন অ্যাফেয়ার্স সাময়িকীর নিবন্ধ বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সুষম গণতন্ত্র অপরিহার্য। এ ক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ হলে বৈশ্বিক নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাবে দেশটির দুই প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ও রাশিয়া।
২০২২ সালের ১৫ আগস্ট দ্য নিউ ইয়র্কারের এক নিবন্ধে বলা হয়, রিপাবলিকানদের অভিযোগ, তাদের বিরোধীরা অর্থাৎ ডেমোক্র্যাট দল নির্বাচনে জালিয়াতি করেছেন। এতে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, মার্কিন গণতন্ত্র কতটা অগণতান্ত্রিক হয়ে পড়েছে। একটু কঠোর ভাষায় বললে, আমেরিকান সরকার কখনোই জনগণের পরিচালিত সরকার ছিল না।
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৬৫ শতাংশ আমেরিকান ভোট দিয়েছিলেন।
"