প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
ইউক্রেনের ৬ শহরে একসঙ্গে রাশিয়ার বিমান হামলা
একসঙ্গে ইউক্রেনের ৬টি শহরে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এতে কমপক্ষে দুজন নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও অন্তত ২১ জন। ইউক্রেনজুড়েই বিমান হামলার সতর্কতা সংকেত শোনা গেছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
গভর্নর ওলেকসান্দর প্রকুদিন বলেন, দক্ষিণাঞ্চলীয় খেরসন শহরে বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে রাশিয়ার হামলায় দুজন নিহত এবং আরও পাঁচজন আহত হয়েছে। একটি আবাসিক ভবনে হামলায় ওই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
মেয়র ভিতালি ক্লিৎসচকো জানিয়েছেন, কিয়েভে হামলায় ৯ বছর বয়সী এক শিশুসহ সাতজন আহত হয়েছে। সেখানকার কিছু আবাসিক ও ব্যবসায়িক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।গভর্নর ওলেহ সিনিয়েউবোহ বলেন, খারকিভের স্লোবিদস্কি জেলায় কমপক্ষে ছয় দফা বিমান হামলা চালানো হয়েছে। সেখানকার বেসামরিক অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, আহত দুজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে ইউক্রেনের চেরকাসি শহরে হামলার ঘটনায় কমপক্ষে সাতজন আহত হয়েছে। এছাড়া ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে একজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। অপরদিকে পশ্চিমাঞ্চলীয় লভিভ শহরে একটি বাণিজ্যিক অঞ্চলেও হামলা চালানো হয়েছে। সেখানে বেশ কিছু ভবনে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং আগুন ধরে গেছে। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পরপরই ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছিল যেসব দেশ, তাদের মধ্যে প্রতিবেশী পোল্যান্ড অন্যতম। এই দুঃসময়ে ইউক্রেনকে বহুভাবে সাহায্য করেছে পোলিশরা। ১৫ লাখের বেশি ইউক্রেনীয়কে আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি যুদ্ধে টিকে থাকতে দিয়েছে বিপুল পরিমাণ সামরিক সহায়তা। কিন্তু সেই পোল্যান্ডের সঙ্গে চরম বিবাদে জড়িয়েছে ইউক্রেন। এ সপ্তাহে জাতিসংঘে দাঁড়িয়ে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অভিযোগ করেছেন, কিছু দেশ তাদের সঙ্গে ‘প্রতারণা’ করেছে। জেলেনস্কির এই মন্তব্যে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয় ‘যুদ্ধের প্রথমদিন থেকে ইউক্রেনকে সাহায্য করা’ পোল্যান্ড। এটিকে পোল্যান্ডের ব্যাপারে ‘অযৌক্তিক নিন্দা’ বলে প্রতিবাদ জানায় ওয়ারশ।
পোল্যান্ডের পর এবার আরেক বড় মিত্র স্লোভাকিয়ার সমর্থন হারানোর শঙ্কায় পড়েছে ইউক্রেন। দেশটির রাজনীতিবিদ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো জানিয়েছেন, তিনি ক্ষমতায় আসলে ইউক্রেনকে নতুন করে আর ‘একটি বুলেটও’ দেবেন না। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর স্লোভাকিয়ায় নির্বাচন হবে। আর সেই নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে রবার্ট ফিকোর।
নির্বাচিত হওয়ার পর ফিকো যদি তার কথা রাখেন তাহলে বড় বিপদে পড়ে যাবে ইউক্রেন। কারণ রাশিয়া আগ্রাসন শুরু করার পর স্লোভাকিয়া ইউক্রেনকে অস্ত্র ছাড়াও আরও অনেক সহায়তা দিয়েছে। এছাড়া দেশটি কথা দিয়েছিল, ইউক্রেনকে ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য করতে বড় ভূমিকা রাখবে।
রবার্ট ফিকো ওই সমাবেশে জানিয়েছিলেন, ইউক্রেনকে আলোচনার মাধ্যমেই চলমান সমস্যার সমাধান করতে হবে। কারণ রাশিয়া কখনো সহজেই হাল ছেড়ে দেবে না। তিনি বলেছেন, ‘একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে তাদের যেভাবেই হোক আলোচনায় বসতে হবে। রাশিয়া ক্রিমিয়া ছাড়বে না, যেসব অঞ্চল তারা নিয়ন্ত্রণ করে সেগুলো কখনোই ছাড়বে না।’
অবশ্য ফিকো যে নিশ্চিতভাবে স্লোভাকিয়ার নেতৃত্বে আসবেন এটি নিশ্চিত নয় এবং ক্ষমতায় আসলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেন না; তাকে অন্য দলগুলোর সঙ্গে জোট গড়তে হবে। এছাড়া অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলো বলছে, স্লোভাকিয়ার মতো ছোট দেশ ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতিতে কোনো পরিবর্তন আনতে পারবে না।তবে ৫৯ বছর বয়সী ফিকোর সাম্প্রতিক বক্তব্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের মধ্যে উৎকণ্ঠা তৈরি করেছে। তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করেছেন এবং বলেছেন যখন যুদ্ধ শেষ হবে তখন মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।
"